সব প্রস্তুতি সম্পন্ন, রাত পোহালেই ভোট

রবিবার সকাল থেকে শুরু হচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের কর্মযজ্ঞ। সেই লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই সারাদেশের মতো সিলেটের ৬ টি আসনে সব রকমের প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। ব্যালট ছাড়া বাকি সবধরণের নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছে গেছে ভোটকেন্দ্রগুলোতে।

শনিবার সকাল দশটা থেকে সিলেট জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ ও সদর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে এসব সরঞ্জামাদি পাঠানো শুরু হয়। এসময় কেন্দ্রগুলোর প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসাররা ব্যালট পেপার ছাড়া ভোটগ্রহণের বাকি উপকরণ বুঝে নেন। সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে সকাল ৬ টার আগে ব্যালট পেপার পৌঁছানোর কথা রয়েছে। তবে দুর্গম কেন্দ্রগুলোতে ইতিমধ্যেই ব্যালটসহ সব সরঞ্জাম পৌঁছে গেছে।

সিলেটের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, সিলেটের ৬টি আসনে মোট ১ হাজার ১৩টি কেন্দ্রের মধ্যে জেলায় ৪৪৭টি ও মহানগরে ২০৬ টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪টি আসনের ৭৫টি কেন্দ্রকে দুর্গম এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সিলেটের ৬ টি নির্বাচনী আসনে মোট ৬ হাজার ৬টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহন অনুষ্ঠিত হবে।

সিলেটের ৬ টি আসনে মোট ৩৪ জন প্রার্থী ভোট যুদ্ধে অবর্তীর্ণ হচ্ছেন। তবে একটি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সংবাদ সম্মেলন করে ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোয় মূল লড়াইয়ে আছেন ৩৩ জন।

সিলেটের ছয়টি আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৭ লাখ ১৫ হাজার ৩৩১ জন। যার মধ্যে ১৩ লাখ ৯২ হাজার ৩৯৫ জন পুরুষ ভোটার, আর মহিলা ভোটার রয়েছেন ১৩ লাখ ২২ হাজার ৯২৬ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১০ জন।

এবারের বিরোধীদলবিহীন নির্বাচনেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বেশ কঠোর অবস্থানে আছে নির্বাচন কমিশন। ভোটকে নির্বিঘ্ন করতে সিলেটের ৬টি আসনে বিপুল পরিমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।

এরমধ্যে জেলাজুড়ে ২৮ প্লাটুন সেনাবাহিনীর পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে ২৮ প্লাটুন বিজিবি। নির্বাচনের ৪৮ ঘন্টা আগে থেকে সব ধরণের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ রয়েছে।

নির্বাচনী মাঠে আইনশৃঙ্খলা তদারকিতে দায়িত্ব পালন করবেন ৪৫ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও ১৭ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট।

এছাড়াও সিলেটে ভোটের মাঠে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে মোট ৪ হাজার ২১৯ জন পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। এরমধ্যে জেলা পুলিশের সদস্য ২ হাজার ১৬৯ জন। আর সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ২০৫০ জন।

জেলা পুলিশের ৯৬ টি মোবাইল টিম কাজ করবে। প্রতি টিমে থাকবে ৫ জন করে পুলিশ সদস্য। থাকবে ১১টি স্ট্রাইকিং টিম। প্রতি উপজেলায় থাকবে ১১টি পুলিশ কন্ট্রোল রুম। মাঠে থাকবে ডিবির ৪০টি টিম। ১১টি থানায় থাকবে সাদা পোশাকে পুলিশ। জেলা পর্যায়ে প্রতি সাধারণ কেন্দ্রে ২ জন ও গুরুত্বপুর্ণ কেন্দ্রে ৩ জন করে অস্ত্রধারী পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে।

আর সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন মহানগরীতে প্রতি সাধারণ কেন্দ্রে ৩ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ৪ জন করে অস্ত্রধারী পুলিশ নির্বাচনী দায়িত্বে থাকবে। এছাড়া প্রতি ৫ কেন্দ্রে থাকবে একটি করে মোবাইল টিম এবং প্রতি থানায় ৩টি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স কাজ করবে।

ভোটকেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব পালন করবেন আনসার সদস্যরা। মোট ১২ হাজার ২২৮৬ জন আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে সিলেটের ৬ টি আসনে। যার মধ্যে নারী সদস্য ৪ হাজার ৫২ জন। আর অস্ত্রধারী আনসার সদস্য থাকবেন ২০২৬ জন। প্রতি কেন্দ্রে ১২ জন পিসি, এপিসি, আনসার ও ভিডিপি সদস্য থাকবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে আরও ১৩০ জন।

এছাড়া সার্বিক নিরাপত্তায় টহলে থাকবে ১০৮ জন র‌্যাব সদস্য। যার মধ্যে র‌্যাবের দুটি বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের ১২ সদস্য অন্তর্ভূক্ত।

তবে সব আয়োজন সম্পন্ন হলেও রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও সমমনা জোটগুলোর ভোট বর্জনের আন্দোলনে ভোটার উপস্থিতি কেমন হবে তা নিয়ে রয়েছে মতভেদ। নির্বাচন কমিশনসহ নির্বাচনে অংশ নেয়া দল ও প্রার্থীদের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ ভোটারদের কেন্দ্রে নেয়া।