অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক কিংবা ধর্মীয় কারণে সিলেট অঞ্চল সবসময় আলাদা গুরুত্ব বহন করেছে। ৩৬০ আউলিয়ার পুণ্যভূমি হিসেবে পরিচিত সিলেট পৌরসভায় উন্নীত হয় ১৭৭৮ সালে আর ২০০২ সালের ২৮ জুলাই হয় সিটি কর্পোরেশন। এরপর তথ্য-প্রযুক্তি, শিক্ষা, উন্নয়নে এগিয়েছে সিলেট। তবে সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকলে পরিবহনখাত নিয়ে নানামুখী সমস্যায় রয়েছে সিলেট সিটি। গণপরিবহন সংকট, অপ্রশস্ত সড়ক আর অতিরিক্ত প্রাইভেট পরিবহনের কারণে যানজট নগরের নিত্যসঙ্গী। নগরে যানজট নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলেও মিলছে না কোনো সুফল। উলটো এসব পরীক্ষা নিরীক্ষায় ভোগান্তিতে পড়ছেন মানুষ। সিলেট নগরীর যানজট, পরিবহণ সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে পাঁচ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন তৈরি করেছেন আহমদ ইমরান। আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব।
একইভাবে ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সিলেটে নিবন্ধিত প্রাইভেটকারের সংখ্যা ৩৭৪ টি আর মাইক্রোবাসের সংখ্যা ৭১৬ টি। আর ২৫ জানুয়ারি ২০২১ সালে নিবন্ধিত প্রাইভেটকারের সংখ্যা ৭০৮ টি আর মাইক্রোবাসের সংখ্যা ৮৫০ টি। গত এক দশকে সিলেটে প্রাইভেটকার বেড়েছে ৩৩৪ টি আর মাইক্রোবাস বেড়েছে ১৩৪ টি।
বিআরটিএ সিলেটের কর্মকর্তা ও মাইক্রোবাসের শ্রমিকরা বলছেন, সিলেটের বিভিন্ন সড়কে যেসব প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস চলছে এগুলোর বেশিরভাগই নিবন্ধন ঢাকায়। সেজন্য সিলেটে প্রাইভেটকার কিংবা মাইক্রোবাস কতটি চলাচল করছে সেই বিষয়ে সঠিক তথ্য জানা খুব কঠিন।
সিলেট জেলা বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মুইম জানান, তাদের সংঘটনের অধীনে প্রায় ৭ হাজারের মতো কার, মাইক্রোবাস চলাচল করছে।
বিআরটি সিলেট ও শ্রমিকদের তথ্য বিশ্লেষন করলে দেখা যায়, গত এক দশকে সবেেচয়ে বেশি বেড়েছে মোটরসাইকেল। এরপরই সিএনজি অটোরিকশা, কার মাইক্রোবাস। আর এসব সিএনজি, কার মাইক্রোবাসের জন্য নেই কোনে স্ট্যান্ড। এজন্য নগরে যেখানে-সেখানে গাড়ি রাখছেন চালকরা।
এদিকে সিলেটে প্রাইভেটগাড়ি বাড়লেও এর বিপরীতে বাস-মিনিবাস বাড়েনি। বরং দিনদিন নগরে বাসের ব্যবহার কমেছে। ২০০৭ সালের শেষ দিকে সিলেটে ‘টাউন বাস’ চলাচল শুরু করলেও নানা কারণে সেটি এখন আর নেই।
এরপর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সিলেটে চালু হয় নগর এক্সপ্রেস। গাড়ি সংকট, অব্যবস্থাপনা আর প্রয়োজনীয় সড়কগুলোতে চলাচল না করায় এটিও আশার আলো হতে পারছে না। বরং প্রথম দিকে মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও বর্তমানে ঝিমিয়ে পড়েছে ‘নগর এক্সপ্রেস’।
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি কিংবা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি শহরে গণপরিবহণের সংখ্যা বেশি থাকবে। কারণ মানুষের চলাচলের অন্যতমবাহন হচ্ছে গণপরিবহণ। কিন্তু সিলেটে সেই অর্থে তেমন কোনো গণপরিবহণ নেই। এজন্য সিলেট সিটিকে নিয়ে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা করতে হবে। কারণ যদি আমরা সুষ্ঠুু পরিকল্পনা না করি তাহলে পরবর্তীতে আমাদের ভোগান্তি বাড়ছে। এভাবে ব্যক্তিগত গাড়ি বাড়তে থাকলে শহরে কোনোভাবেই যানজট কমবে না। বরং এটাকে পরিকল্পিত যানজট বলা যায়।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল এন্ড ইনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. মো. আজিজুল হক বলেন, একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমরা যদি সিলেট নগরটাকে গড়ে তুলতে চাই তাহলে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। এখানে সরকার, স্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ সবার অংশগ্রহণ থাকতে হবে। কারণ এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী একটি পরিকল্পনা হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সামগ্রিকভাবে আমাদের রোড নেটওয়ার্কের উন্নয়ন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নসহ অন্যান্য কাজগুলো সমন্বিতভাবে করতে হবে।
তবে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলছেন, আমরা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এই বিষয়ে কাজ করছি। ইতোমধ্যে আমরা একটি সেমিনারও করেছি। কিভাবে পুরো পরিবহণ ব্যবস্থা সুন্দর করা যায় সেই বিষয়ে রোডম্যাপ তৈরি হচ্ছে।
আর সিলেট মেট্রোপলিটন রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটির সভাপতি ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ বলেন, সিলেটে গণপরিবহণ প্রয়োজনের তুলনায় কম। তবে হুটকরেই গণপরিবহণ বাড়ানো ঠিক হবে না। এতে বিশৃঙ্খল অবস্থা বাড়তে পারে। সেজন্য কিছুটা দেরিতে হলেও সুষ্ঠু পরিকল্পনা করে গণপরিবহণ সড়কে নামাতে হবে। আমরা বিষয়টি নিয়ে একটি পরিকল্পনা করছি। সবাই মিলেই নগরবাসীর জন্য যা ভালো হবে আমরা তাই করবো।