মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে দেশের চা-বাগানগুলোতে ১২তম দিনের মতো চলছে শ্রমিকদের ধর্মঘট। এরই হিসেবে মৌলভীবাজারের চা-বাগানগুলোতে বন্ধ রয়েছে চা পাতা উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাতরকরণ।
অনির্দিষ্টকালের চা শ্রমিক ধর্মঘটের ১২তম দিনে জেলার বিভিন্ন চা-বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ চা শ্রমিকরা তাদের ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছেন।
জেলার ভুড়ভূড়িয়া, সাতগাঁও, মাকরিছড়া, আমরাইলছড়া, বৌলাছড়া চা বাগানে শ্রমিকরা ধর্মঘট অব্যাহত রেখে বাগানের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে অবস্থান নিয়েছেন। চা বাগানগুলোতে দুপুর ১টা পর্যন্ত শ্রমিকদের সভা-সমাবেশ হয়নি। তবে চা বাগানের কাজে যেতেও দেখা যায়নি চা শ্রমিকদের।
বেলা ১টার দিকে জেলার সাতগাঁও চা-বাগানে গিয়ে দেখা যায়, চা শ্রমিকরা বাগানের নাটমন্দিরে বসে আছেন। নানান ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন। ৩০০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করার জন্য তারা দাবি জানাচ্ছেন।
সাতগাঁও চা-বাগানের ইউ পি সদস্য শান্ত্বনা বাড়াইক বলেন, আমরা যে আন্দোলন করছি, সেটা আমরা পেটের দায়ে করছি। ১২০ টাকায় খাওয়া দাওয়া লেখা পড়া কিছুই হয় না। বিবিন্ন ধরনের কথা আমরা শুনতে পাচ্ছি সরকার বলছে ১২০ টাকায় আমাদের কাজ করতে। আসলেই কী সরকার এই কথা বলেছে। আমরা এটা বিশ্বাস করি না। প্রধানমন্ত্রী নিজে ঘোষণা দিলে আমরা মেনে নেব।
চা শ্রমিক আকাশ দোষাদ বলেন, দেশের সব চা বাগানে যদি কাজ করে আমরাও করতে রাজি। তবে আমাদের দাবিটা অবশ্যই বাগান মালিকদের মেনে নিতে হবে। আমরা চা শ্রমিকরা ১৬ দিন ধরে খেয়ে না খেয়ে আন্দোলন করছি আমাদের মজুরি বৃদ্ধির জন্য। আমরা চা শ্রমিকরা ১২০ টাকা মজুরিতে অনেক কষ্টে দিন কাটাই। আমাদের ১২০ টাকার বাইরে যে রেশন, চিকিৎসা, বাসস্থান বাগান কর্তৃপক্ষ দেয়, সেটা পর্যাপ্ত নয়। সেখানে অনেক ফাঁকি আছে। আমরা মজুরির বাইরে এসব ভালোভাবে পাই না। বর্তমান বাজারে সব কিছুর দাম। একটা কিনলে একটা কিনতে পারি না। এভাবে আমরা কত দিন কাজ করব। আমরা প্রধানমন্ত্রীর মুখের দিকে চেয়ে আছি। তিনি আমাদের দুঃখের কথা বুঝে আমাদের মজুরি নিয়ে একটা ভালো সিদ্ধান্ত দেবেন এটা আশা করি।
এদিকে গতকাল ধর্মঘটের ১১তম দিনে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া বিভিন্ন চা বাগানে গিয়ে শ্রমিকদের কাজ করার অনুরোধ জানান। তাদের অনুরোধে গতকাল ভাড়াউড়া চা-বাগান ও জেরিন চা-বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছিলেন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, আমি গতদিন ডিসি অফিসে বলেছিলাম আমাদের একদিন সময় দেন। আমরা সাধারণ শ্রমিকদের এটা বুঝাই কিন্তু তারা আমাদের সময় দেননি। শ্রমিকরা এটা মেনে নিতে পারছেন না। আমি সবার সঙ্গে কথা বলে আজ একটা সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত জানাব।
উল্লেখ্য বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে গত ৯ আগস্ট থেকে চার দিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি ও পরে ১৩ আগস্ট থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করছেন চা শ্রমিকরা। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটি ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেও সেটা মানছেন না সাধারণ শ্রমিকেরা। বাগানে বাগানে ঘুরে শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তিরা।