কানাইঘাটে গণধর্ষণ : আদালতে ২ আসামির স্বীকারোক্তি

সিলেটের কানাইঘাটে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে অবুঝ শিশু সন্তানের সামনে ১৬ বছরের এক নারীকে গণধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে।

মঙ্গলবার (৩০ মে) গ্রেপ্তারকৃত ৫ আসামিকে আদালতে সোপর্দ করা হলে গণধর্ষণের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে ১৬১ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে ধর্ষক হেলাল ও ফরহাদ। এরপর আসামিদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।

এর আগে রবিবার রাতে ঘটনার পরদিন ধর্ষণের শিকার নারী বাদী হয়ে কানাইঘাট থানায় ৭/৯(৩)/৩০ ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী/০৩) ধারায় গণধর্ষণ মামলা করেন। থানার মামলা নং- ২২, তারিখ- ২৯/০৫/২০২৩ইং।

প্রাথমিকভাবে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামিগণ গণধর্ষণ এবং ধর্ষণে সহযোগিতার কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম দস্তগীর আহমেদ।

ভিকটিম সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওসিসি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সন্তানের মা ভিকটিমের বাড়ি উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের সোনাতনপুঞ্জি (বিলেরপাড়) গ্রামে। বাল্য বয়সে তার বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী বিয়ানীবাজার উপজেলায়। বিয়ের পর থেকে স্বামী মিছবাহ উদ্দিন প্রায়ই তাকে নির্যাতন করত। নির্যাতন সইতে না পারে সম্প্রতি বিয়ানীবাজার থেকে কানাইঘাট উপজেলায় তার স্বজনদের কাছে চলে আসেন ভিকটিম। পরিবার থেকেও নানা কারণে একপ্রকার বিচ্ছিহ্ন ছিলেন ভিকটিম ওই নারী।

আরও জানা যায়, কানাইঘাট পৌরসভার নন্দিরাই গ্রামের আলা উদ্দিনের পুত্র দুদু মিয়ার সাথে পূর্ব থেকে ভিকটিমের পরিচয় ছিল। আনুমানিক ২০ দিন পূর্বে গ্রেপ্তারকৃত আসামি দুদু মিয়ার সাথে কানাইঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভিকটিমের পরিচয় হয়। সেই সুবাদে দুদু মিয়ার সাথে ওই নারীর প্রায়ই ফোনে কথাবার্তা হতো। ভিকটিমের ৯ মাসের শিশু কন্যা অসুস্থ হলে দুদু মিয়া তাকে পার্শ্ববর্তী জকিগঞ্জ উপজেলার ফুটিজুরি গ্রামের এক কবিরাজের কাছে নিয়া যেতে বলে। পরবর্তীতে মেয়ের চিকিৎসার নাম করে রবিবার বিকাল ৩টার দিকে দুদু মিয়া ভিকটিমকে তার বাড়ী থেকে নিয়ে যায়। কিন্তু কবিরাজের কাছে না নিয়ে কৌশলে ফুসলিয়ে দুদু মিয়া কানাইঘাটের বীরদল বাজার এলাকায় ওই নারীকে নিয়ে ঘুরতে থাকে।

রাত সাড়ে ১০ টার দিকে বীরদল বাজারে থাকা লোকজনের সন্দেহ হয়। এতে দুদু মিয়ার ফোনে তার সহযোগী আব্দুল করিম বীরদল বাজারে চলে আসে এবং তারা ওই নারীকে কৌশলে মোটর সাইকেল যোগে বীরদল খালোমুরা বাজারে নিয়ে যায়। এতে স্থানীয় কিছু লোকজনের সন্দেহ হলে তাদের আটক করেন। পরে রাত ১১টার দিকে স্থানীয় লোকজন কানাইঘাট বাজারে নিরাপদে নিয়ে যাওয়ার জন্য জুবের আহমদের রিক্শায় তুলে দেওয়া হয়। এসময় ভিকটিমের পিছু নেয় দুদু মিয়া ও আব্দুল করিম। একপর্যায় পুরানফৌদ কবরস্থানের সামনে ভিকটিমের রিকশা আসা মাত্রই হেলাল আহমদ ও ফরহাদ আহমদ রিকশার গথিরোধ করে এবং তাকে পুরানফৌদ গ্রামের পিপি হাবিব আলীর নির্জন পুকুরঘাটে তুলে নিয়ে যায়। সেখানে তার হেলাল ও ফরহাদ ভিকটিমের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এতে ভিকটিমের প্রচুর রক্তপাত হয়। তখন গণধর্ষণের সাথে জড়িতরা পালিয়ে গেলে ধর্ষিতার আর্তচিৎকারে স্থানীয় লোকজন এসে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে ধর্ষিতাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

পরে পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে স্থানীয়দের সহায়তায় সোমবার দিনভর অভিযান চালিয়ে গণধর্ষণের সাথে জড়িতসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার পাঁচজন হলো, উপজেলার নন্দিরাই গ্রামের আলাউদ্দিনের পুত্র দুদু মিয়া (৩৬), বীরদল ভাড়ারীফৌদ গ্রামের মৃত মঈন উদ্দিনের পুত্র হেলাল আহমদ (৩৮), বড়দেশ সরদারী পাড়া গ্রামের বিলাল আহমদের পুত্র ফরহাদ (৩৫), বীরদল আগফৌদ গ্রামের খলিলুর রহমানের পুত্র আব্দুল করিম ও বীরদল ছোটফৌদ গ্রামের হবিব আলীর পুত্র জুবের আহমদ (২৪)।

এদিকে ভিকটিম নারী সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওসিসি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।