কোরবানির ঈদের মৌসুমি ব্যবসা

ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাজার, পাড়া-মহল্লায় জমে উঠেছে গরুর খাবারসহ কোরবানির আনুসাঙ্গিক সরঞ্জামের মৌসুমি ব্যবসা। শহরের প্রতিটি এলাকায় দেখা মিলছে খড়, ভুসি, ঘাসসহ পশুর খাবার। পাশাপাশি পাওয়া যাচ্ছে মাংস কাটার খাট্টা ও পাটি। এছাড়াও স্থানীয় ছোট-বড় কামারখানায় ব্যস্ততা বেড়েছে ছুরি-বটি তৈরির কারিগরদের। বিভিন্ন রকমের ছুরি সাজানো রয়েছে বাজারগুলোতে। ঈদকে কেন্দ্র করে লাভের পাশাপাশি আনন্দ নিয়ে এসব মৌসুমি ব্যবসা করেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

কাওরান বাজারে চৌকি (খাট) ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘আমার মূল ব্যবসা চৌকি তৈরি আর বিক্রি করা। ঈদুল আজহা এলেই মাংস কাটার খাট্টা আর পাটি নিয়ে বসি। এবার তিন লাখ টাকার মাল নিয়ে বসেছি।’
কোরবানির ঈদের মৌসুমি ব্যবসা

অল্প সময়ের এই ব্যবসায় কতটুকু লাভ থাকে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এ ব্যবসায় ভাগ্য ভালো হলে লাভ থাকে প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আবার লোকসান হলে প্রায় ১০-১৫ হাজার টাকা লোকসান হয়।‌’ অবিক্রিত খাট্টা পরে লাকড়ি হিসেবে বিক্রি করেন বলে জানান মোহম্মদ ইসমাইল।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, তেঁতুল কাঠে তৈরি খাট্টা সাইজ অনুযায়ী ৩০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আর তালের পাটি ১০০ থেকে ২০০ টাকায়।

গাবতলী হাটে খড় নিয়ে আসা ব্যবসায়ী শহিদুল জানান, রাজশাহী থেকে ভাড়াসহ ৭০ হাজার টাকায় এক ট্রাক খড় এনেছেন তিনি। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করবেন। তারা সেগুলো এক মুঠো ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করেন। অনেক খামারি কোরবানির পশু আনার ট্রাকেই খড়-ঘাস নিয়ে আসেন। ময়মনসিংহ থেকে বাণিজ্যিকভাবে কাঁঠাল পাতাও আনা হয়েছে।
কোরবানির ঈদের মৌসুমি ব্যবসা

গাবতলি হাটে ব্রিজের নিচে কেউ কেউ কাঁচা ঘাস নিয়ে বসে আছেন। ঘাসগুলো মানিকগঞ্জ ও সাভার অঞ্চল থেকে আনা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে এক মুঠো ২০ টাকায় বিক্রি হয়। অনেকটা বিনা পুঁজিতেই লাভ করছেন এসব কাঁচা ঘাস ব্যবসায়ীরা। শুধু ঘাসগুলো সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তবে এখন আর খোলা মাঠ নেই। তাই ঘাসও কম বলে আক্ষেপ করেন ব্যবসায়ী সোহেল। বছরের অন্যান্য সময় ছুটা কাজ করলেও ঈদে তিনি সাভার থেকে ঘাস নিয়ে আসছেন। দিনের ঘাস দিনেই বিক্রি করে চলে যান।

ঘাস-খড় ছাড়াও স্থানীয় এলাকা ও বাজারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশুর অন্যান্য খাবার। ভুসি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। এর মধ্যে রয়েছে গমের ভুসি, ডাবলির খোসার ভুসি, মুগ ডালের ভুসি। ধানের কুঁড়া ৪০ টাকা। আর সব কিছুর মিক্সড ৬০ টাকা কেজি। এছাড়াও খাইট্টা পাওয়া যাচ্ছে ১৫০-৩০০ টাকা কেজিতে।

ছুরি-চাপাতির চাহিদা বেড়েছে

কোরবানির গরু কেনার পর ঈদের দিন বড় দায়িত্ব থাকে পশুর মাংস কেটে বণ্টন করার। আর তার জন্য প্রয়োজন চাকু-ছুরি। তাই ঈদের আগের রাতেই পুরনো সরঞ্জাম শান দিতে অনেকে ব্যস্ত থাকেন। অনেকে আবার নতুন করে কেনেন। ক্রেতার সেই চাহিদা পূরণে ব্যস্ততা বেড়েছে কামারের দোকানে। কাওরান বাজারে চাকু-ছুরির ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের দুই দিন আগ থেকে বিক্রি বাড়ে তাদের।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের ছুরি বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এগুলো মূলত কেজি দরে বিক্রি হয়। কোনও কোনও ধরনের ছুরি পিচ হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। দেশি লোহার তৈরি ছুরি-চাপাতির পাশাপাশি চায়না ছুরিও বাজারে দেখা যায়। দেশি ছুরিগুলো রেলের বা গাড়ির স্প্রিং এই দুই ধরনের লোহা দিয়ে তৈরি। দামে এবং শানেও রয়েছে ভিন্নতা। কেজি হিসেবে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে। খুচরা কিনলে ৮০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।