সেতু নির্মাণের প্রায় ১০ বছর পেরিয়ে গেছে। অথচ এখন পর্যন্ত নির্মাণ হয়নি একপ্রান্তের সংযোগ সড়ক। ফলে ১০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত গোলাপগঞ্জের দ্বিতীয় কুড়া সেতু জনগণের কোনো কাজেই আসছে না।
স্থানীয়রা জানান, সংযোগ সড়ক নির্মাণ হলে গোলাপগঞ্জের অন্তত ১০/১২টি এলাকার পাশাপাশি বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বড়লেখা উপজেলার শতাধিক গ্রাম যোগাযোগের আওতায় আসবে। তবে, নতুন করে উচ্চপর্যায়ে প্রস্তাবনা পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছে সড়ক ও জনপথ।
জানা গেছে, গোলাপগঞ্জের কুড়া নদীর ওপর ১১১ দশমিক ১২ মিটার দৈর্ঘ্যের ওই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৯৯ সালে। উদ্বোধন করেন তৎকালীন সাংসদ নুরুল ইসলান নাহিদ। এরপর ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসলে আওয়ামী লীগ আমলে শুরু হওয়া সেতুটির কাজ বন্ধ করে দেয়। এভাবে রাজনৈতিক পালাবদল আর নানা টালবাহানায় যুগ পেরিয়ে ২০১২ সালে শেষ হয় সেতুটির নির্মাণকাজ। তখন ব্যয় দাঁড়ায় ১০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সেতুর এক প্রান্ত ঢাকাদক্ষিণ-ভাদেশ্বর সড়কে মিলিত হলেও অপরপ্রান্তে নেই সংযোগ সড়ক। একমাত্র সংযোগ সড়কের অভাবে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে কোন কাজেই আসছে না কুড়া নদীর উপর নির্মিত সেতুটি। যে কারণে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত কিংবা চিকিৎসাসেবায়, দুর্ভোগ ওই এলাকাবাসীর নিত্যসঙ্গী।
ভুক্তভোগীরা জানান, সেতুর সংযোগ সড়ক না থাকায় যাতায়াতে তাদের বড় ধরণের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সময়মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারে না শিক্ষার্থীরা। গ্রামের নাম শুনলেই কোন চিকিৎসক আসতে চায় না। আর রোগী নিয়ে যাতায়াত সবচেয়ে কষ্টসাধ্য। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের নিয়ে পড়তে হয় বড় বিপাকে। সময়মত চিকিৎসকের কাছে পৌঁছাতে না পারায় অনেক সময় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।
এদিকে সেতু থেকে কয়েকগজ এগোলেই যাতায়াতের একমাত্র উপায় বাঁশের সাঁকো। এরপর ক্ষেতের আল কিংবা সরু রাস্তা ধরে যেতে হয় গ্রামের মানুষদের।
স্থানীয়রা জানান, সেতু থেকে কোনাগাঁও রাকুয়ারবাজার খেয়াঘাট পর্যন্ত মাত্র দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়ক হলেই আলমপুর, ছিলিমপুর, কোনাগাও, তারাপুর সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম আসবে যোগাযোগের আওতায়। সংযোগ স্থাপন হবে বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বড়লেখা পর্যন্ত। উন্নত হতে ওই এলাকার জীবনমান।
অপরদিকে ২০১২ সালে কুড়া সেতু উদ্বোধন হলেও বাদেপাশা ইউনিয়ন প্রান্তের সংযোগ সড়কের কাজ আর এগোয়নি। যে নকশা অনুযায়ী সড়কের কাজ এগিয়ে নেয়ার কথা ছিল তা আর আলোর মুখ দেখছে না। এমন বাস্তবতায় দীর্ঘ ১০ বছরে ফাইলবন্দী নকশা আর সংযোগ সড়কের জন্য নতুন করে উচ্চপর্যায়ে প্রস্তাবনা পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
সড়ক ও জনপথ, সিলেটের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘যেহেতু ব্রিজটা নির্মাণ হয়ে গেছে, এখন কতোটুকু অধিগ্রহণ লাগবে, কোন প্রকল্পের আওতায় বা কিভাবে করা যায় এ বিষয়ে উচ্চপর্যায়ে প্রস্তাব আকারে পাঠাবো।’
এদিকে দীর্ঘদিন থেকে জনপ্রতিনিধি এবং বিভিন্ন দপ্তরে ধর্না দিয়েও কাজ না হওয়ায় আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ ব্যপারে স্থানীয় সাংসদ নুরুল ইসলাম নাহিদের সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি কুড়া ব্রিজের সংযোগ সড়ক দ্রুত করে দেবেন বলে জানান।