শান্তিগঞ্জে ইজারা নীতিমালা ভঙ্গ করে নির্বিচারে মৎস্য নিধন

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে ইজারা নীতিমালা না মেনে বিল সেঁচে মাছ আহরণ করছে একটি মহল। জলমহাল নীতিমালায় বেঁধে দেওয়া সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকলেও সেসব নীতিমালার তোয়াক্কা না করে উপজেলার পাখিমারা হাওরে বিল-নদী-নালা শুকিয়ে নির্বিচারে মৎস্য আহরণের অভিযোগ উঠেছে বীরগাঁও খালপাড় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে।

উপজেলার পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের পাখিমারা ও রামগুটা জলকরপুঞ্জ জলমহাল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৬ বছরের জন্য ইজারা নিলেও নীতিমালা মানছেন না ইজারাদাররা। নিয়ম অনুযায়ী ৩ বছরে একবার জলমহালে ৫ ফুট পানি রেখে জাল দিয়ে মাছ আহরণের কথা থাকলেও ইজারার প্রথম বছরেই ইজারা নীতিমালা ও মৎস্য সংরক্ষণ আইন অমান্য করে স্যালো মেশিন দিয়ে নির্বিচারে মৎস্য নিধন করছে ইজারাদার সমিতি সংশ্লিষ্টরা। এতে মৎস্য প্রজনন ব্যাহত হয়ে দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হওয়ার পাশাপাশি হাওরের জীববৈচিত্র বিনষ্ট হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

অপরদিকে সেচের কারণে হাওরে কিছুটা পানির সংকট দেখা দিয়েছে। জমিতে পানি সেচ সঙ্কটের কারণে চলতি বোরো ধানের আবাদকৃত জমি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পাখিমারা ও রামগুটা জলকরপুঞ্জ জলমহালে ডিজেল চালিত পাম্প দিয়ে জলমহাল শুকানো হচ্ছে। কয়েকটি ডোবায় ইতোমধ্যে মাছ আহরণ করে অন্য জায়গার পানি দিয়ে ডোবা ভরে রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে এই জলমহালের অধীন লাউয়া নদী তলদেশ শুকিয়ে মাছ ধরেছেন সংশ্লিষ্টরা। জলমহালের অর্ন্তগত বিল-ডোবা শুকিয়ে মাছ ধরার হালচিত্রও দেখা গেছে।

জানা যায়, ১০৭ একর আয়তনের এই জলমহালটি ১৪৩০-১৪৩৫ বাংলা পর্যন্ত ৬ বছরের জন্য লিজ নেয় বীরগাঁও খালপাড় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। কাগজে কলমে জলমহালের মালিক সংশ্লিষ্ট সমিতি হলেও বাস্তবে স্থানীয় প্রভাবশালী সাবেক ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান ও তার ছেলে ছাদিকুর রহমান বাছন জলমহালটি ভোগদখল করছেন বলে জানান স্থানীয়রা।

বীরগাঁও গ্রামের কৃষক এনামুল হক বলেন, জলমহালের ইজারাদারের কারণে এলাকায় কৃষক ও জেলে সম্প্রদায় বিপাকে আছেন। তারা আইন ভঙ্গ করে বিল শুকিয়ে মাছ ধরছে। আমরা জমিতে পানি পাচ্ছি না। তাছাড়া এলাকায় জেলে সম্প্রদায় মৎস্য আহরণ করতে পারছে না। সমিতির লোকরা গোটা হাওর শাসন-শোষন করছে।

বাবু নামে একজন বলেন, জলমাহল সমিতির লোকরা বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। কোনো প্রতিবাদ করলে তারা মিথ্যা মামলা দিচ্ছেন সাধারণ মানুষকে। যেভাবে বিল শুকিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে আগামীতে অনেক মাছের প্রজন্ম পাওয়াই যাবে না।

এদিকে, উপজেলার পাখিমারা ও রামগুটা জলকরপুঞ্জ জলমহাল শুকিয়ে মাছ ধরা হাওরে পানি সংকটের ব্যাপারে জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি অভিযোগ দিয়েছেন ওয়াসিম রায়মন নামের এক স্থানীয় কৃষক। মাছের প্রজনন রক্ষায় অবৈধ পাম্প জব্দের আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

সাবেক ইউপি সদস্য মিজানুর রহমানের ছেলে সাদিকুর রহমান বাছন বলেন, বিল সংক্রান্ত যা যা অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। উপরন্তু বিলের আশপাশের যে সকল জমি চাষ করা হচ্ছে তা আমার বিলের পানি দিয়ে। কৃষকরা আমার ডোবা থেকে পানি নিয়ে জমি চাষ করছেন৷ ১০৭ একর ভূমিই খাস এবং বিলায়িত। কিছু সংখ্যক কৃষক তার দখলীয় জমিতে মাটি কেটে পুকুর করে মাছ ধরতে চায়। অথচ সেই জমিও পাখিমারা বিলের আওতাধীন। বছরে ২৪/২৫ লক্ষ টাকা সরকারকে দিচ্ছি। কৃষকরা যদি মাছ ধরে নিয়ে যান তাহলে আমাদের ক্ষতি হবে। মাছ ধরতে দিচ্ছি না বলেই আমাকে হয়রানি করতে একশ্রেণির মুনাফালোভী মানুষ আমাকে হয়রানি করছেন।

এব্যাপারে কথা হয় বীরগাঁও খালপাড় মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ আহমদের সাথে। বিল শুকিয়ে মাছ ধরার ব্যপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। তবে বিল অনেক টাকায় লিজ আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাবেক ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, অনেক টাকা দিয়ে বিল আনা হয়েছে। বিল কিভাবে মারবো আমরা জানি। কিন্তু কিছু মানুষ সাংবাদিকদের কাছে অহেতুক ভুল তথ্য দিচ্ছে। এই হাওর পুরোটাই খাস ভূমি। আমি বিল লিজ এনেছি। আমি যদি ধান চাষ করতে না দেই কেউ কিছু করতে পারবে না।

এব্যাপারে শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুকান্ত সাহা বলেন, এবিষয়ে কৃষকরা ডিসি অফিসে অভিযোগ করেছেন। এই অভিযোগের কপি আমাদের কাছেও আছে। ইজারাদারকে দু’দিন মাছ ধরতে নিষেধ করেছি। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) আমাদের লোক যাবে। তহসিলদার এবং সার্ভেয়ার যাবে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।