শাল্লায় মেয়াদ শেষ হলেও শেষ হয়নি বাঁধের কাজ!

সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলায় হাওরের ফসলরক্ষা ১৩১ টি প্রকল্পের মধ্যে বেশিরভাগ বাঁধে মাটি ভরাটের কাজ শেষ করা হলেও অধিকাংশ ফসলরক্ষা বাঁধে এখনও লাগানো হয়নি দূর্বাঘাস। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ক্লোজারে লাগানো হয়নি জিও ব্যাগ ও কার্পেট। ফলে বৃষ্টিতে ফসল রক্ষা বাঁধ ধসে যাবার সম্ভাবনা আছে এখনও। তবে সংশ্লিষ্টদের মতে হাওরে দূর্বাঘাসের সংকট রয়েছে।

হাওর রক্ষা বাঁধের নীতিমালা ও পাউবো’র ঘোষণা অনুযায়ী ২৮ ফ্রেব্রুয়ারির মধ্যে উপজেলার সব হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের সবধরনের কাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে এখনও তা সম্ভব না হওয়ায় কাজের সময়সীমা আরো ১০ দিন বাড়ানোর জন্য জেলা কমিটিতে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, রোদ ও অতি বৃষ্টির আগে বাঁধে ঘাস লাগানো না হলে সেই ঘাস রোদের তাপে মরে যাবে। কিন্তু উপজেলার ছয়টি হাওরের ১৩১ টি পিআইসির মধ্যে অধিকাংশ বাঁধেই দূর্বাঘাস লাগানো হয়নি। ভরাম, ভান্ডাবিল, ছায়া সহ বেশ কয়েকটি হাওরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে ঘাস না লাগানোর পাশাপাশি ড্রেসিং, জিও ব্যাগ ও কার্পেট লাগানো হয়নি অনেক বাঁধে। এতে স্থানীয় কৃষকেরা ফসলরক্ষা নিয়ে অনেকটাই শঙ্কিত। তারা বলছেন, বৃষ্টির আগে দূর্বাঘাস সহ আনুষঙ্গিক কাজগুলো দ্রুত শেষ করা না হলে বাঁধ ধসে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। অধিকাংশ বাঁধে মাটি ফেলার কাজ শেষ হলেও যেগুলোতে মাটি পড়েছে সেগুলোতে লাগানো হয়নি দূর্বাঘাস।

এখনো পুরোপুরি মাটি ফেলার কাজ শেষ করা হয়নি কয়েকটি ক্লোজারসহ বেশ কয়েকটি বাঁধে। তাছাড়াও বাঁধের গোড়া ও নদীর পাড় কেটে বেশ কয়েকটি প্রকল্পকে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় ফেলা হচ্ছে। বাঁধের গোড়া থেকে মাটি তোলা ও নদীর পাড় কাটা বাঁধগুলো হুমকির মুখে রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।

এছাড়াও বাঁধ টেকসই করার জন্য সব বাঁধে দূর্বাঘাস লাগানোর কথা থাকলেও হাতেগোনা কয়েকটি বাঁধ ছাড়া অধিকাংশ বাঁধে দূর্বাঘাস লাগানোর দায়সারা কাজ চলছে। বাকিগুলোতে কবে লাগানো হবে ঘাস- তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই বাঁধ টেকসই হওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হাওরপাড়ের কৃষকরা। পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণের প্রথম আঘাত বাঁধের ক্ষতি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

তবে অনেক পিআইসি সদস্যের জোড়ালো স্পষ্ট বক্তব্য হাওরে দূর্বাঘাসের প্রচুর সংকট থাকায় বাঁধে দূর্বাঘাস লাগাতে বিলম্ব করা হচ্ছে। দূর্বাঘাসের সংকট নিয়ে হাওরে ঘুরে বাস্তবে এর কিছু প্রমাণও পাওয়া গেছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে অনেকে ৪-৫ কি:মি দূরে থেকে দূর্বাঘাস আনতে হচ্ছে। কেউ কেউ আবার টাকা দিয়ে কিনেও বাঁধে দূর্বাঘাস লাগাতে হচ্ছে।

ভরাম হাওরের স্থানীয় কৃষক সত্যব্রত সরকার দ্বিজেন বলেন বাঁধে দূর্বাঘাসের যেমন উপকারীতা বা প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, হাওরে সেরকম দূর্বাঘাসের প্রচুর সংকটও রয়েছে। তিনি বলেন দূরদূরান্ত থেকে কোনভাবে দূর্বা এনে আমি আমার বাঁধে লাগানোর চেষ্টা করবো।

২২নং প্রকল্পের সদস্য সচিব সালমান আহমেদ বলেন, আমার বাঁধে সবধরনের কাজ ২৫ তারিখের আগেই শেষ করা হয়েছে। তিনি বলেন আমার বাবার পতিত কিছু জমিতে দূর্বাঘাস চাষ করেছিলাম সেজন্য আমার বাঁধে দূর্বাঘাস লাগাতে পেরেছি। তিনিও হাওরে দূর্বাঘাসের সংকটের কথা উল্লেখ করে বলেন অনাবাদি পতিত জমিতে দূর্বাঘাসের চাষ করা ছাড়া ভবিষ্যতে দূর্বাঘাস পাওয়া খুব মুশকিল হয়ে পরবে।

পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ রিপন আলী বলেন বাঁধে দূর্বাঘাস লাগানোর কাজ চলমান রয়েছে। আবহাওয়া ভাল রয়েছে, সব বাঁধেই দূর্বাঘাস লাগাতে হবে। এবং পরবর্তীতে বৃষ্টি হলে ঘাস ও বাঁধের জন্য ভাল।