সিলেটের গোলাপগঞ্জের ‘গোয়ালগাদ্দা’ শিম স্থানীয় মানুষের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। বিদেশে রপ্তানি হওয়ার ফলে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়ে থাকে। নিজস্ব খরচে যুগ যুগ ধরে স্থানীয় কৃষকরা শিম চাষ করে আসছেন। প্রতি বছর বাম্পার ফলন হলেও সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পাননা তারা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন লক্ষণাবন্দ, লক্ষীপাশা ও ফুলবাড়ি ইউনিয়নে গোয়ালগাদ্দা শিমের চাষ হয়ে থাকে। চলতি বছর ৫৫৫ হেক্টর জমিতে ‘গোয়ালগাদ্দা’ শিম চাষ হয়েছে। আগামী বছর ৬০০ হেক্টর জমিতে ‘গোয়ালগাদ্দা’ শিমের চাষ উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। চলতি বছর ৮৫ মেট্রিক টন শিম উৎপাদন হবে বলে আশা করছে উপজেলা কৃষি অফিস।
আরও জানা যায়, বিশ্বের প্রায় ১৩টি দেশে গোলাপগঞ্জের ‘গোয়ালগাদ্দা’ শিম রপ্তানি হয়ে থাকে। যুক্তরাজ্য, ইতালি, কানাডাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এ শিম রপ্তানি হয়। ‘গোয়ালগাদ্দা’ শিমের সাথে স্থানীয় তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ৪৫০টি পরিবার জড়িত রয়েছে। যাদের বেশিরভাগ পরিবার এ শিমের ওপর নির্ভরশীল। এই শিমের চাষ করে প্রতি মৌসুমে একেকটি পরিবার ৫-৬ লাখ টাকা আয় করে বলে জানা যায়।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, ‘গোয়ালগাদ্দা’ শিমের বীজ এই তিনটি ইউনিয়ন ছাড়া অন্য কোনো এলাকায় নিয়ে রোপণ করলে ফলন তেমন ভালো হয় না।
সরেজমিনে উপজেলার লক্ষণাবন্দ ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে চারিদিকে দু’চোখ ভুলিয়ে নয়নাভিরাম ‘গোয়ালগাদ্দা’ শিমের ক্ষেত দেখতে পাওয়া যায়। স্থানীয় পুরকায়স্থবাজার ও চৌধুরীবাজারে হাটের দিন শিম বেচা-কেনা হয়ে থাকে। কৃষকরা ক্ষেত থেকে শিম আহরণ করে কাঁধে-ভারে নিয়ে ঠেলাগাড়ি বা ভ্যানগাড়ি দিয়ে শিম বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে যান। কেউ কেউ আবার ক্ষেতে থাকা অবস্থায় ব্যবসায়ীদের কাছে শিম বিক্রি করে দেন। অনেক সময় দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে শিমের জন্য ট্রাক, লরি, টেম্পু, ভ্যানগাড়ি নিয়ে ব্যবসায়ীরা বাজারে ভিড় জমান। সেখান থেকে ব্যবসায়ীরা ৩৪-৩৬ টাকা ধরে শিম কিনে নিয়ে যান। স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে এ শিম ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আলন আহমদ নামে এক ব্যবসায়ী জানান, প্রতি হাটে তিনি এখান থেকে শিম কিনে নিয়ে যান। এরপর তিনি এজেন্সির মাধ্যমে শিম ঢাকায় পাঠান। সেখান থেকে শিমগুলো দেশের বাইরে রপ্তানি হয়।
স্থানীয় নিজ ঢাকাদক্ষিণের মাদাখাপড়া গ্রামের কৃষক মো. সাদিক মিয়া (৩৭) জানান, তিনি এ বছর ৯০ শতক জমিতে শিম চাষ করেছেন। সবমিলিয়ে তার খরচ হয়েছে লক্ষাধিক টাকা। একেবারে শেষে তিনি আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন।
নিজ ঢাকাদক্ষিণের বিদাইটিকর গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন (৪৫) জানান, চলতি বছর ১৮০ শতক জমিতে শিম চাষ করছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত খরচ বাদে তিন লক্ষাধিক টাকার মতো লাভ করতে পারবেন।
অনেক কৃষক জানান, প্রতি বছর তারা নিজস্ব খরচে শিম চাষ করে থাকেন। সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পান না তারা। যদি সরকারিভাবে সহযোগিতা পান, তাহলে এর উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করতে পারবেন বলে তারা আশাবাদী।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাশরেফুল আলম বলেন, চলতি বছর ৫৫৫ হেক্টর জমিতে ‘গোয়ালগাদ্দা’ শিম চাষ হয়েছে। আগামী বছর ৬০০ হেক্টর জমিতে ‘গোয়ালগাদ্দা’ শিমের চাষ উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। চলতি বছর ৮৫ মেট্রিক টন শিম উৎপাদন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আমরা সবসময় কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করে আসছি। শিমের ফলন বৃদ্ধিতে সরকারিভাবে যাতে তাদেরকে সহযোগিতা করা যায় সেজন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।