সিটি নির্বাচন : অনড় বিএনপি, দোটানায় নেতাকর্মীরা

সিলেটসহ পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ প্রার্থী হলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি রয়েছে দলটির।

এ পরিস্থিতির মধ্যে বিএনপি পদধারী নেতাদের কেউ কেউ এখনও অনড় অবস্থানেই রয়েছেন। আবার অনেকে পড়েছেন দোটানায়। এ অবস্থায় সিটিগুলোর নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিল ও প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত প্রার্থিতা নিয়ে নাটকীয়তা চলার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচন নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন বর্তমান মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। দলের নেতাকর্মীরাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না, আসলে তিনি নির্বাচন করবেন কি না। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচন করবেন– এটা অনেকটা নিশ্চিত হলেও গত দুই-তিন দিন ধরে অনেকটা সুর পাল্টে গেছে অনেকের। শেষ পর্যন্ত আরিফ নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়াতে পারেন বলেও কেউ কেউ মনে করছেন। মেয়র পদে আরিফুল হকের বিষয়টি স্পষ্ট না হলেও বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পদধারীসহ বেশ কিছু নেতাকর্মী কাউন্সিলর পদে মাঠে রয়েছেন।

মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ২০ মে’র আগে কিছু বলতে চাই না। তবে যেহেতু আমি জনগণের ভোটে নির্বাচিত, সেহেতু তাঁদের কথা মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসেইন বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যের ফলে অবশ্যই দল থেকে বহিষ্কার হবেন।

মেয়র আরিফুল হক নির্বাচন করবেন কি না– তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা না দিয়ে তিনি বলেন, আরিফ নিজেই এর ব্যাখ্যা দেবেন। কারণ দল নির্বাচনে যাচ্ছে না– সেটি তিনি ভালোভাবে জানেন।

সিসিকে মেয়র প্রার্থী নিয়ে এখনও ধূম্রজাল থাকলেও ব্যস্ত সময় পার করছেন বিএনপি ঘরানার কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তাঁরা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য মাঠে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। অনেকেই দলের কঠিন সিদ্ধান্তকেও তেমন আমলে নিচ্ছেন না। ৪২টি ওয়ার্ডে কমপক্ষে শতাধিক নেতা-নেত্রী প্রার্থী হওয়ার তালিকায় রয়েছেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে ২ থেকে ৫ জন পর্যন্ত প্রার্থী রয়েছেন বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে রাজশাহী ও খুলনায় দলের কেউ প্রার্থী হচ্ছেন না বলে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু দিন ধরে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে যুক্তি দিলেও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন না বলে জানিয়েছেন বিগত নির্বাচনে বিএনপিদলীয় মেয়র প্রার্থী ও দলের সাবেক খুলনা মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু।

অবশ্য কৌশলে দলীয় সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে পদপদবি নেই, অথচ বিএনপি ঘরানার পরিচিত মুখ মেয়র পদে প্রার্থী হচ্ছেন গাজীপুর ও বরিশাল সিটিতে। গাজীপুরে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সরকার শাহনূর ইসলাম রনি। তিনি কারান্তরীণ বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বিগত নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারেরও ভাতিজা। বরিশাল সিটিতে সাবেক ছাত্রদল নেতা কামরুল আহসান রূপন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি প্রয়াত বিএনপি নেতা ও সাবেক মেয়র আহসান হাবীব কামালের ছেলে।

মেয়র প্রার্থী ছাড়াও এসব সিটিতে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা রয়েছেন সিদ্ধান্তহীনতায়। দলের সমর্থনের বাইরে গিয়ে কতটুকু সফল হবেন, তার হিসাব কষছেন অনেকে। তবে এলাকার আধিপত্য ধরে রাখতে রাজনৈতিক পদপদবির ঝুঁকি নিয়েই নির্বাচন করার প্রস্তুতি শুরু করেছেন অনেকে।

এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে চলমান আন্দোলনকে বেগবান করাই এখন তাঁদের প্রধান লক্ষ্য। এ পরিস্থিতিতে কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে পাঁচ সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দলীয় সূত্র জানায়, সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে বিএনপির ভেতর দুটি মত রয়েছে। দলের তৃণমূল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে। আবার নির্বাচন বর্জনের পক্ষে দলের কেন্দ্রের একাংশ। এ পরিস্থিতিতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় যুক্তিতর্কের মাধ্যমে বর্জন এবং দলীয় কেউ প্রার্থী হলে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। বিশেষ করে মেয়র পদ দলীয় প্রতীকে হওয়ায় পদধারী কোনো নেতা প্রার্থী হলে চলমান আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন দলের হাইকমান্ড।