সিলেটে নদী দখলের মহোৎসব, গড়ে উঠছে অবৈধ স্থাপনা

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা দিয়ে বহমান বাসিয়া নদী। প্রায় ৪৪ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে থাকা এ নদী এখন মরা খাল। ইচ্ছামত ফেলা হয় ময়লা। যার যেমন খুশি নদীর দুই পাড় দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে অন্তত পাঁচ শতাধিক স্থাপনা। কিন্তু এদিকে খেয়াল নেই কর্তৃপক্ষের।

বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান বলেন, বার বার বাজেট আসলেও নদীর পাড় উচ্ছেদে নজর নেই কর্তৃপক্ষের। লোটপাট চলছে চারদিকে। আমার নতুন পৌরসভা। কিন্তু আমি এখন উদ্যোগ নেবো। কিন্তু এটার মূল দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডের।

একই অবস্থা সিলেট নগরকে দ্বিখণ্ডিত করা সুরমা নদীর। নদীর উভয় পাড়ে অসংখ্য স্থাপনা গড়ে উঠলেও নেই পদক্ষেপ। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও নদীর অধিকাংশ জায়গাতেই দখলদারদের রাজত্ব।

শুধু এই দুই নদী ছাড়াও সিলেটের প্রায় ১৮টি নদীর পাড় জুড়ে চলছে দখল। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে দখমদারদের সঠিক কোন তালিকা না পাওয়া গেলেও বিভিন্ন সূত্রের তথ্য বলছে ১৮টি নদীর দুই পাড় দখল করে অন্তত লক্ষাধিক স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। আর দূষণতো আছেই। ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে নদীগুলো। সিলেটবাসীকে যার কুফল ভোগ করে হয় সাম্প্রতিক বন্যায়।

সংকির্ণ নদীগুলোর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে পানি উপছে লোকালয়ে ঢুকে টইটুম্বুর অবস্থা হয় সিলেটের। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটে সফরে এসে সুরমা নদী খননের আশ্বাস দেয়ার পর ইতোমধ্যে ১৫ কিলোমিটার খনন কাজের উদ্বোধনও হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার আলমপুর থেকে লামাকাজী দশগ্রাম বাজার পর্যন্ত প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫ কিলোমিটার জায়গায় খনন কাজের মেয়াদ ধরা হয়েছে আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত। কিন্তু খনন কাজের উদ্বোধন হলেও নদীর দখলদারদের উচ্ছেদে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তাই খননের সুফল নিয়েছে প্রশ্ন।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, নদীর গভিরতা তৈরির পাশাপাশি দখলমুক্ত না করতে পারলে এর সুফল মিলবে না। এতে ফের তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিবে।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনেকটা অসহায়ত্বের সুর। পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এ. কে. এম. নিলয় পাশা বলেন, ‘নদীর দখল উচ্ছেদে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা প্রয়োজন। তাছাড়া মৌজা ম্যাপ না থাকলে দখলদারদের তালিকা করা যায় না। আর মৌজা ম্যাপ সংগ্রহ করা কিংবা সার্বে করার ক্ষেত্রে নির্ধারিত বাজেট লাগে। সেটিও আমাদের নেই। তবে আমরা কিছু অংশের আংশিক একটি সার্বে করেছি সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।’

অপরদিকে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান দখল উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘দখলদারদের উচ্ছেদে আমরা অভিযান শুরু করবো।’