বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমিয়ে আনছে কানাডা

ক্রমবর্ধমান বাসস্থান-সংকটের কারণে কানাডা আগামী ফল (সেপ্টেম্বর ২০২৪) সেশন থেকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমিয়ে আনছে। কোভিড ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কানাডার অর্থনীতিতে বিরূপ অবস্থা দেখা দিলে গত তিন বছর কানাডা বিদেশি শিক্ষার্থীদের তাদের দেশে আনার সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়। আগে যেখানে কানাডা ৩ থেকে ৪ লাখ বিদেশি শিক্ষার্থী আনত, তা বেড়ে ২০২৩ সালে দাঁড়ায় প্রায় ৯ লাখ। এত বিশাল সংখ্যার শিক্ষার্থী কানাডার অর্থনীতিতে ২০ বিলিয়ন ডলার অবদান রেখেছে। কিন্তু এর প্রভাব পড়েছে কানাডার বাসস্থান, চাকরি ও বেশ কিছু জায়গায়।

এত বিশাল সংখ্যার বিদেশি শিক্ষার্থী আসার ফলে কানাডায় বাসস্থান-সংকট দেখা দিয়েছে, বাড়িভাড়া বেড়ে গেছে প্রায় ৩ ভাগের ১ ভাগ। কানাডায় গত বছর বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে অ্যাসাইলাম (শরণার্থী) দাবি করার সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছে কয়েক গুণ।

এত বিশাল সংখ্যার বিদেশি শিক্ষার্থী কানাডায় আসার ফলে পরবর্তী সময়ে কানাডা একটি বড় ধরনের সমস্যায় পড়বে। কানাডায় প্রতিবছর গড়ে সাড়ে চার লাখ মানুষকে স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়, যার মধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থী তিন লাখের বেশি নয়। অথচ ২০২৩ সালেই কানাডায় ৯ লাখ বিদেশি শিক্ষার্থী এসেছেন।

২০২৪ সালের শুরুতে কানাডা বিদেশি শিক্ষার্থীদের আসার আগে থাকা-খাওয়া বাবদ ১০ হাজার কানাডিয়ান ডলার ব্যাংকে দেখালেই হতো। এখন তা বাড়িয়ে ২০ হাজার ৬৩৩ কানাডিয়ান ডলার করা হয়েছে। কানাডায় টিউশন ফি-ও বেড়ে গিয়েছে।

কানাডায় এখন এক বছর পড়তে গেলে টিউশন ফি বাবদ গুনতে হয় ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার ডলার। অর্থাৎ থাকা-খাওয়া বাবদ খরচ, টিউশন ফি ও বিমানভাড়া বাবদ কমপক্ষে ৫০ হাজার কানাডিয়ান ডলার সমপরিমাণের টাকা না থাকলে কানাডায় আবেদন করা যাবে না।

অন্যদিকে এখন কানাডার অধিকাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি ইচ্ছামতো কাজ করতে পারেন। কিন্তু এপ্রিল ২০২৪ থেকে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী ২০ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে পারবেন না। এই ২০ ঘণ্টা কাজ করে বৈধভাবে প্রতি মাসে ১ হাজার ২০০ ডলারের বেশি আয় করা সম্ভব নয়। ফলে একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর খরচের তিন ভাগের দুই ভাগই তাঁদের অভিভাবকদের কাছ থেকে আনতে হবে, যার পরিমাণ বছরে ৩০ হাজার ডলার। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক সাহায্য ছাড়া কানাডায় পড়াশোনা করা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। অন্য দিকে গত কয়েক বছরে বিশাল সংখ্যার বিদেশি শিক্ষার্থী আসার ফলে অনেকেই পড়াশোনা শেষে কানাডায় স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ার সুযোগ পাবেন না।