শহিদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে গেজেটভুক্ত হচ্ছেন আরও ১১৮ জন

মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদ বুদ্ধিজীবীদের চতুর্থ পর্বের তালিকায় নতুন করে ১১৮ জন শহিদ বুদ্ধিজীবীর নাম সরকারের গেজেটভুক্ত হয়েছে। তাদের নিয়ে চার পর্ব মিলিয়ে ৫৬০ জন শহিদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।

রবিবার (২৪ মার্চ) দুপুরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী।

আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, এর আগে তিনটি পর্বে শহিদ বুদ্ধিজীবীরা যারা স্বীকৃতি পেয়েছিলেন, তাদের সবাই বিশিষ্টজন, সমাজের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব৷ এরপরের ধাপে সমাজের নানা ধাপে যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, তাদের নাম ধাপে ধাপে সরকারি তালিকাভুক্ত হবে।

তিনি বলেন, দেশের মোট ৬৪টি জেলার মধ্যে ৬১টি জেলায় বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের তথ্য পাওয়া গেছে৷ এবারের গেজেটে প্রকাশিত শহিদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে বেশির ভাগ শিক্ষক। তারা গ্রামাঞ্চলের অধিবাসী। এর মাধ্যমে একটা বিষয় সুস্পষ্ট হয়, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ গণমানুষের জনযুদ্ধ ছিল। এটি আমাদের গবেষণায় একটি নতুন ধারা যোগ করবে।

তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত ও ইতালীয় অধিবাসীদের শহিদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে হত্যা করা হয়েছে৷ কাজেই এ হত্যাকাণ্ড একটি আন্তর্জাতিক অপরাধের প্রকৃষ্ট মাত্রা বহন করে।

তিনি জানান, প্রজন্ম-৭১, রক্তঋণ, ১৯৭১ : গণহত্যা নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর থেকে নাম সংগ্রহ করেছে কমিটি৷ এরপর কমিটি যাচাই-বাছাই করে চতুর্থ পর্বের তালিকা চূড়ান্ত করেছে।

চতুর্থ পর্বে শহিদ বুদ্ধিজীবী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুসূদন দে, মধুদাকে।

২০২১ সালে প্রণীত শহিদ বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞায়, মধুদাকে সমাজসেবী হিসেবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, মোট ৫৬০ জন শহিদ বুদ্ধিজীবীর মধ্যে সাহিত্যিক ১৮ জন, দার্শনিক একজন, বিজ্ঞানী তিনজন, চিত্রশিল্পী একজন, শিক্ষক ১৯৮ জন, গবেষক একজন, সাংবাদিক ১৮ জন, আইনজীবী ৫১ জন, চিকিৎসক ১১৩ জন, প্রকৌশলী ৪০ জন, সরকারি-বেসরকারি কর্মচারী ৩৭ জন, রাজনীতিক ২০ জন, সমাজসেবী ২৯ জন, সংস্কৃতিসেবী এবং চলচ্চিত্র, নাটক, সংগীত, শিল্পকলার অন্যান্য শাখার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ৩০ জন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, অতিরিক্ত সচিব/যুগ্ম সচিব, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, ড. চৌধুরী শাহিদ কাদের, ড. বায়েজিদ খুরশীদ রিয়াজ, মফিদুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দীন ইউসুফ, লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির, শহিদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য আরমা দত্ত, ডা. নুজহাত চৌধুরী শহিদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়নের কমিটিতে ছিলেন৷ মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব (গেজেট) এ কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে কাজ করছেন।

আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, এখন যে তালিকা প্রণয়ন হলো তা চূড়ান্ত করা হবে আগামী ১৪ ডিসেম্বরের আগে। আজ যেটি প্রকাশ করছি, তা চূড়ান্ত খসড়া ধরে নিতে পারেন। এখন নতুন করে আবেদন জমা পড়বে৷ তা আবার নিরীক্ষা করা হবে।

শহিদ বুদ্ধিজীবীদের নাম সরকারি তালিকাভুক্ত হলেও তাদের পরিবার কোনো আর্থিক সহযোগিতা পাবেন না বলে জানান মন্ত্রী। তবে এ পরিবারগুলো প্রশাসনিক, সামাজিক ও আর্থিক কোনো সংকটে পড়লে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সহযোগিতা করবে বলে জানান তিনি।