দুই সপ্তাহ আগে সম্রাটকে ছুরিকাঘাত করেছিলেন কামাল

খুন হওয়ার দুই সপ্তাহ আগে সম্রাট নামের স্থানীয় এক বখাটেকে ছুরিকাঘাত করেছিলেন সিলেটের বিএনপি নেতা আ.ফ.ম কামাল। সেই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ এসেছে সিলেট ভয়েসের হাতে।

ওই সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, আম্বরখানায় মান্নান মার্কেটের ভেতরে সম্রাটকে ধমকে দিচ্ছেন আ.ফ.ম কামাল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। পরে সম্রাটকে দাবড়ে মার্কেটের ভেতরে নিয়ে যায় তারা। একপর্যায়ে পকেট থেকে বের করা ছুরি দিয়ে সম্রাটকে স্ট্যাপিং করেন কামাল।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান গেল ১৯ অক্টোবর বিকাল ৩টার কিছু সময় পরে আ.ফ.ম কামাল আরও কয়েকজন নিয়ে মান্নান মার্কেটের ওখানে এসে সম্রাটকে মারধর করেন। এসময় তারা সম্রাটকে মার্কেটের ভেতরে নিয়ে যান এবং ছুরি দিয়ে আঘাত করেন। আঘাত ছিল শরীরের পেছন দিকে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় সম্রাটকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে কি কারণে এই হামলা তা তিনি জানেন না বলে জানান।

ওই প্রত্যক্ষদর্শী জানান, কামাল এবং সম্রাট দুজনকেই তিনি চেনেন। দু’জনেরই এই মার্কেটে আসা-যাওয়া ছিল।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মান্নান মার্কেটের নীচতলায় লাহিন এয়ার ইন্টারন্যাশনালে সৌদি আরবের ভিসা প্রসেসিং করেছিলেন আহাদ নামে একজন। আর ভিসার জন্য ওই এজেন্সিকে সাড়ে ৩ লাখ টাকাও দেন তিনি। কিন্তু পছন্দের ভিসা না পেয়ে আহাদ টাকা ফেরত চান। এতে ব্যর্থ হলে টাকা উদ্ধারের দায়িত্ব নেন বখাটে সম্রাট। কয়েকদিন হুমকিধামকি দিয়েও কাজ না হওয়ায় সম্রাট ওই এজেন্সির ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন।

এদিকে এজেন্সির মালিক লাহিন ও জৈন উদ্দিন কামালের নিকটাত্মীয় হওয়ায় তাদের হয়ে সম্রাটের সাথে সংঘাতে জড়ান আ ফ ম কামাল। এমনকি ঘটনা গড়ায় স্টেপিং পর্যন্ত। এছাড়া ওই স্টেপিংয়ের পর কোতয়ালী থানায় দায়েরকৃত মামলার ৪নম্বর আসামি ছিলেন আ.ফ.ম কামাল।

পূর্বের ওই হামলা ও স্টেপিংয়ের কথা স্বীকার করেছে পুলিশও। সিলেট মহানগর পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ জানান, গত ১৯ অক্টোবর একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনার জেরে সম্রাটকে ছুরিকাঘাত ও মারধর করেন কামাল। এমনকি সেই ছুরিকাঘাতের ঘটনার সূত্র ধরেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হন আ.ফ.ম কামাল; এমন ধারণা করছে পুলিশ।

তবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কামাল হত্যাকাণ্ডের কারণ এবং কারা ঘটনা ঘটিয়েছে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এদিকে, আ.ফ.ম কামাল হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৩ আসামি এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে। তিন আসামিকেই সাতদিনের রিমান্ডে চেয়েছে পুলিশ। রবিবার ওই রিমান্ড আবেদনের শুনানি হবে বলে জানা গেছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, সিলেটের বিমানবন্দর থানার বাদামবাগিচা আবাসিক এলাকার মাসুকের ছেলে মিশু (২৬), গোয়াইপাড়ার মৃত নুর মিয়ার ছেলে মনা (২৫) ও বড়বাজার গোয়াইপাড়া এলাকার মৃত নুর মিয়ার ছেলে কুটি মিয়া (২৪)। এদের মধ্যে মিশু মামলার এজাহারনামীয় ৪, মনা ৬ ও কুটি ৫ নং আসামি।

তবে মামলার প্রধান আসামী আজিজুর রহমান সম্রাটের নাগাল এখনো পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সম্রাটসহ অন্যদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মোহাম্মদ মাঈনুল ইসলাম।

এর আগে গত রোববার রাত ৮টার দিকে সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক আ ফ ম কামাল সিলেট বিমানবন্দর এলাকা থেকে আম্বরখানা বড়বাজার হয়ে গোয়াইটুলার দিকে যাচ্ছিলেন। তার গাড়িকে অনুসরণ করছিল দুটি মোটরসাইকেল। তাতে আরোহী ছিলেন তিনজন। পরে আরেকটি মোটরসাইকেলে থাকা দুই ব্যক্তি বড়বাজার ১১৮নং বাসার সামনে কামালের গাড়ির গতিরোধ করে। পরে তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে খুনিরা পালিয়ে যায়।

স্থানীয়রা কামালকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে নিহতের বড় ভাই ময়নুল হক বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ছাত্রলীগ কর্মী আজিজুর রহমান সম্রাটকে প্রধানকে ১০ জনের নামোল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত আসামি আছেন আরও পাঁচ-ছয়জন।

কামাল হত্যাকান্ডে সিলেটজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। খুনীদের ধরতে চিরুনি অভিযান শুরু করে র‍্যাব-পুলিশ। পরবর্তীতে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে কুটি মিয়াকে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ এবং সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ থানার নোয়াখালি বাজার এলাকার নুরপুর থেকে মিশু ও মনাকে র‍্যাব গ্রেপ্তার করে।