‘বকশিস’ দিলেই সেবা মিলে শাল্লা সমাজসেবা অফিসে!

নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত শাল্লা উপজেলা সমাজসেবা অফিস। কর্মকর্তাসহ অফিসের সকল স্টাফ মিলে গড়ে তোলা হয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই চক্রের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতা, গরীব অসহায় রোগীদের চিকিৎসা ভাতা দেওয়ার নামে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

অফিসটির বাইরে রয়েছে আরো অসংখ্য দালাল। এই দালালরা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার দোহাই দিয়ে সাধারণ মানুষদের সাথে করে আসছে নানা ধরণের প্রতারণা। তবে এইগুলোকে ঘুষ হিসেবে মনে করে না এই সিন্ডিকেট চক্র। তাদের দাবী এগুলো বকশিস। মানুষ খুশি হয়ে কাজের বিনিময়ে কিছু বকশিস দিয়ে যায়। তবে সাধারণ মানুষদের অভিযোগ টাকা দেওয়ার পরও হয়রানি কমেনি তাদের। বিভিন্ন ভাতার কার্ড করার জন্য বছর-দু’য়েক ঘুরতে হয় তাদের পেছনে পেছনে। টাকা না দিলে ওই অফিসে কোনো কাজ হয়নি বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

শুধু তাই নয় বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতার টাকা না দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী ৩ মাস পরপর প্রত্যেক সুবিধাভোগীকে বিকাশের মাধ্যমে ভাতা পরিশোধ করার কথা উল্লেখ থাকলেও এসব কিছুর তোয়াক্কা করছেন না শাল্লা সমাজসেবা অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের আনন্দপুর গ্রামের কাজল রানী দাস জানান, গত বৈশাখ মাসে তাকে বয়স্ক ভাতার টাকা দেয়া হয়েছিল। এখন প্রায় ১০মাস পেরিয়ে গেলেও ভাতার কোনো টাকা পাননি তিনি। সমাজসেবা অফিসে বারবার যোগাযোগ করার পরও কোনো কাজ হয়নি তাঁর।

তাছাড়াও দুস্থ রোগীদের বিনামূল্যে ঔষধ দেওয়ার কথা থাকলেও এসব দেয়া হয়নি। তবে শাল্লা সমাজসেবা অফিসের দাবী ঔষধের পরিবর্তে প্রত্যেক দুস্থ রোগীকে টাকা দেয়া হয়েছে। কাগজে কলমে সবকিছু ঠিক থাকলেও মাঠ পর্যায়ে রয়েছে ভিন্নতা।

এখানেই শেষ নয়; সেবা সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নিবন্ধন পেতে বকশিস বাণিজ্য অনেকটা ওপেন সিক্রেটে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও ক্যানসার এবং হৃদরোগের মতো জটিল রোগীদের আর্থিক প্যাকেজ সহায়তা কর্মসূচির কথা অনেকেরই জানা নেই। এক্ষেত্রে রোগীপ্রতি ৫০ হাজার টাকার প্যাকেজ নির্ধারিত। কিন্তু এ টাকা পাওয়া অনেকটাই সোনার হরিণের মতো দুর্লভ। কর্মকর্তার চাহিদামত টাকা দিতে পারলেই এই প্যাকেজের অর্ন্তভুক্ত হওয়া যায়।

ভুক্তভোগী উপজেলার উজানগাঁও গ্রামের আবুল হাসেম জানান, তার ছেলে মোয়াইমিল দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত ছিল। ৫০ হাজার টাকার প্যাকেজটি পাওয়ার জন্য প্রায় এক বছর সমাজসেবা অফিসের বারান্দায় ঘুরতে হয়েছে তাকে। পরে সমাজসেবা কর্মকর্তার দেয়া প্রস্তাব সুনামগঞ্জ জেলায় ফাইলগুলো আনা-নেয়া করার জন্য তাকে ৯ হাজার টাকা দিতে হবে। এই প্রস্তাবে রাজি হওয়ায় পেয়ে যান অসুস্থ ছেলের নামে ৫০হাজার টাকা।

শাল্লা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বিশ্বপতি চক্রবর্তীর এমন অসংখ্য অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের রেকর্ড সংরক্ষিত রয়েছে এ প্রতিবেদকের কাছে।

শাল্লা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ভিক্ষুক পুনর্বাসনের জন্য ২লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় সমাজসেবা অধিদপ্তর। এর মধ্যে শাল্লা উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ২৭ জন ভিক্ষুকের মাঝে এসব বিতরণ করেছেন। আর অন্যান্য তথ্য দিতে বড় কর্তার দোহাই দেন অফিসের কর্মচারীরা।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমাজসেবা অফিসের এক কর্মচারী বলেন, ‘অফিসের যাবতীয় কাজ বিশ্বপতি স্যারের মাধ্যমেই হয়। আমাদের কাছে কিছুই দেয়নি। উনি নিজেই সকল কাজ একা একা করেন।’

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বিশ্বপতি চক্রবর্তীর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আর দালালের বিষয়ে আমার কাছে আজও পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আসেনি।’

তিনি আরো বলেন, বয়স্ক ও বিধবা ভাতার নামে কেউ টাকা নিলে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু তালেব জানান, যেকোনো ভাতার নামে টাকা নেওয়ার কোনো বিধান নেই। যদি এ ধরণের কোনো প্রমাণ থাকে অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।