নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশ নেবে কিনা এই বিষয়ে জল্পনা কল্পনা চলছিলো অনেক দিন ধরেই। এবার নির্বাচন নিয়ে মুখ খুললেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের।
জিএম কাদের বলেছেন, আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গেই আছি। কী হবে, তা এখনো কেউ জানে না। যদি নির্বাচন হয়, তখন আমরা সিদ্ধান্ত নেব। যতক্ষণ ঘোষণা না দিয়ে চলে যাব, ততক্ষণ আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে আছি। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। নির্বাচন যদি সঠিকভাবে হয়, তবেই আমরা অংশ নেব। যদি আমরা মনে করি, সঠিকভাবে নির্বাচন হচ্ছে না, তখন আমরা ঘোষণা দিয়েই নির্বাচন বর্জন করব। ঘোষণাটা আমাদের তরফ থেকেই আসতে হবে। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। নির্বাচন নিয়ে কোনো একক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। প্রকাশ্যে ঘোষণা দেওয়া হবে। গণমাধ্যমের সামনে ঘোষণা দিয়ে বলা হবে, এই কারণে আমরা নির্বাচন করছি বা করছি না।
শনিবার (৪ নভেম্বর) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে নিজের লেখা ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র সোনার পাথরবাটি’ দ্বিতীয় খণ্ড এবং ‘MISERIES OF MISCONCEIVED DEMOCRACY’ Volume-2 বই দুটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে জিএম কাদের এসব কথা বলেন।
জিএম কাদের বলেন, দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী তো আমাদের লোক, আমরাই বানিয়েছি। তারা কোনো ভুল করলে অবশ্যই আমরা বলব। কথা বললেই শাস্তি পেতে হবে? সেজন্য আইন করা হবে? আমি ভুল বলতে পারি, কিন্তু আমার বলার অধিকার তো আছে। আমরা যেন কথা বলতে না পারি, সেজন্য আইন করা হচ্ছে। সরকার হচ্ছে কেয়ারটেকারের মতো, ভুল করলে পরিবর্তন করতে চাইব না? বাংলাদেশের মানুষের এই অধিকার এখন আর নেই।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র না থাকলে কোনো প্রকল্প গণমুখী হয় না তার প্রমাণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। বিবিসির দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, চার হাজার কোটি টাকার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প বছরে আয় করছে একশ কোটি টাকা। ১৫ বছর হচ্ছে এটার লাইফ। এটা কি বাস্তবসম্মত হলো? তাহলে আবার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ প্রকল্পের জন্য চুক্তি কেন? আসলে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নামে দুর্নীতির সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। যেখানে বেশি দুর্নীতি করা যায়, সেই প্রকল্প দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন হয়।
জিএম কাদের বলেন, আবার রূপপুর আণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়েও কথা আছে। ভারতে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হয়েছে ৫ বিলিয়ন ডলারে। অথচ একই কোম্পানির ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থাপনে ইতোমধ্যেই খরচ হয়েছে নাকি ১৬ বিলিয়ন ডলার।
জিএম কাদের বলেন, যেসব দেশে একনায়কতন্ত্র থাকে, সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে স্থিতিশীল সরকার থাকলে অনেক উন্নয়ন হয়। এক সরকার বেশি দিন থাকলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা ঢেকে রাখতে পারে না। সরকার বা সরকারপ্রধান পরিবর্তন হলেও সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যদি অস্থিরতা সৃষ্টি না হয়, তাকেই স্থিতিশীলতা বলা যায়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও কলামিস্ট মহিউদ্দিন আহমদ।
এ সময় বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, সিনিয়র সাংবাদিক সফিকুল করিম সাবু, শাহজালাল ফিরোজ, বইয়ের প্রকাশক আবুল বাশার।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, এসএম আব্দুল মান্নান, শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, সুনীল শুভ রায়, এসএম ফয়সল চিশতী, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, এটিইউ তাজ রহমান, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, সোলায়মান আলম শেঠ, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, নাজমা আখতার এমপি, মোস্তফা আল মাহমুদ, জহিরুল আলম রুবেল প্রমুখ।