২ মিনিটের ঝড়ে বিধ্বস্ত শান্তিগঞ্জ

প্রবল কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড শান্তিগঞ্জ উপজেলা। বসতঘর হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়েছেন অজস্র মানুষ। ছবি: নোহান আরেফিন নেওয়াজ।

প্রবল কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রোববার (৩১ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই ঝড়ে উপজেলার অন্তত ১০টি গ্রামের সহস্রাধিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এছাড়াও গাছপালা, যানবাহন, বৈদ্যুতিক খুঁটি, দোকানপাট, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নারী-পুরুষ ও শিশুসহ আহত হয়েছেন অসংখ্য।

প্রবল এই ঝড়কে কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ একটি ফেসবুক পোস্টে টর্নেডো হিসেবে অবিহিত করেছেন।

তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের সহকারি আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন একে বজ্রঝড় কিংবা স্থানীয়ভাবে কালবৈশাখী ঝড় হিসেবে অভিহিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘বজ্রঝড়ে প্রবল ঝড়ো বাতাস, বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি হয়। এতে ব্যাপক ক্ষতি হয়। কিন্তু টর্নেডো একটি বিশেষ বিষয় যার প্রতিটি বৈশিষ্ট্য স্বতন্ত্র। রোববার রাতের ঝড় এই সময়ের স্বাভাবিক বজ্রঝড়।’

বজ্রঝড়ের তাণ্ডবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের চন্দ্রপুর, ইনাতনগর, নবীনগর, কাঁদিপুর, ইসলামপুর, রায়পুর, রসুলপুর, শত্রুমর্দন গ্রাম। বসতঘর হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এসকল গ্রামের অধিকাংশ পরিবার।

আজ সোমবার (১ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই খোলা আকাশের নিচে ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় সংযোগ বন্ধ রয়েছে। এসব এলাকায় প্রচুর পরিমাণ গাছপালা ভেঙে পড়ে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে পড়েছে।

চন্দ্রপুর গ্রামের হেলাল মিয়া জানান, ‘মাত্র ৬ মাস আগে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে ঘর নির্মান করেছি। গতরাতের ঝড়ে আমার পুরো ঘর ধ্বংস করে দিয়েছে। আমার ছোটবোন ও স্ত্রী আহত হয়েছেন। পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি।’

একই অবস্থা রায়পুর গ্রামের সুশান্তি দাসের। স্বামী সন্তান নিয়ে রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। হঠাৎ টর্নেডোর আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে সুশান্তির সুখের সংসার। রাতে কোনোভাবে প্রাণ রক্ষা করতে পেরেছেন তিনি। প্রবল ঝড়ে সব উড়ে যাওয়ায় দিনমজুর স্বামী ও সন্তান নিয়ে খোলা আকাশের অনিশ্চয়তার সময় পার করছেন।

একই গ্রামের বিধবা সফেদা বেগম সবকিছু হারিয়ে চার মেয়ে নিয়ে বিপাকে রয়েছেন। ঝড়ে অসহায় পরিবারটির বসতঘর লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। এই ক্ষতি কিভাবে নিরুপণ করবেন তা জানা নেই সফেদা বেগমের।

টর্নেডোর আঘাতে বড় ক্ষতি হয়েছে হাজি ইকবাল হোসেনের চন্দ্রপুর গ্রামের বসতঘরে। বসতঘর ছাড়াও বাড়ির দেয়াল, বাড়ির গ্যারেজ, গ্যারেজে থাকা সিএনজি চালিত অটোরিকশা, মোটরবাইক, মাইক্রোবাসের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে তাঁর। এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে ব্যাপক সময় লাগবে বলে জানান তিনি।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্থদের পুনবার্সনে সরকারের পক্ষ থেকে যাবতীয় সহযোগীতা করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার জন্য ১০ টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। ক্ষতিগ্রস্তদের পুণর্বাসনে ৩ শত বান্ডিল টিন চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’