জগন্নাথপুরে মুখ থুবড়ে পড়েছে কৃষি আবহাওয়ার তথ্য বোর্ড

বৃষ্টি, তাপমাত্রা, আদ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, আলোকঘণ্টা সংক্রান্ত নানাবিধ তথ্য কৃষকদের মাঝে আগাম সরবরাহের জন্য সারাদেশের মতো সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের চার ইউনিয়নে স্থাপন করা হয় কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস বোর্ড।

কিন্তু কৃষি বিভাগের অবহেলা আর অযত্নে দীর্ঘদিন অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে এসব তথ্য বোর্ড। কোথাও চুরি হয়ে গেছে, রেইন গেজ মিটার ও সৌর বিদ্যুতের প্যানেল। এমনকি অনেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কৃষি আবহাওয়ার তথ্য পদ্ধতি উন্নয়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ফসল রক্ষা ও সঠিক সময়ে চাষাবাদের জন্য আগাম তথ্য দিতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ প্রকল্প গ্রহণ করে কৃষি সম্প্রসারণ ও বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ লক্ষে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয় কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস বোর্ড ও রেইন গেজ মিটার। এটি পরিচালনার জন্য ওই সময় প্রত্যেক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে দুইদিন করে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছিল। সেইসঙ্গে আবহাওয়া বিষয়ক সফটওয়্যারসহ প্রত্যেককে একটি করে ট্যাব দেওয়া হয়। সফটওয়্যার বা ওয়েবসাইট থেকে নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ করার জন্য সরকারিভাবে প্রতিমাসে ইন্টারনেট প্যাকেজ দেওয়া হচ্ছে। তবুও মুখ থুবড়ে পড়েছে আবহাওয়া কৃষি পূর্বাভাস বোর্ড।

সম্প্রতি জগন্নাথপুরের আট ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, কৃষি আবহাওয়ার তথ্য বোর্ডগুলো কলকলিয়া, সৈয়দপুর শাহারপাড়া, মিরপুর ও চিলাউড়া এই চার ইউনিয়নে নামমাত্র স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা প্রতিদিন আপডেট দেওয়ার কথা থাকলেও তারা এ বিষয়টি জানেন না। অপরদিকে কৃষকরা নিয়মিত কৃষি আবহাওয়ার পরামর্শ সেবা পাওয়ার কথা থাকলেও তা পাচ্ছেন না।

জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের সামনে দেওয়ালে টাঙানো রয়েছে কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস বোর্ড। বোর্ডে কোনো তথ্য হালনাগাদ করা নেই। জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য নিচে ডানপাশে কৃষি কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বর থাকার কথা থাকলেও সেখানে কোনো মোবাইল নম্বর উল্লেখ নেই।

কৃষকরা জানান, স্থাপনের পর থেকে ইউনিয়ন পরিষদের আবহাওয়া বোর্ডের চাকা একদিনও ঘোরেনি। এখান থেকে কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি। প্রতি বছর ফসলের ক্ষতি হলেও এ বোর্ড কোনো কাজে আসছে না। ফলে সরকারের এ প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এতে করে একদিকে যেমন কৃষকরা এ প্রকল্পের সুফল পাচ্ছেন না অন্যদিকে নষ্ট হতে চলেছে সরকারের অর্থ। স্থাপিত বোর্ডগুলো সংস্কার করে দ্রুত তথ্য হালনাগাদ করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

চিলাউড়া ইউনিয়ন কৃষক জায়েদ মিয়া বলেন, ঝড়-বৃষ্টিতে প্রতি বছরই ফসলের অনেক ক্ষতি হয়। কিন্তু পরিষদ থেকে আগাম কোনো তথ্য পাই না। আগাম তথ্য পেলে আগে থেকেই সতর্ক হওয়া যেত।

মিরপুর ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন- আমার ইউনিয়নে এই বোর্ড শুরু থেকে নষ্ট তাই আবহাওয়া বার্তা প্রতিদিন আপডেট করা যাচ্ছে না।

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, তাপমাত্রার যন্ত্রপাতি গুলা নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা অনেক লেখালেখি করেছি, আশা করি সমাধান হবে।

সিলেট ভয়েস/এএইচএম