উৎসবমুখর বিয়ানীবাজার, পঞ্চমুখী লড়াইয়ের আভাস

পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারণায় এখন উৎসবের শহর বিয়ানীবাজার। এই নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন ১০ প্রার্থী। তবে স্থানীয়দের ধারণা, মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে পঞ্চমুখী।

জনসমর্থন ও প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে থাকা এই পাঁচ প্রার্থী হলেন- সরকারদলীয় প্রার্থী মো. আব্দুস শুকুর, আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুকুল হক ও আব্দুল কুদ্দুছ টিটু, স্বতন্ত্র প্রার্থী তফজ্জুল হোসেন ও আব্দুস সবুর। হিসাবের মধ্যে রাখতে হবে আহবাব হোসেন সাজু ও প্রভাষক আব্দুস সামাদ আজাদকে। শেষ পর্যন্ত ভোটাররা কোন দিকে যাচ্ছেন; সেসব বিবেচনায় রেখে এবং বিভিন্ন সমীকরণ মিলিয়ে এ প্রতিদ্বন্দ্বিতা ত্রিমূখীও হতে পারে। তবে কে হাসবেন শেষ হাসি তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

বিয়ানীবাজার পৌরসভা নির্বাচন ঘিরে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে উপজেলা সদর। ২০০১ সালে গঠিত এ পৌরসভাটির দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামী ১৫ জুন। এই নির্বাচনকে ঘিরে শেষ সময়ে এসেও ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা লক্ষ্য করা গেছে। শহরজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা ও চুলচেরা বিশ্লেষণ। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে ভোট নিয়ে আলোচনা। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হতে শেষ সময়ে এসেও প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা, দিচ্ছেন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। একই সাথে অস্থায়ী ভোটারদের জন্য নানা কর্মসূচি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিচ্ছেন মেয়র প্রার্থীরা।

এবারের বিয়ানীবাজার পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন ১০জন। এর মধ্যে হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যেই লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। ফলে নির্বাচনে হারজিত নিয়ে সঠিক হিসাব মেলাতে পারছেন না প্রার্থীরা। সরেজমিন প্রত্যক্ষ ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, প্রত্যেক মেয়র প্রার্থীর একটা নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। তাছাড়া ব্যক্তি ইমেজ, আঞ্চলিকতা, সামাজিক প্রভাব এসবও ভোটও নির্বাচনি মাঠে ফ্যাক্টর হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতার দৌড়ে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. আব্দুস শুকুর, স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ফারুকুল হক, আব্দুল কুদ্দুছ টিটু, তফজ্জুল হোসেন, আব্দুস সবুর, আহবাব হোসেন সাজু ও প্রভাষক আব্দুস সামাদ ভোট যুদ্ধে এগিয়ে রয়েছে। সাতজনের সম্ভাব্য এ তালিকা সংক্ষিপ্ত হলে ত্রিমূখী বা চতুর্থমূখী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবে মেয়র পদ প্রার্থীরা। এক্ষেত্রে এলাকার আধিপত্য, দলীয় প্রভাব, ব্যক্তি ইমেজের কারণে নৌকার প্রার্থী আব্দুস শুকুর, স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুকুল হক, তফজ্জুল হোসেন ও আব্দুল কুদ্দুছ টিটুকে এগিয়ে রাখছেন এলাকাভিত্তিক ভোটাররা। একই সাথে নিজ নিজ ওয়ার্ডের অবস্থানের উপর নির্বাচনি দৌড়ে রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী আহবাব হোসেন সাজু, আব্দুস সবুর ও প্রভাষক আব্দুস সামাদ।

তবে দলীয় ভোট কিংবা ব্যক্তি ইমেজ এসব বিবেচনায় শেষ মুহূর্তের প্রচারণা কিছুটা পিছিয়ে রয়েছেন জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী সুনাম উদ্দিন ও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট আবুল কাশেম ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী অজি উদ্দিন। ভোটারদের কাছে সময়ের ব্যবধানে তাদের অবস্থান কিছুটাও হলে পেছনে রয়েছে।

এদিকে, এই নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত কোন প্রার্থী। পৌর এলাকায় রাজনৈতিক এই দল দুটোর নির্দিষ্ট একটি ভোটব্যাংক রয়েছে। একক কোন প্রার্থী কি পাচ্ছেন বিএনপি জামায়াতের সমর্থন। নাকি এলাকা ভিত্তিক প্রার্থীরা এসব ভোটে ভাগ বসাবেন তা নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। তবে দলীয়ভাবে প্রকাশ্যে কোন প্রার্থীকে সমর্থন না আসলেও শেষ মুহূর্তে কোন না কোন প্রার্থীকে সমর্থন জানাতে পারেন দল দুইটির স্থানীয় নেতারা। তাদের সে সমর্থনে কতটুকু এগিয়ে আসবেন স্থানীয় নেতাকর্মী ও ভোটাররা তারপর উপর নির্ভর করছে নির্বাচনের ফলাফলের সম্ভাবনা। কিন্তু এলাকা ভিত্তিক প্রার্থীদের পক্ষে দল দুইটির অধিকাংশ নেতাকর্মী মাঠ পর্যায়ে প্রচারণায় যুক্ত থাকায় দলীয় কোন সিদ্ধান্ত কিংবা নির্দেশনা বুমেরাং হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের কোন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না থাকায় পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে দল দুটোর স্থানীয় পর্যায়ের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। ফলে ১৫ জুনের ভোটে বিএনপি-জামায়াতের সমর্থিত ভোট যেকোন প্রার্থী পক্ষে যেতে পারে।

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্টদের অভিমত, এবারের নির্বাচনে নারী ভোটারদের হাতেই জয়-পরাজয়ের সমীকরণ নির্ভর করবে। নারী ভোটারদের উপস্থিতি এবং তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার উপর নির্ভর করছে মেয়রের ভাগ্য। তারা বলছেন, নারী ভোটাররা পাল্টে দিতে পারেন এবারের জয়-পরাজয়ের হিসাব।

বিয়ানীবাজার পৌরসভার ৯ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪৮ এবং ৩টি সংরক্ষিত মহিলা আসনে ১০ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রার্থী সবাই এখন মাঠে। অন্যদিকে নির্বাচনকে ঘিরে আলোচনায় ভোটাররা। প্রার্থীদের নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন তারা। চলছে নানা জল্পনা কল্পনা ও হিসাব-নিকাশ।

সর্বোপরি বলা যায় নির্বাচনকে ঘিরে পুরো বিয়ানীবাজার পৌরসভা এখন উৎসবমুখর। আনন্দ উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে কোনো ধরনের বাঁধা-বিপত্তি ছাড়াই প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন এতোদিন। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এবার প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ইভিএমে এই পৌরসভার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। একদিকে, নির্বাচন আয়োজকরা ইভিএমে স্বতঃস্ফূর্ত ভোট কাস্টিং করতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। অন্যদিকে, কিছুটা সংশয় থাকলেও ইভিএমে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগে পাওয়ায় বেশিরভাগ ভোটারই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।

ভোট সুন্দর ও আনন্দমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশ্বাস প্রকাশ করেছেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন অফিসার সৈয়দ কামাল হোসেন।

নির্বাচনের দিন পৌরসভার ১০টি ভোট কেন্দ্রে থাকবে অতিরিক্ত পুলিশ, ব্যাটালিয়ন পুলিশ, আনসার সদস্যরা। সেইসঙ্গে সার্বক্ষণিক টহলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও র‌্যাব সদস্য দ্বারা গঠিত স্ট্রাইকিং ফোর্স, একজন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট ও তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বাধীন মোবাইল টিম।

বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিল্লোল রায় বলেন, প্রতিটি কেন্দ্র অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।