কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক সমাবেশে কয়েক’শ বিদেশী রাজপরিবারের সদস্য এবং নেতা সোমবার লন্ডনে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে প্রায় ২ হাজার লোকের জন্য স্থান রয়েছে। তাই শুধুমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান এবং এক বা দুই অতিথিকে ছয় দশকের মধ্যে ব্রিটেনের প্রথম রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
ইতিমধ্যে কয়েকটি দেশকে রাজনৈতিক বিবেচনার কারণে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। রাজকীয় অতিথি হিসেবে ইউরোপের এবং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের রাজা ও রাজ পরিবারের অতিথিরা ব্রিটেনের দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্বপালনকারী রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন।
জাপানের সম্রাট নারুহিতো এবং সম্রাজ্ঞী মাসাকো এতে যোগ দেবেন। ২০১৯ সালে সিংহাসন গ্রহণের পর এটি তাদের প্রথম বিদেশ সফর। এটি জাপানি ঐতিহ্য থেকে ব্যতিক্রম, খুব কমই সম্রাটকে শেষকৃত্যে যোগ দিতে দেখা যায়।
ইউরোপের রাজকীয় পরিবারগুলোর মধ্যে কয়েক শতাব্দীর রক্তধারার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তাই মহাদেশের বেশ কয়েকজন রাজাকে এই শেষকৃত্যে দেখা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ডাচ রাজা উইলেম-আলেকজান্ডার, রানী ম্যাক্সিমা এবং ক্রাউন প্রিন্সেস বিট্রিক্স, বেলজিয়ান রাজা ফিলিপ্পি কিং, নরওয়ের রাজা পঞ্চম হ্যারাল্ড এবং মোনাকোর প্রিন্স দ্বিতীয় আলবার্ট সবাই এতে অংশ নেবেন।
রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের তৃতীয় চাচাতো বোন ডেনমার্কের রানী মারগ্রেথ রানী এলিজাবেথের মৃত্যুর পর তার ৫০ তম জয়ন্তী উপলক্ষে সিরিজ অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন। তিনিও আসছেন এই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায়।
স্পেনের রাজা ফিলিপ ষষ্ঠ এবং তার বাবা, প্রাক্তন রাজা জুয়ান কার্লোসও সেখানে থাকবেন। কার্লোস ২০১৪ সালে পদত্যাগ করার পর এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে বসবাস করছেন৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার পত্মী জিল বাইডেন কূটনৈতিক অতিথির প্রধান তালিকায় রয়েছেন। তাদের শেষকৃত্যে উপস্থিতির বিষয়টি হোয়াইট হাউস নিশ্চিত করেছে। ব্রিটিশ সরকার তাদের নির্ধারিত পরিবহনে অনেক নেতাকে আসার নির্দেশনা দিয়েছেন, তবে বাইডেনকে তার সাঁজোয়া লিমোজিন ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যা দ্য বিস্ট নামে পরিচিত।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রোও উপস্থিত থাকবেন। এলিসি বলেছে, ব্রিটেনের সাথে ‘অটুট’ বন্ধন দেখাতে এবং ‘শাশ্বত রানী’ কে শ্রদ্ধা জানাতে ম্যাঁক্রো শেষকৃত্যে উপস্থিত থাকবেন। তিনিও নিজস্ব পরিবহন ব্যবহার করবেন। তুরস্কের প্রভাবশালী নেতা রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান এবং ব্রাজিলের জাইর বলসোনারোও আসছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের ব্রেক্সিট সত্ত্বেও ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেইন এবং ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রধান চার্লস মিশেলও উপস্থিত থাকবেন। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অন্যান্য রাষ্ট্র প্রধানদের মধ্যে থাকবেন ইতালির প্রেসিডেন্ট সার্জিও ম্যাটারেলা, জার্মানির ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টেইনমায়ার, ইসরায়েলের আইজ্যাক হারজগ এবং কোরিয়ার ইউন সুক-ইওল।
২০১১ সালে রানীর রাষ্ট্রীর সফরে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একটি প্রতীকী পদক্ষেপে আয়ারল্যান্ডের কয়েক দশকের উত্তেজনা নিরসনে সহায়তা করেছিলেন। সেই নেতা আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিনও যোগ দেবেন। এ ছাড়া ৫৬-জাতি কমনওয়েলথের সদস্যদের থেকে অসংখ্য নেতা আসবেন।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ এবং নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন, যাদের রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে ব্রিটিশ সার্বভৌম রয়েছে, তারা সবাই আসছেন।
কমনওয়েলথ থেকে প্রধানত প্রাক্তন ব্রিটিশ উপনিবেশের নেতারা আসবেন, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে এবং ফিজির প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক বাইনিমারামাসহ অন্যান্য নেতারা আসবেন।
ব্রিটিশ সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, ইউক্রেনে মস্কোর আগ্রাসনের পর রানীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া থেকে রাশিয়া, বেলারুশ এবং একটি ছোট গোষ্ঠীকে বাদ দেয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শেষকৃত্যে যোগ দিতে পারছেন না।
মস্কোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছে, রানীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় রাশিয়ার কোনো প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ না করা ‘বিশেষত দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্মৃতির প্রতি নিন্দাজনক’ এবং ‘গভীরভাবে অনৈতিক’ ।
ব্রিটিশ সূত্রটি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছে, সামরিক জান্তা চালিত মিয়ানমার এবং উত্তর কোরিয়াকেও বাদ দেওয়া হয়েছে।