সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তে বসছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন পণতীর্থ (মহাবারুণী) গঙ্গাস্নান ও শাহ্ আরেফিন (র.) এর ওরস মাহফিল। ৭০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ দুটি অনুষ্ঠান ঘিরে সনাতন ও ইসলাম ধর্মাবলম্বী লক্ষাধিক ভক্ত-আশেকান ও দশনার্থীর সমাগম ঘটে যাদুকাটা নদীর দুই পাড় ও সীমান্তবর্তী লাউড়েগড় এলাকায়।
আগামী রোববার (১৯ মার্চ) উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের যাদুকাটা নদী সংলগ্ন রাজারগাঁও এলাকায় মহাবিষ্ণুর অবতার অদ্বৈত জন্মধাম পণতীর্থে মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে (মহাবারুণী) গঙ্গাস্নান ও মেলা অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগের দিন শনিবার (১৮ মার্চ) থেকে লাউড়েরগড় এলাকায় হয়রত শাহজালাল (র.) এর অন্যতম সঙ্গী হযরত শাহ আরেফিন (র.) এর মোকামে বার্ষিক ওরস মোবারক শুরু হবে। উৎসব দুটি ঘিরে প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা ভক্ত-আশেকানদের আগমনে পুরো এলাকা এক সম্প্রীতির মিলনমেলায় পরিণত হয়।
এদিকে গঙ্গাস্নান ও ওরস উদযাপন উপলক্ষে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা প্রশাসন অনুষ্ঠান দুটির উদযাপন কমিটির নেতাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা ও উদযাপনের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করেছে। বৈঠকে সভায় আগত পুণ্যার্থী ও ভক্ত-আশেকানদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত রাখা, উৎসবস্থল ঘিরে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং, যানবাহন ভাড়া ও যাতায়াত ব্যবস্থা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, অতীতের পাপ মোচন এবং ঈশ্বরের আশীর্বাদ ও পুণ্য লাভের আশায় প্রতি বছর চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে দেশ ও দেশের বাইরের কয়েক লাখ সনাতন ধর্মের অনুসারী নর-নারী শ্রী অদ্বৈত আচার্য ঠাকুরের আবির্ভাবস্থল পণতীর্থ স্মৃতিধাম যাদুকাটা নদীর জলে পূণ্যস্নান করে কলুষমুক্ত হন এবং ঈশ্বরের কৃপা লাভ করেন। তাঁদের বিশ্বাস, পণতীর্থ স্নানের মাধ্যমে মনোবাসনা পূর্ণ হয়। এ উপলক্ষে মহাবারুনী মেলা বসে। ১৫১৬ খ্রিস্টাব্দে এই তীর্থের সূচনা করেন মহাপুরুষ শ্রী অদ্বৈত আচার্য ঠাকুর। তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে অদ্বৈত আচার্য মন্দির গড়ে উঠেছে যাদুকাটা নদীর তীরবর্তী রাজারগাঁও গ্রামে।
এদিকে প্রতি বছর পণতীর্থ মহাবারুনী গঙ্গাস্নানের তারিখের সাথে মিল রেখে উপজেলার সীমান্তবর্তী লাউড়েরগড় এলাকায় হযরত শাহজালাল (র.) এর অন্যতম সঙ্গী হযরত শাহ আরেফিন (র.) এর বার্ষিক ওরস মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ওরস উপলক্ষে সেখানেও মেলা বসে।
স্থানীয়দের মতে, হযরত শাহ আরেফিন (র.) এর মোকাম ভারত সীমান্তের ওপারে এক পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত হলেও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অগণিত মুসলমান নর-নারী ওরসে শরিক হন এবং দূর থেকেই এই দরবেশের মোকাম জিয়ারত করেন। ওরসে মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজন ছাড়াও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান, পাহাড়ি ও বাঙালি ভক্ত-আশেকান তাঁর স্মৃতিবিজড়িত লাউড়েরগড় এলাকায় সমবেত হন।
শ্রী অদ্বৈত জন্মধাম তাহিরপুর উপজেলা কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য গণেশ তালুকদার বলেন, গঙ্গাস্নান ও মহাবারুনী মেলা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। স্নান ও মেলা শেষে পুণ্যার্থীরা যেন নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন এ বিষয়টিতে এবারও সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
শাহ্ আরেফিন (র.) ওরস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব আলম সাব্বির বলেন, শাহ্ আরেফিন (র.) ওরস ও মেলা সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন করতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয়দের সাথে মতবিনিময় হয়েছে। ওরস ও মেলা উপলক্ষে ওয়ানওয়ে সড়ক দিয়ে যান চলাচলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
শাহ্ আরেফিন (র.) ওরস উদযাপন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা বলেন, মহাবারুনী ও শাহ আরেফিন (র.) এর ওরস এলাকায় আগত ভক্ত-আশেকান ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা কাজ করবেন। মেলা ও স্নান এলাকায় মেডিকেল টিম রাখা হবে। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে গঙ্গাস্নান এলাকা ও উৎসবস্থল সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হবে।