বিয়ানীবাজারে রাস্তা সংস্কারে ঠিকাদার পাচ্ছে না এলজিইডি!

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান না পাওয়ায় আটকে আছে বিয়ানীবাজারের বারইগ্রাম-আছিরগঞ্জ সড়কের প্রায় দুই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার পাকাকরণ কাজ। পিরেকচক বাজার থেকে ভরাউট পর্যন্ত রাস্তাটির কারণে দুর্ভোগে আছেন এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। তুলনামূলক নিচু হওয়ায় অল্প বৃষ্টি হলেই রাস্তাটি তলিয়ে যায় পানির নিচে। ফলে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন সেখানকার বাসিন্দারা।

বর্ষা শেষে সেখানকার স্থানীয় মানুষদের দুর্ভোগ যেন বাড়তেই থাকে। কাঁদা জল মাড়িয়ে হেঁটে চলাচল করতে হয়, পড়তে হয় নানা বিড়ম্ভনায়। অথচ এই অংশ পাকা হলে স্থানীয় আটটি গ্রামের মানুষের পাশাপাশি গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও বড়লেখা উপজেলার মধ্যে সড়ক যোগাযোগে আসবে যুগান্তকারী পরিবর্তন।

জনমানুষের এমন দুর্ভোগের পরও তিলপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, রাস্তাটির সংস্কার কাজে ঠিকাদার পাচ্ছে না স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

বারইগ্রাম-আছিরগঞ্জ সড়কের প্রায় দুই কিলোমিটার ব্যবহারকারি ৮ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ বর্তমানে বিকল্প সড়ক দিয়ে বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ ও বড়লেখা উপজেলায় যাতায়াত করছেন। এতে সময় ব্যয়ের পাশাপাশি তারা নিত্য দুর্ভোগে পড়ছেন। এছাড়া সড়কটি দিয়ে আছিরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, দাসউরা আলিম মাদ্রাসা, দাসউরা দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়, বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ও আশপাশ কয়েকটি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে। পাশাপাশি এলাকার কৃষকরা এ সড়কটি দিয়ে ভ্যানসহ অন্য যানবাহনযোগে তাদের কৃষি পণ্য ঘরে তোলেন। অথচ মাত্র ওই দুই কিলোমিটার সড়ক পাকা না করায় সাধারণ জনগণের পাশাপাশি মুমূর্ষু রোগী ও শিক্ষার্থীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ভুক্তভোগী গ্রামবাসী ওই চার কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, ৯ কিলোমিটার সড়কের প্রথম চার কিলোমিটার এবং শেষ তিন কিলোমিটার পাকাকরণ সম্পন্ন হলেও মধ্য অংশের দুই কিলোমিটার কাঁচা রয়ে গেছে। কাঁচা অংশের পাকাকরণ কাজের জন্য ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ তিনবার বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলেও কোন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়নি। চতুর্থ দফায় বিজ্ঞপ্তি দেয়ার প্রক্রিয়াধীন। এতে ব্যয় আগের চেয়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার বারইগ্রাম-আছিরগঞ্জ সড়কের ৯ কিলোমিটারের মধ্যে ৭ কিলোমিটার পাকাকরণ করা হলেও প্রায় মধ্য অংশ এখনো কাঁচা রয়েছে। বন্যা ও অতি বৃষ্টিতে কাঁচা সড়কের অবস্থাটি বর্তমানে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় এলাকাবাসী কাঁদাযুক্ত সড়ক দিয়ে চলাচল করছেন। সড়কের বারইগ্রাম এলাকা থেকে পীরেরচক এলাকা পর্যন্ত পাকা রয়েছে, মধ্যভাগের দুই কিলোমিটার কাঁচা সড়ক পেরিয়ে দেবারই এলাকা থেকে আছিরগঞ্জ বাজার পর্যন্ত সড়ক পাকা রয়েছে। দুই কিলোমিটার কাঁচা সড়কের কারণে বিপাকে পড়েছেন তিলপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম দাসউরার পীরেরচক, দেবারাই, কালাইম, কামারকান্দি, মাটিজুরা, ইসলামপুর টুকা, ভরাউট, খাগাইল এলাকার বাসিন্দারা। এ সড়কটি পাকা হলে গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও বড়লেখা উপজেলার বাসিন্দারের সড়ক যোগাযোগ আরো সহজতর হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জনদুর্ভোগ লাঘবে ওই রাস্তার কুশিটিকি খালের উপর প্রায় ১০ বছর আগে ৫১ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি চলাচল উপযোগী না হওয়ায় সেতু কাজে আসছে না। এছাড়া বর্ষাকালে সেতুর এ্যাপ্রোচ সড়কের মাটি সরে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে। বন্যার সময় বানের পানিতে রাস্তাটির অনেক অংশ ডুবে যাওয়ার কথা জানান এলাকাবাসী।

পীরেরচক এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হেকিম বলেন, ‘বর্ষায় সড়কের উপর পানি থাকে। পরে আরো ৩ থেকে ৪ মাস কাঁদাযুক্ত পথে কষ্ট করে হাটতে হয়।’ স্থানীয় গৃহিণী হাসনা বেগমের অভিযোগ, ‘রাস্তা ঠিক না হওয়ায় ছেলে মেয়েদের বিবাহ দেওয়াও কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দাবি, এই রাস্তাটি দ্রুত উঁচু ও পাকাকরণ করা হোক।’

তিলপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘রাস্তাটি পাকাকরণের দাবি স্থানীয়দের দীর্ঘ দিনের। এখানকার মানুষের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে তিনি জানান, এটি পাকাকরণ কাজে দরপত্র আহবান করে ঠিকাদার পাচ্ছে না বলে জানিয়েছে প্রকৌশল অফিস। রাস্তাটি দ্রুত পাকাকরণ করতে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চান তিনি।

বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রকৌশলী ছাইফুল আজম মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বলেন, ‘জনদুর্ভোগ লাঘবে এ রাস্তাটির কাজের একটি প্রাক্কলন স্থানীয় সরকারের এলজিইডি বিভাগের সিলেট অফিসে পাঠানো হয়েছে। রাস্তার প্রাক্কলন অনুমোদিত হলে টেন্ডারের মাধ্যমে অচিরেই এ সড়কের পাকাকরণ কাজ শুরু করা হবে।’