রানপাহাড় টপকাতে পারলো না পাকিস্তান, অজিদের বড় জয়

দারুণ শুরুর পরও অস্ট্রেলিয়ার করা রানপাহাড় টপকাতে পারলো না পাকিস্তান। তাই ৬২ রানের বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়লো অজিরা। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তানকে বেশ চ্যালেঞ্জিং টার্গেটই দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, তবে সময় যত গড়াচ্ছিল টার্গেটটা আর তত বড় মনে হচ্ছিল না। আস্তেধীরে লক্ষ্যের দিকে এগোচ্ছিল পাকিস্তান। কিন্তু শেষ হাসি হেসেছে অস্ট্রেলিয়াই।

ভারতের বিপক্ষে শোচনীয় হারের পর ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন পাকিস্তানের ৬ ক্রিকেটার। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পরবর্তী ম্যাচে তাদের পাওয়া নিয়ে শঙ্কাও তৈরি হয়েছিল। সেসব ছাপিয়ে ম্যাচের আগেরদিন অনুশীলনে ফেরেন ৫ জন। এরপর মাঠে নামা শাহিন শাহ আফ্রিদিরা পড়ে যান অস্ট্রেলিয়ান ওপেনারদের ‘রোলার কোস্টারে’। যদিও শেষদিকে লাগাম ছিল শাহিন আফ্রিদি ও হারিস রউফের হাতে। তবুও ৩৬৭ রানের বড় পাহাড় গড়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় সেই পাহাড় টপকাতে পারেনি বাবর আজমের দল। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে তারা হেরেছে ৬২ রানে।

বেঙ্গালোরের চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামটি ব্যাটিং সহায়ক এবং বাউন্ডারিও কিছুটা ছোট বলে আগেই জানা গিয়েছিল। সেখানকার পিচকে আজ (শুক্রবার) দারুণ কাজে লাগিয়েছেন দুই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ। দুজনের জোড়া সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়ার দৌড়-টা ছিল চারশ রানের দিকে। সেটি না হলেও ম্যাচ জয়ের মতো বড় পুঁজি পেয়ে যায় প্যাট কামিন্সরা।

অবশ্য ওয়ার্নারদের বড় ইনিংসের পথে পাকিস্তানের ফিল্ডারদেরও অবদান কম ছিল না। মাত্র ১০ রানেই আউট হতে পারতেন এই অজি ওপেনার। কিন্তু শাহিন আফ্রিদির বলে ১০ রানে থাকা ওয়ার্নারের ক্যাচ ছাড়েন উসামা মির। এরপর সেঞ্চুরির পরও তিনি আরেকবার জীবন পেয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ওয়ার্নারের ইনিংসটি বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১৬৩ রানে। সবমিলিয়ে ম্যাচে পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা ৩-৪টি ক্যাচ হাতছাড়া করেছে। যা তালুবন্দী করতে পারলেও ভিন্ন ফলও পেতে পারতেন বাবররা।

রান তাড়ায় নেমে দুই ওপেনার ইমাম-উল-হক ও আব্দুল্লাহ শফিক যেভাবে শুরুটা করেছিলেন, তাতে হয়তো স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল পাকিস্তান। ৬.৩৮ রানরেটে ২১ ওভারের মধ্যে তারা দলকে এনে দেন ১৩৪ রান। এরপর দুজনেই ছুটছিলেন আরও বড় ইনিংসের পথে। তবে ২২তম ওভারে আক্রমণে এসে প্রথম বলেই মার্কাস স্টয়নিস তুলে নেন শফিকের উইকেট। ৬১ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৬৪ রান করে ম্যাক্সওয়েলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।

এরপর ২৪তম ওভারে আবারও আক্রমণে এসে ইমাম-উল-হককেও সাজঘর ফেরান স্টয়নিস। ৭১ বলে ১০ চারের বাউন্ডারিতে তিনি ৭০ রান করে ক্যাচ দেন মিচেল স্টার্ককে। দুই ওপেনারের পর দলের মূল স্তম্ভের ভূমিকা রাখতে পারতেন অধিনায়ক বাবর আজম ও উইকেটরক্ষক ব্যাটার মোহাম্মদ রিজওয়ান। তবে দুজনের জুটি টিকল মাত্র ২১ রান পর্যন্ত। দলীয় ১৩৪ রানে প্রথম উইকেট হারানো পাকিস্তান তৃতীয় ব্যাটারকে হারিয়েছে ১৭৫ রানে। প্যাট কামিন্সের করা বলে পুল করতে গিয়ে শর্ট মিডে থাকা অ্যাডাম জাম্পার হাতে ধরা পড়েছেন বাবর (১৮)। এতে সিংহভাগ অবদান অবশ্য জাম্পারই। দারুণভাবে ঝাঁপিয়ে তিনি ক্যাচটি লুফে নেন।

সেই বিপর্যয় সামলে কিছুট বোঝাপড়া গড়ে তোলে রিজওয়ান-সৌদ শাকিল জুটি। কিন্তু কামিন্সের শর্ট বলে আগ বাড়িয়ে বিপদ টেনে আনেন শাকিল। তুলে মারতে গিয়ে বল তুলে দেন শূন্যে, দৌড়ে ক্যাচটি তালুবন্দী করেন স্টয়নিস। ৫ চারের বাউন্ডারিতে তরুণ ব্যাটার ৩০ রানে (৩১ বল) ফিরে যান। ক্রিজে আসা ইফতিখার এসেই ঝড়ো তান্ডব চালানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তবে তার স্থায়িত্ব ছিল সাময়িক। তার ৩টি ছক্কার মারকে দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছিল অজি ক্রিকেটারদের। কিন্তু ২০ বলে তার ইনিংসটি থেমে যায় ২৬ রানে। অ্যাডাম জাম্পার ঘূর্ণিতে তিনি লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে যান, যদিও শুরুতে আম্পায়ার আউট দেননি। রিভিউ নিয়ে সফল অস্ট্রেলিয়া।

পরের গল্পটা লিখেছেন জাম্পা। রিজওয়ান ও মোহাম্মদ নেওয়াজকেই দুজনকেই ফিরিয়েছেন তিনি। ফিফটির পথে থাকা রিজওয়ানের বিদায়ের পরই পাকিস্তানের হার নিশ্চিত হয়ে যায়। ৪০ বলে ৫ চারের মারে তিনি করেন ৪৬ রান। ব্যাট হাতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন নেওয়াজ এবং শাদাব খানের বদলে একাদশে ফেরা উসামা মির। শেষ পর্যন্ত ২৭ বল হাতে থাকতেই ৩০৫ রানে অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান।

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট নিয়েছেন লেগ-স্পিনার জাম্পা। এছাড়া প্যাট কামিন্স ও স্টয়নিস দুটি করে শিকার করেন।