হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ জনগণ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি বছরে তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে মারামারির পাশাপাশি কিশোর গ্যাং, রাজনৈতিক সিন্ডিকেট, জুয়া, মাদক, গরু চুরি, সরকারি গাছসহ বনের গাছ কর্তন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনসহ বাজার পরিস্থিতি অস্থিতিশীল থাকায় অভাব-অনটনকে কেন্দ্র করে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে গুরুতর অপরাধের ঘটনা বাড়ছে।
সামাজিক অপরাধের পাশাপাশি পারিবারিক অপরাধও বাড়ছে। গত তিন মাসে চুনারুঘাট উপজেলায় হত্যাসহ একাধিক আত্মহত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া একাধিক লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আসামপাড়া, সাতছড়ি, রেমা-কালেঙ্গা বর্ডার এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে আমদানি-রপ্তানিসহ ইয়াবা, মদ, ফেনসিডিল, গাঁজা পাচারের অভিযোগ উঠেছে। গণমাধ্যমে গাঁজা বিক্রির ভিডিও ভাইরালও হয়েছে।
পৌরসভায় কিশোর গ্যাংয়ের ঘাতকের ক্ষুরের আঘাতে এক তরুণের অর্ধগলাকাটা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাঘবাড়ি এলাকায় বড় সতীনের হাতে গর্ভবতী ছোট সতীন হত্যাসহ উপজেলার সাটিয়াজুরী ইউনিয়ন জাম্বুরা টিলায় চুনারুঘাট শ্রীমঙ্গল বর্ডার এলাকা থেকে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আহম্মাদাবাদ ইউনিয়নের এক গ্রামে নিজ ঘর থেকে পুত্রসহ মায়ের লাশ ও বাইরে গাছ থেকে বাবার ঝুলন্ত লাশসহ একই পরিবারের ৩ জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে কুপিয়ে জখম, উত্ত্যক্তের ঘটনা, জমি সংক্রান্ত সংঘর্ষ, চুরি, রাহাজানিসহ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন সংক্রান্ত একাধিক ঘটনা ঘটেছে। এতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে দাবি সচেতন মহলের।
এছাড়া হাট-বাজারে নিত্যপণ্য ও ঔষধ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট, নকল পণ্যের ছড়াছড়িসহ অসংখ্য সমস্যা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও টনক নড়েনি প্রশাসনের। সাধারণ জনগণের ক্ষোভ ও সচেতন মহলের দাবি, এখনই অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আগামী দিনে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা দেখা দেবে। অন্যদিকে অপরাধীচক্র আরও সক্রিয় হবে। এজন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে দৃষ্টি দেবে— এটাই তাদের প্রত্যাশা।
এ বিষয় কথা হলে চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল হক বিচ্ছিন্নভাবে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বিট পুলিশিং কর্মসূচির মাধ্যমে গণসচেতনতা ও তাত্ক্ষণিক পুলিশ টিমের মাধ্যমে উপজেলায় নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করাসহ অপরাধ নিরোধক কার্যক্রম চলমান রেখেছেন বলে জানান। এছাড়া ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর আলোকে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ ভৌমিক জানান, পৌরসভায় যানজটসহ অবৈধ মজুতদার ব্যবসায়ী ও বাজার নিয়ন্ত্রণে আগামী বৃহস্পতিবার সভা করে সিদ্ধান্ত মোতাবেক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।