জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন: চলছে অন্তহীন হিসাব-নিকাশ

আগামী ১৮ মে জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। আর এ নির্বাচনকে সামনে রেখে উপজেলাজুড়ে চলছে নানা আলোচনা আর প্রার্থীতার হিসাব-নিকাশ।

বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি লোকমান উদ্দিন চৌধুরীর আগামী নির্বাচনেও প্রার্থী হওয়া অনেকটা সুনিশ্চিত।

তবে তার সাথে নতুন মুখ কে কে আসছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, সেটাই এখন জকিগঞ্জের নির্বাচনী মাঠের প্রধান আলোচ্য বিষয়।

নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে অংশ না নিলেও দলের পরোক্ষ সমর্থন কেউ পাচ্ছেন কী না, তা নিয়েও চলছে নানা গুঞ্জন।

উপজেলা আওয়ামীলীগের তিনটি ধারা

জকিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ এখন মূলত তিনটি ধারায় বিভক্ত। এর নেপথ্যে আছেন হাফিজ আহমদ মজুমদার, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ এবং সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আহমদ আল কবির।

এর মধ্যে হাফিজ আহমদ মজুমদার আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য, মাসুক উদ্দিন আহমদ বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও ড. আহমদ আল কবির বিগত নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী।

হাফিজ আহমদ মজুমদার সমর্থিত গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি লোকমান উদ্দিন চৌধুরী এবং আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে তিনি এই গ্রুপের পরোক্ষ সমর্থন পাচ্ছেন।

“চেয়ারম্যান হিসেবে সাধ্যমতো চেষ্টা
করেছি মানুষের কল্যাণে কাজ করতে।

আগামীতে নির্বাচিত হলে অসমাপ্ত
কাজ সমাপ্ত করবো”।

– লোকমান উদ্দিন চৌধুরী,
বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান

ড. আহমদ আল কবির গ্রুপ থেকে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শামীম আহমদ কিংবা ড. আহমদ আল কবিরের ছোট ছোট ড. আহমদ আল ওয়ালী প্রার্থী হতে পারে বলে আলোচনা হচ্ছে।

তবে মাসুক উদ্দিন আহমদ গ্রুপ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী কে হতে পারেন তা এখনো স্পষ্ট হয়নি।

আরো যারা আলোচনায়

অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও রমনা থানা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল মনির চৌধুরী।

এছাড়াও সিলেট জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ তাপাদার, জাতীয় যুব সংহতির সিলেট জেলা সভাপতি মর্তুজা আহমদ চৌধুরী, জাতীয় পার্টির নেতা অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক, জাতীয় পার্টির নেতা আব্দুস শুকুর।

“আমি যখন চেয়ারম্যান ছিলাম
সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি।

আমার সমর্থক ও শুভার্থীরা আমাকে
নির্বাচন করতে পরামর্শ দিচ্ছেন”

– ইকবাল আহমদ তাপাদার,
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান

উপজেলা জামায়াতের আমির ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম রুকবানী চৌধুরী জাবেদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা বিলাল আহমদ ইমরান, কসকনকপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত আব্দুল মন্নান লস্কর ছেলে ফারুক আহমদ লস্কর প্রার্থী হচ্ছেন বলে জানা যাচ্ছে।

ধর্মীয় সংগঠনভিত্তিক প্রার্থীতার প্রভাব

ভোটের মাঠে আলোচনায় রয়েছেন জকিগঞ্জ উপজেলা কওমী মাদাসা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও জকিগঞ্জ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবুল হাসান। মুফতি আবুল হাসানের মামা প্রয়াত মাওলানা উবায়দুল হক উজিরপুরী সংসদ সদস্য ছিলেন।

ধর্মীয় নেতা হিসাবে জকিগঞ্জে মুফতি আবুল হাসানের আলাদা ইমেজ রয়েছে আর এই ইমেজকে কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষকে মাঠে মোকাবেলা করতে চায় লোকমান বিরোধী পক্ষ।

“নির্বাচন করার জন্য আমাকে
অনেকে উৎসাহ দিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত কিছু ভাবিনি”।

– মুফতি আবুল হাসান

বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান লোকমান উদ্দিন চৌধুরী সাবেক সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদারের ঘনিষ্টজন হিসাবে উপজেলা জুড়ে উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছেন। তৃণমূল পর্যায়ে দলেও রয়েছে তার গ্রহণযোগ্যতা।

বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থীতা করে বিজয়ী বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ-এর চেয়ারম্যান মাওলানা হুসাম উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলীর সমর্থিত কোন প্রার্থী আলোচনায় নেই। তবে এই সংঠনের সমর্থকদের সমর্থন লোকমান উদ্দিন চৌধুরী পেতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে।

তাছাড়া জকিগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোটও নির্বাচনে প্রভাব ফেলে এবং এই সমর্থন শেষ পর্যন্ত কার কাছে যাবে তা নিয়েও চলছে আলোচনা।

যা বলছেন প্রার্থীরা

বর্তমান চেয়ারম্যান লোকমান উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘চেয়ারম্যান হিসেবে সাধ্য মতো চেষ্টা করেছি মানুষের কল্যাণে কাজ করতে। আগামীতে নির্বাচিত হলে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করবো’।

মুফতি আবুল হাসান বলেন, ‘নির্বাচন করার জন্য আমাকে অনেকে উৎসাহ দিচ্ছেন, এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত কিছু ভাবিনি’।

সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ বলেন, ‘আমি যখন চেয়ারম্যান ছিলাম সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। আমার সমর্থক ও শুভার্থীরা আমাকে নির্বাচন করতে পরামর্শ দিচ্ছেন’।

বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে লোকমান উদ্দিন চৌধুরী নৌকা প্রতীকে ৪৮ হাজার ২৩৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। তার নিকট নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মরতুজা আহমদ লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছিলেন ১১ হাজার ৩৫২ ভোট।

বর্তমানে জকিগঞ্জে প্রায় ১ লক্ষ ৯০ হাজার ভোটার রয়েছেন।