১০ মাস পরে ভারত থেকে আসছে চাল

দেশীয় কৃষকরা যেন ধানের ন্যায্যমূল্য পায়- সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে গত বছরের ৩১ আগস্ট থেকে চাল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। এবার বোরো মৌসুমেও চালের বাজার ছিল ঊর্ধ্বগতির। সেকারণে আমদানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে আবারও চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আর সেই অনুমতির আলোকে যশোরের বেনাপোল বন্দর দিয়ে দীর্ঘ ১০ মাসেরও বেশি সময় পরে প্রতিবেশী ভারত থেকে আসছে চাল।

রবিবার (১৭ জুলাই) সকালে প্রতি মেট্রিক টন ৩৪০ ডলার (৩০ হাজার ৬৫০ টাকা) মূল্যের দ্বিতীয় চালানের ৪০৭ টন চাল বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করেছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) প্রথম চালানে ১০৫ টন চাল বেনাপোল বন্দরে এসেছে। যার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হলো মেসার্স বেলাল হোসাইন এবং মেসার্স লিপু এন্টারপ্রাইজ।

আমদানি মূল্যের ওপর ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ককর হিসাবে প্রতি কেজিতে ৯ টাকা ৯০ পয়সা আমদানি শুল্ককর পরিশোধ করতে হচ্ছে। আমদানিকৃত সেদ্ধ (মোটা স্বর্ণ চাল) প্রতি কেজি ৪৭-৪৮ টাকায় দেশীয় বাজারে বিক্রি হবে বলে জানা গেছে।

সাধারণ ক্রেতারা আমদানিকৃত চালের মূল্য বেশি বলে মনে করছেন। মিন্টু মিয়া নামে বাজারে চাল কিনতে আসা এক যুবক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দেশি স্বর্ণা মোটা চাল ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আশা করছিলাম ভারতীয় চাল আমদানি শুরু হলে দাম আরও কমবে। তবে সেটা হচ্ছে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এত দামে চাল কিনতে কষ্ট হয়ে যায়।

এদিকে আমদানিকারকরা বলছেন, আমদানি সহজ আর সরবরাহ বাড়লে বাজার দর আরও কিছুটা কমবে।

বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন জানান, দেশে উৎপাদিত চালের ন্যায্যবাজার মূল্য নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করে গত বছরের ৩১ আগস্ট থেকে ভারতীয় চাল আমদানি বন্ধ করেছিল। বর্তমানে দেশে বিভিন্ন জায়গায় বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতিতে বেড়ে গেছে চালের দাম। এছাড়াও খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কাও বাড়ছিল। এতে সরবরাহ স্বাভাবিক ও বাজারের ঊর্ধ্বগতি রুখতে খাদ্য মন্ত্রণালয় শর্ত সাপেক্ষে গত ৩০ জুন দেশের ৯৫ জন আমদানিকারককে ভারত থেকে ৪ লাখ ৯ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়।

মহসিন মিলন বলেন, আমদানিকৃত চালের মধ্যে ৩ লাখ ৭৯ হাজার মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল ও ৩০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল রয়েছে। ২১ জুলাইয়ের মধ্যে চালের এলসি খোলা সম্পন্ন ও ১১ আগস্টের মধ্যে আমদানিকৃত চাল দেশে বাজারজাত শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী সেঁজুতি এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী বকুল হোসেন জানান, আগে যেসব চাল বেনাপোল বন্দরে এসেছে, বন্দরে ঢোকার আগে ভারতের বনগাঁ কালীতলা পার্কিংয়ে ১৭ দিন সিরিয়ালে আটকা ছিল। এতে করে পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। দ্রুত চালের ট্রাক বন্দরে ঢোকানোর ব্যবস্থা করা গেলে আমদানিমূল্য আরও কম পড়তো। এতে দেশের বাজারে দাম অনেকটা কমেও আসতো।

গত দুই দিনে ১৪টি ট্রাকে ৫১২ টন আমদানিকৃত চাল ভারত থেকে এসেছে জানিয়ে বেনাপোল চেক পোস্টের কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা এনাম হোসেন বলেন, ‘আমদানি করা চাল বন্দর থেকে যাতে দ্রুত খালাস দেওয়া যায়, কাস্টমস সেজন্য সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।’

বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার জানান, ব্যবসায়ীরা যেন বন্দর থেকে চাল দ্রুত ছাড় করাতে পারেন সেই লক্ষ্যে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খালাসের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ভারত সীমান্তে যাতে বেশি দিন ট্রাক আটকে না থাকে সে জন্যও অনুরোধ জানানো হয়েছে।