সোহাগ তার স্ত্রীকে একটি স্মার্ট ফোন উপহার দেবেন। গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন সেট দেখছেন। পছন্দ হলে দামে মিলছে না, আবার বাজেটের মধ্যে থাকতে চাইলে মোবাইল সেট পছন্দ হচ্ছে না।
বুধবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরের শাহআলী মার্কেটে একটি নামী মোবাইল ব্র্যান্ড শপের সামনে কথা হলো সোহাগের সঙ্গে। বাজেটের মধ্যে পছন্দের মোবাইল ফোন কিনতে না পেরে তাকে বেশ অস্থির দেখাচ্ছিল। তিনি শুনেছেন ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে মোবাইল ফোনের দাম আরও বেড়ে যাবে। ফলে অস্থিরতা আরও বেশি তাকে পেয়ে বসে মোবাইল কিনতে না পারায়। ‘কথা বলার টাইম নেই’ বলে তিনি অন্য মোবাইল শপে ঢুকে পড়েন।
মোবাইল ফোন বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো বিক্রি কমে গেছে। বেশির ভাগ ক্রেতা দাম শুনে চলে যান। যাদের খুব প্রয়োজন তারা কিনছেন।
প্রায় একই ধরনের কথা বললেন, বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া শহিদ। তিনি বলেন, মোবাইল ফোনের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে ২০ শতাংশ দাম বেড়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে মোবাইল ফোনের দাম ৩০-৪০ শতাংশ বেড়ে যাবে।
তিনি বলেন, এবারের বাজেটে মোবাইল ফোনের ওপর ৩ স্তরের ভ্যাটের (ব্যবসা পর্যায়ে) ফলে ১৫ শতাংশ (৫+৫+৫) দাম এমনিতেই বেড়েছে। ডলারের দাম বৃদ্ধি, জাহাজ ভাড়া বেড়ে যাওয়া এবং বিশ্বব্যাপী চিপ সংকটের কারণে মোবাইল ফোনের দামে প্রভাব পড়েছে। ডলারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় কিছু দিনের মধ্যে সেটের দামও বেড়ে যাবে। তিনি তার নিজের মোবাইল ব্র্যান্ড নিয়ে বলেন, সিম্ফনির কয়েকটি সেটে এরই মধ্যে ২০ শতাংশের বেশি দাম বেড়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে আরও নতুন সিদ্ধান্ত আসবে বলে তিনি জানান।
জাকারিয়া শহিদ বলেন, আগে এন্ট্রি লেভেলের স্মার্ট ফোন পাওয়া যেত ৫-৬ হাজার টাকার মধ্যে। সেটা (ফোর-জি সমর্থিত) বেড়ে শিগগিরই তা সাড়ে সাত হাজার থেকে ৮ হাজারে গিয়ে ঠেকবে। ফলে আগামী এক মাস আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে কিছু কিছু মোবাইল ফোন ব্র্যান্ড এরইমধ্যে দাম কমিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মটোরোলা মোবাইল ফোন। দারাজে চলছে মটোরোলার সুপার উইক। এখানে মটোরোলার ৫টি মডেলের ফোন ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড়ে বিক্রি হচ্ছে।
৬০ হাজার টাকার কমে ল্যাপটপ মিলবে না
দেশে হার্ডওয়্যার পণ্যের দামও বাড়তে শুরু করেছে। যাদের পুরনো স্টক রয়েছে তারা আগের দামের সঙ্গে ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে ২-৩ শতাংশ দাম বাড়িয়েছে। যারা এই সময়ে পণ্য আমদানি করে বিক্রি করছে তারা এরই মধ্যে ৩৫-৪০ শতাংশ দাম বাড়িয়েছে বলে জানালেন দেশের হার্ডওয়্যার পণ্য ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতি সুব্রত সরকার। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাজারে বাজে অবস্থা বিরাজমান। অবস্থা এমন হয়েছে যে— কয়েকদিনের মধ্যে ৬০ হাজার টাকার নিচে কোনও ল্যাপটপ পাওয়া যাবে না। যা আগে পাওয়া যেত ৪০-৪৫ হাজার টাকায়। তিনি অভিযোগ করেন, ব্যাংকগুলোতে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে ১০০ শতাংশ মার্জিন দিতে হচ্ছে। এর কমে তারা খুলতে দিচ্ছে না। তাহলে আমরা এখন কি করবো? তিনি বলেন, এমনিতেই এবারের বাজেটে ল্যাপটপ আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এদিকে ডলারের লাগামহীন দাম বাড়ার কারণে ল্যাপটপ, প্রিন্টার ও প্রসেসরের দাম বেড়েছে। শিগগিরই তা ৩৫-৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।
প্রযুক্তি পণ্যের বিক্রি কমেছে ৩০ শতাংশ
হার্ডওয়্যার পণ্যের বাজারে বিক্রি কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। মোবাইল ফোনেরও বিক্রি কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। বাজেট ঘোষণা ও ডলারের দাম বৃদ্ধির পরে নতুন পণ্য বাজারে প্রবেশের পরে প্রযুক্তি পণ্যের দাম আরও বাড়বে। তখন বাজারে পণ্য বিক্রির পরিমাণ আরও কমবে বলে মনে করছেন প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবসায়ীরা। আগামী এক মাসের মধ্যে এই চিত্র দেখা যাবে বলে তারা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
জানতে চাইলে দেশের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি পণ্যের প্রতিষ্ঠান স্মার্ট টেকনোলজিসের চ্যানেল সেলস বিভাগের পরিচালক মুজাহিদ আল বেরুনী সুজন বলেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ক্রেতাদের মধ্যে হার্ডওয়্যার পণ্যের দাম বৃদ্ধির আতংক রয়েছে। ফলে গুজবও তৈরি হচ্ছে বিভিন্নমুখী। বাজারে বিক্রি কমে যাওয়ার এটাও একটা বড় কারণ। এরই মধ্যে বাজার হারিয়েছে ৩০ শতাংশ ব্যবসায়। তিনি আরও বলেন, স্টক থাকায় আমরা (স্মার্ট টেকনোলজিস) এখনও আগের দামে পণ্য বিক্রি করছি। কিছু কিছু পণ্যে হয়তো ২-১ শতাংশ বেড়েছে। তিনি মনে করেন, হার্ডওয়্যার পণ্য আমদানিনির্ভর হওয়ায় নতুন কনসাইনমেন্টের পণ্য দেশে ঢুকলে দামের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনও পরিবর্তন দেখা যাবে বলে তিনি মনে করেন।