দাবি পূরণ না হলে ২২ জানুয়ারি থেকে জ্বালানি বিক্রি বন্ধ

জেলা প্রশাসকের সাথে বৈঠকের পরও ২২ জানুয়ারি থেকে জ্বালানি বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্তে অনড় সিলেটের পাম্প মালিকেরা। তবে তার আগে দাবি অনুযায়ী জ্বালানী তেলের চাহিদা পূরণ করা হলে আগামী ২২ জানুয়ারি থেকে পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে বলে জানিয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে জেলা প্রশাসকের সাথে পেট্রোল পাম্প ওনার্স এসোসিয়েশন ও পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ওয়েল কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠক শেষে তারা নিজেদের অবস্থানের জানান।

বৈঠকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মজিবর রহমান পেট্রোল পাম্প ওনার্স এসোসিয়েশন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে জ্বালানি তেলের ঘাটতি পূরনের আশ্বাস দিয়ে পাম্প বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার অনুরোধ জানালে পাম্প মালিক সংগঠনগুলোর নেতারা আগে সমস্যা সমাধানের উপর জোর দেন। এমনকি জ্বালানি তেলের ঘাটতি পূরন না হলে তাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি চলবে বলে উল্লেখ করেন।

এসময় জেলা প্রশাসক বলেন, দৈনিক চাহিদার তুলনায় জ্বালানি তেলের সরবরাহ কিছুটা কম হলেও তা নিশ্চিতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

তিনি আরও জানান, সিলেটের ডিপোতে পর্যাপ্ত জ্বালানি তেল মজুদ না থাকলে নিকটবর্তী ডিপো থেকে ব্যবসায়ীদেরকে সরবরাহ করা হবে। যার পরিবহন ব্যয়ের বিষয়টি আইন অনুযায়ী নির্ধারিত হবে।

বৈঠক শেষে, পেট্রোল পাম্প ওনার্স এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. নাজমুল হক জানান, আগামী ২২ জানুয়ারীর মধ্যে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জ্বালানি তেলের সরবরাহ নিশ্চিত করা না হলে, পূর্বঘোষিত ধর্মঘটের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

এর আগে গত ১৪ জানুয়ারি সিলেটে জ্বালানি সংকটের কারণে আগামী রোববার (২২ জানুয়ারি) থেকে তেল বিক্রি বন্ধের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সিলেট বিভাগীয় কমিটি।

সিলেটের চন্ডিপুলে কুশিয়ারা কনভেশন হলে কমিটির জরুরি সভা শেষে এই ঘোষণা শেষে দেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও সিলেট বিভাগীয় কমিটির নবনির্বাচিত সভাপতি জুবায়ের আহমদ চৌধুরী এবং নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন আহমেদ।

সভায় জানানো হয়, দীর্ঘদিন থেকে সিলেটের ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে বারবার সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠক করেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না। এমতাবস্থায় আন্দোলন ছাড়া কোনো উপায় নেই সিলেটের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের।

সভায় আগামী বুধবার (১৮ জানুয়ারি) থেকে সিলেটের ব্যবসায়ীরা ডিপো থেকে তেল নেয়া বন্ধ ও পরবর্তীতে রোববার (২২ জানুয়ারি) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল ইসলামের উপস্থিতিতে এই অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ঘোষণা দেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

সিলেটের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রাম থেকে রেলের ওয়াগনের মাধ্যমে সিলেটে তেল আসে। নানা কারণে রেলের ওয়াগন চলাচল অনিয়মিত হয়ে পড়া ও কোনো কোনো দিন বন্ধ থাকায় অধিকাংশ পাম্পে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। তাছাড়া সিলেটের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে যে কনডেনসেট পাওয়া যায়, তা আগে সিলেটের বিভিন্ন প্লান্টে জ্বালানি তেলে রূপান্তর করা হতো। সরকারি মালিকানাধীন এ প্লান্টগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এখন চট্টগ্রামের বেসরকারি মালিকানাধীন প্লান্টে কনডেনসেট থেকে জ্বালানি তেলে রূপান্তর করা হয়। এতে এখানকার সংকট আরও তীব্র হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা মনে করেন, ডিপোগুলোর কর্মকর্তারা তৎপর হলে এ সংকট অনেকটাই কমে আসতো।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও সিলেট বিভাগীয় কমিটির সভাপতি জুবায়ের আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘সিলেটে আবারও জ্বালানি তেল সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। তেল সরবরাহে কর্তৃপক্ষ বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। তারা বিভিন্ন অজুহাতে তেল সরবরাহ বন্ধ রেখে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই আমরা আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছি।’