বকেয়া বেতন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ চা শ্রমিকরা

আন্দোলনের পর প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে মজুরি বেড়েছে। নতুন হারে বেতন-ভাতাও পাচ্ছেন চা শ্রমিকরা। কিন্তু মেলেনি ২০ মাসের বকেয়া বেতন-ভাতা। নতুন চুক্তি সম্পাদনও হয়নি। দেশের শ্রমিকরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন দুর্গাপূজার আগে যেন তাদের বকেয়া পাওনা দেওয়া হয়। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও তা পাওয়া যায়নি।

এ নিয়ে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে দেশের ২৪১টি চা-বাগানের শ্রমিকদের মাঝে। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ মনে করেন, চুক্তি সম্পাদন ও বকেয়া বেতন ভাতার বিষয়টি যত তাড়াতাড়ি সমাধান হবে ততই মঙ্গল। অন্যথায় আবারও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে পারে দেশের চা-বাগানগুলোতে।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের উপদেষ্টা রামভজন কৈরি বলেন, বাংলাদেশীয় চা সংসদের সাথে আমাদের সর্বশেষ চুক্তি সম্পাদন হয় ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর। ১২০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করে দুই বছরের জন্য সম্পাদিত ওই চুক্তি কার্যকর হয় ১ জানুয়ারি ২০১৯ থেকে। আর চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সালে। এরপর থেকে আমরা চুক্তি সম্পাদনের জন্য মালিক পক্ষের সাথে দেন দরবার করছি। কিন্তু মজুরি বৃদ্ধির দাবি মেনে না নেওয়ায় এরপর আর চুক্তি সম্পাদিত হয়নি।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, দেশের চা শ্রমিকদের দাবি ছিল দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এদেশের চা শ্রমিকেরা মায়ের মতো দেখে তাই উনি ১৭০ টাকা মজুরি দেওয়ার পরও চা শ্রমিকেরা তা মেনে কাজে যোগ দিয়েছে। বিশেষ করে ভিডিও কনফারেন্স করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিকদের সাথে কথা বলার পর দ্বিগুণ উদ্যোমে তারা কাজ করছে। ফলে সেপ্টেম্বর মাসে দেশে চায়ের উৎপাদন অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে।

তিনি বলেন, চা শ্রমিকেরা বকেয়া বেতন ভাতা ও চুক্তি সম্পাদনের জন্য আমাদের প্রতিনিয়ত চাপ দিয়ে আসছে। এ নিয়ে চা বাগানগুলোতে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য বাংলাদেশীয় চা সংসদের চেয়ারম্যান মো. শাহ আলমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ব্যস্ত জানিয়ে পরে এ বিষয়ে কথা বলবেন বলে জানান।

উল্লেখ্য, দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে দেশের ৭টি ভ্যালির ৭৩ ফাঁড়ি বাগান২৪১টি চা বাগানে দুই ঘণ্টা করে ৪ দিন কর্মবিরতি পালন করেন চা শ্রমিকেরা। পরে ১৩ আগস্ট এক দিন এবং ১৬ আগস্ট থেকে লাগাতার ধর্মঘট পালন করেন। ২৭ আগস্ট চা শ্রমিকরা। আন্দোলনরত চা শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে মালিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভা করেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দেশের বৃহৎ ১৩টি চা-বাগান মালিকের সাথে আলোচনা করে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চা-বাগান মালিকদের সাথে বৈঠক করে এ মজুরি নির্ধারণ করে দেন। এরপর ধর্মঘট প্রত্যাহার করে চা শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেন। পরে ৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের চা শ্রমিকদের সাথে ভিডিও কনফারেন্স করে কথা বলেন। এতে আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠেছিলেন চা শ্রমিকেরা। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে বকেয়া না পেয়ে আবারও ফুঁসছেন তারা।