ওসমানীনগরে বেড়েছে নৌকার কদর, ব্যস্ত কাঠমিস্ত্রীরা

বন্যায় বিপর্যস্ত ওসমানীনগর উপজেলার প্রতিটি জনপদ। ভেঙ্গে পড়েছে সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা। এমন বাস্তবতায় নৌকা হয়ে ওঠেছে চলাচলের প্রধান বাহন।

প্রবল বন্যার কারণে এলাকার মানুষ প্রায় তিন যুগ পর নৌকা ব্যবহার করছেন। কোথাও যাওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় নৌকার জন্য। কারণ, যাত্রী অনুপাতে নৌকা অপ্রতুল। যে কারণে মানষেরা সময় মত তার কর্ম/গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারছেন না।

মাঝিরা জানিয়েছেন, তারা পেশাজীবি নৌকা চালক নন, তাদের পেশা মাছ শিকার করা বা অন্য কিছু। বন্যার কারণে তারা মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে কিছু দিনের জন্য মাছ শিকার বন্ধ করে এ পেশায় এসে মানুষকে পারাপার করছেন।

জানা যায়, গত এক সপ্তাহ ধরে বন্যার শিকার ওসমানীনগর উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন। পানিবন্দি হয়ে পড়েন ওসমানীনগরের পূর্বাঞ্চলের মানুষ। প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তায় বুক পানি। মানুষের দুর্দশা দেখে কালাসারা হাওরের কয়েকজন মাছ শিকারী তাদের মাছ শিকার বন্ধ করে মানুষ পারাপারের কাজে নেমে পড়েন। স্থানীয় মানুষেরা তাদের এ মহৎ উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিনিময়ে মানুষ খুশি হয়ে যা দেয় তাতেই তারা খুশি।

সুমন মিয়া নামের একজন জানান, গোয়ালাবাজার-হস্তিদুর যদি নৌকা পাওয়া না যেত, তাহলে এলাকার দুর্গতি আরো বেড়ে যেত। যারা যাত্রী পারাপারে কাজ করছে তাদেরকে অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

গোয়ালাবাজার ঘয়নাঘাটের নৌকা চালক সালামত মিয়া, দবির মিয়াসহ নৌকা চালকরা জানান, আমরা মানুষের দুর্গতি ও যাতায়াতের কথা চিন্তা করে কিছু দিনের জন্য পেশা পরিবর্তন করে মানুষ পারাপারে সময় দিচ্ছি। যাত্রীরা যার যত ইচ্ছে টাকা দিচ্ছে।

গোয়ালাবাজার-হস্তিদুর, নসিরপুর যাত্রী পারাপারে প্রায় ৯টি নৌকা রয়েছে। তারা ত্রাণ বিতরণে আসা ব্যক্তিদের সানন্দে নৌকায় তুলে গ্রাম-গঞ্জে নিয়ে যাচ্ছেন। এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে যেতে চাইলে নৗেকার বিকল্প নেই। যার কারণে অনেকে তাদের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য দূর দূরান্ত থেকে নৌকা কিনে নিয়ে আসছেন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অহরহ দেখা যাচ্ছে মানুষ ট্রাকে করে নৌকা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে বন্যায় নৌকার দাম বেড়ে তিনগুন হয়েছে। ১০ হাজার টাকার নৌকা বিক্রি হচ্ছে ২৫/৩০ হাজার টাকায়।

অন্যদিকে বন্যায় নৌকা চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নৌকার কারিগরদের বেড়েছে কদর। কাঠমিস্ত্রীরা তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারা তৈরি করছেন ডিঙি নৌকা। চার হাজার টাকার ডিঙি নৌকা বিক্রি হচ্ছে ১২ হাজার টাকায়। স্মরণকালে এভাবে আর কখনও নৌকার কদর বাড়েনি।