তিন বছরেই স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পথে হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

পাহাড়, টিলা, বন আর হাওরের জেলা হবিগঞ্জের কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে উঠার অঙ্গীকার নিয়ে নতুন প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ইতিমধ্যে পূর্ণ করেছে তিনটি বছর। হবিগঞ্জ সদরের শহরতলী ভাদৈ এলাকায় ছোট্ট একটি মনোরম ক্যাম্পাসে অস্থায়ী ভিত্তিতে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম।

কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ বিজ্ঞান ও প্রাণি চিকিৎসা অনুষদে দুটি শিক্ষাবর্ষে ১৮০ জন শিক্ষার্থী স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ক্লাস নিচ্ছেন ইন্টারেক্টিভ ডিসপ্লে বোর্ডের মাধ্যমে। প্রতিটি ক্লাসরুমেই এই ডিজিটাল ডিসপ্লে ও আধুনিক সাউন্ড সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। আর এতে ইন্টারনেট সংযোগ থাকায় শিক্ষার্থীদের মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষি শিক্ষার বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয়গুলোও ভালোভাবে বুঝানো সম্ভব হচ্ছে। আর তাই ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা তাদের ক্লাসরুমকে ডাকেন ‘স্মার্ট ক্লাসরুম’ নামে।

এছাড়াও শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সেন্ট্রাল ওয়াইফাই সেবা রয়েছে। পৃথিবীর নানা লাইব্রেরি ও জার্নালের এক্সেস সহ ৪০ টি কম্পিউটার নিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি সেন্ট্রাল ডিজিটাল লাইব্রেরি যেখানে শিক্ষার্থীরা বসে নিয়মিত পড়াশুনা করতে পারছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কাজে জটিলতা এড়াতে একটি স্মার্ট মোবাইল এপ তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি অনুষদের শিক্ষার্থীরা এই এপ ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের সেমিস্টার পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন, হলের ফি প্রদান সহ নানা কাজ খুব সহজেই করতে পারছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসটি অস্থায়ী হলেও এখানে ইতিমধ্যে ছাত্রীদের জন্য একটি অস্থায়ী হলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি অনুষদে রয়েছে উন্নতমানে ল্যাবরেটরি। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য আছে গবেষণা মাঠ।

শুধু শিক্ষায় নয়, সংস্কৃতি আর খেলাধুলায়ও পিছিয়ে নেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, ক্রিকেট, ক্যারাম, টেবিল টেনিস সহ নানা খেলায় মেতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের পাশাপাশি হলেও রয়েছে তাদের খেলার ব্যবস্থা।

শিক্ষার্থীরা নিজেই তৈরি করেছেন তাদের সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন’। এই সংগঠনের মাধ্যমে নাচ, গান, ফটোগ্রাফি, অভিনয় সহ নানা সাংস্কৃতিক কার্যক্রম করছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবদুল বাসেত বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতির উপর ভিত্তি করে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে আমাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসের ভূমি অধিগ্রহণের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন থাকলেও অস্থায়ী ক্যাম্পাসে আমরা প্রতিটি অনুষদের ক্লাস ও উন্নত ল্যাবের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া শিক্ষার্থীরা মাঠপর্যায়ে গবেষণার সুযোগ পাচ্ছে। এখানের পাঠ্যসূচী করা হয়েছে বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে। প্রতিটি অনুষদেই স্নাতক পর্যায়ের শেষ সেমিস্টারে ইন্টার্নশীপের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

এছাড়া কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ বিজ্ঞান ও প্রাণি চিকিৎসা অনুষদের কোর্সগুলোর পাশাপাশি সকল অনুষদেই কম্পিউটার সংক্রান্ত কোর্স ও শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করেছে এই সম্পর্কিত কোর্স রাখা হয়েছে। এছাড়া মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য সাঁতার শেখার ব্যবহারিক কোর্সও রাখা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ইতিমধ্যে ‘ইনস্টিটিউট অব প্রিসিশন এগ্রিকালচার’ নামে একটি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই ইনস্টিটিউটটি মূলত কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের বিভিন্ন সমস্যার নিঁখুত সমাধানে কাজ করবে। হাওর অধ্যুষিত হবিগঞ্জ অঞ্চলের চাষী ভাইদের বিভিন্ন পরামর্শ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সেবা দিতে ‘ফার্মার্স সাপোর্ট সার্ভিস’ তৈরি করা হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও ইতিমধ্যে বিভিন্ন ধরণের গবেষণা প্রকল্পের কাজ শুরু করেছেন। আমরা আশা করছি, শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে নিরাপদ খাদ্যের যোগান দিতে স্মার্ট কৃষি ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী কাজের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে ভূমিকা রাখবে হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।