দুঃসময়ে হাসলো কোহলি-রাহুলের ব্যাট, হারলো অস্ট্রেলিয়া

টার্গেট তাড়া করতে নেমে মাত্র ২ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর অনেকে ভেবেই বসেছিলেন যে, অজিদের সামনে আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে ভারত। কিন্তু না! সেই দুঃসময়ে হাসলো বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুলের ব্যাট। ফলশ্রুতিতে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়লো ভারত। সেই সাথে পরাজয় দিয়ে বিশ্বকাপের সূচনা করলো অস্ট্রেলিয়া।

রোববার আগে ব্যাট করে ১৯৯ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া। টার্গেট তাড়া করতে নেমে ২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যাওয়া ভারতকে খেলা ফেরান বিরাট কোহলিও লোকেশ রাহুল। চতুর্থ উইকেটে ২১৫ বলে ১৬৫ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের দুয়ারে নিয়ে যান কোহলি। সেই সাথে বিশ্বকাপের রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে আসরের শুভ সূচনা করল ভারত।

লো স্কোরিং ম্যাচ। ওয়ানডে ক্রিকেটে যখন সাড়ে তিনশ কিংবা চারশ রানও নিরাপদ না, ঠিক সেই সময়ে এসে ২০০ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমেই হারের শঙ্কা জেগেছিল ভারতের। অস্ট্রেলিয়ার বোলিংয়ের তোপে দুই রানের মাথায় তার হারিয়েছিল তিন উইকেট। কিন্তু দলটা যখন ভারত, তখন উপসংহার লিখতে সময় দরকার হয়।

বিরাট কোহলি এবং লোকেশ রাহুল লিখলেন সেই উপসংহারটা। দুজন মিলে রীতিমত সংগ্রাম করেছেন। রান তুলতে কষ্ট হলেও শেষ পর্যন্ত হাল ছাড়েননি কেউই। তাদের দুজনের মিলিত প্রচেষ্টায় ভারত পেয়েছে ৬ উইকেটের জয়। প্রতিকূল পরিস্থিতির এক ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপের বাকি প্রতিপক্ষদেরও যেন বার্তা দিলো রাহুল দ্রাবিড় শিষ্যরা। বোলারদের ম্যাচে ভারতকে জেতালেন দুই ব্যাটার কোহলি এবং রাহুল।

২০০ রানের টার্গেট দেখে সবাই যখন ভেবেছিল একপেশে এক ম্যাচ হবে, তখনই ম্যাচের দৃশ্যপটে হাজির জশ হ্যাজেলউড এবং মিচেল স্টার্ক। প্রথম ওভারেই আঘাত হানেন স্টার্ক। গিলের অনুপস্থিতিতে ওপেন করতে আসা ঈশান কিশাণকে ফিরিয়েছেন তিনি। পরের ওভারে জোড়া আঘাত করেন জশ হ্যাজেলউড। সাজঘরে ফেরেন রোহিত শর্মা এবং শ্রেয়াশ আইয়ার। দুই রানে নেই ভারতের তিন উইকেট।

এরপরের গল্পটা শুধুই ভারতীয় ব্যাটার কোহলি এবং রাহুলের। পিচের আচরণ বুঝে ধীরলয়ের ব্যাটিং করেছেন দুজন। চার-ছয় নয়, বরং স্ট্রাইক রোটেট করে খেলার দিকেই মনোযোগ ছিল দুইজনের। সময় যত গড়িয়েছে, অজি বোলারদের হতাশা ততই বাড়িয়েছেন এই দুজন।

সুযোগ যে অস্ট্রেলিয়া পায়নি তা না। ব্যক্তিগত ১২ রানে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তুলেছিলেন কোহলি। তবে সেই ক্যাচটা নিতে পারেননি মিচেল মার্শ। ব্যাট হাতে ব্যর্থতার পর ফিল্ডিংয়ে ক্যাচ ছেড়ে ভারতকে এগিয়ে দিয়েছিলেন এই মার্শই।

বিরাট এরপর আর ভুল করেননি। পুল শটই খেলেননি। স্নায়ুচাপ ধরে রেখে ম্যাচ এগিয়ে নিয়েছিলেন। আর তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন রাহুল। দুজন মিলে গড়েছেন ১৬৫ রানের জুটি। বিশ্বকাপে যা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

কোহলি অবশ্য ম্যাচ শেষ করে আসতে পারেননি। জয় যখন হাতের নাগালে, তখনই আউট হন তিনি। হ্যাজেলউডের শিকার হয়ে ব্যক্তিগত ৮৫ রানে ফিরে যান তিনি। এরপর ম্যাচ শেষ করেছেন হার্দিক পান্ডিয়া এবং কেএল রাহুল। রাহুল অপরাজিত ছিলেন ৯৭ রানে।

এর আগে, রবিবার (৮ অক্টোবর) চেন্নাইয়ের এম চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ৪৯ ওভার ৩ বলে ১৯৯ রান তুলে অলআউট হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেছেন স্টিভেন স্মিথ। তাছাড়া ওয়ার্নারের ব্যাট থেকে এসেছে ৪১ রান। ভারতের হয়ে ২৮ রানে ৩ উইকেট শিকার করেছেন জাদেজা।

আগে ব্যাটিং করতে নেমে শুরু থেকেই চাপে ছিল অস্ট্রেলিয়া। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে মিচেল মার্শকে ফিরিয়ে অজি শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন জাসপ্রিত বুমরাহ। ৬ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি এই ওপেনার। তবে আরেক ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার এদিন দারুণ শুরু করেন। ভালো শুরু পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। এই অভিজ্ঞ ওপেনার থেমেছেন ৪১ রানে।

তিনে নেমে স্টিভেন স্মিথও সাবলীল ব্যাটিং করেছেন। ফলে একশ রান স্পর্শ করার আগে আর কোনো উইকেট হারায়নি অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু ৪৬ রান করা স্মিথ সাজঘরে ফিরলে ধ্বস নামে অজি শিবিরে। মার্নাশ ল্যাবুশেন-গ্লেন ম্যাক্সওয়েলরা সেট হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি।

লোয়ার মিডল অর্ডারে একেবারেই ব্যর্থ ছিলেন অ্যালেক্স ক্যারি-ক্যামেরুন গ্রিনরা। শেষদিকে মিচেল স্টার্কের ৩৫ বলে ২৮ রানের ইনিংসে ভর করে লড়াই করার পুঁজি পায় অজিরা।