এক নজরে সিলেটের ৬টি আসন

দেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তবর্তী সিলেট জেলায় মোট নির্বাচনী আসন ৬টি। ৩,৪৫২.০৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ প্রশাসনিক জেলায় উপজেলার সংখ্যা ১৩টি, ৪টি পৌরসভা ও ১০৬ টি ইউনিয়ন রয়েছে। জেলায় সর্বমোট ভোটার সংখ্যা ২৭ লাখ ১৩ হাজার ৫০৬ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৩ লাখ ৯১ হাজার ২৪১ জন। নারী ভোটার সংখ্যা ১৩ লাখ ২২ হাজার ২৫৫ জন। এছাড়াও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ১০ জন।

সিলেট সদর উপজেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকা নিয়ে গঠিত সিলেট-১ আসন। মর্যাদাপূর্ণ এ আসনটিতে এখন পর্যন্ত যে দল নির্বাচিত হয়েছে তারাই সরকার গঠন করেছে। তাই এই আসনটি আলাদা গুরুত্ব বহন করে। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৬ লাখ ১৪ হাজার ২১ জন। যার মধ্যে পুরুষ ৩ লাখ ৩০ হাজার ৮৩৩জন, নারী ৩ লাখ ৩ হাজার ১৮১ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৭ জন। এ আসনটিতে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এর আগে এই আসনে ১৯৯১ সালে বিএনপির খন্দকার আব্দুল মালিক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে জয়লাভ করেন প্রয়াত স্পিকার আওয়ামী লীগের হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী। ২০০১ সালের অষ্টম সংসদে এ আসনে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে হারিয়ে বিএনপির এম সাইফুর রহমান জয়লাভ করেন। ২০০৮ সালের নবম সংসদে এ আসন থেকে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের আবুল মাল আবদুল মুহিত। ২০১৪ সালেও জয়ের ধারা অব্যাহত রাখেন প্রয়াত এই অর্থমন্ত্রী।

সিলেট জেলার বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর উপজেলা নিয়ে সংসদের ২৩০ নং আসনটি হলো সিলেট-২। আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৭৪০ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৬ হাজার ১৫৪ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫৮৬ জন। এই আসনে বর্তমানে সংসদ সদস্য গণফোরামের এম মোকাব্বির খান। এর আগে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির আব্দুল আজিজ লামা ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের শাহ আজিজুর রহমান। ২০০১ সালে আসনটিতে বিএনপির জনপ্রিয় নেতা এম ইলিয়াস আলী নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ইলিয়াস আলীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য হন আওয়ামী লীগের শফিকুর রহমান চৌধুরী। ২০১৪ সালে আসনটি জোট সঙ্গী জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। সেবার বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় জয়লাভ করেন মো. ইয়াহইয়া চৌধুরী।

জেলার দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে সিলেট-৩ আসন। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৩৫২ জন। যার মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৯৬ হাজার ৪২ জন ও নারী ১ লাখ ৯০ হাজার ৩০৯ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ১ জন। আসনটিতে বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব। এর আগে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে আসনটির সংসদ সদস্য ছিলেন জাতীয় পার্টির আব্দুল মুকিত খান। ২০০১ সালে আসনটিতে বিএনপির শফি আহমেদ চৌধুরী জয়লাভ করেন। এরপরে ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে টানা ৩ বার এ আসনে জয়লাভ করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। ২০২০ সালে করোনাক্রান্ত হয়ে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী মৃত্যুবরণ করলে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাবিুর রহমান জয়লাভ করেন।

জৈন্তাপুর, কোম্পানিগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৪। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৭৫ হাজার ১২০ জন। যার মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৬ হাজার ১০৯ জন, নারী ২ লাখ ২৯ হাজার ১০ জন ও তৃতী লিঙ্গের ১ জন। আসনটিতে গত তিনটি নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের ইমরান আহমদ। এর আগে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালেও নৌকা প্রতীকে জয়লাভ করেন বর্তমান সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী ইমরান আহমদ। তবে ইমরানের দুর্গে ২০০১ সালে বিএনপি থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন দিলদার হোসেন সেলিম।

সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলা নিয়ে গঠিত নির্বাচনী আসন সিলেট-৫। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১ হাজার ৯৫১ জন। যার মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৬ হাজার ৫৪৫ জন ও নারী ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩০৬ জন। এই আসনে বর্তমানে সংসদ আওয়ামী লীগের হাফিজ আহমদ মজুমদার। ১৯৯১ সালে এই আসনে ইসলামি ঐক্যজোটের মাওলানা ওবায়দুল হক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেলেন। ১৯৯৬ আসনটি পুনরুদ্ধার করেন আওয়ামী লীগের হাফিজ আহমদ মজুমদার। ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটের পক্ষে মনোনয়ন পেয়ে জামায়াত নেতা ফরিদ উদ্দিন উদ্দিন আহমদ এই আসনটিতে জয়লাভ করেন। ২০০৮ সালে আবারো নির্বাচিত হন হাফিজ আহমদ মজুমদার। তবে ২০১৪ সালে আসনটি মহাজোট শরিক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিলে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন।

সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলা নিয়ে নির্বাচনী আসন সিলেট-৬। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৭১ হাজার ৩২২ জন। যার মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৩৬ হাজার ৪৫৮, নারী ২ লাখ ৩৪ হাজার ৮৬৩ ও তৃতীয় লিঙ্গের এক জন। আসনটিতে ১৯৯১ সালে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন শরফ উদ্দিন খসরু। এরপর ১৯৯৬ সালে আসনটিতে আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম নাহিদ নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ড. মকবুল হোসেন লেচু মিয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম নাহিদকে পরাজিত করেন। ২০০৮ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি পুনরুদ্ধার করেন নাহিদ। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও জয়ী হন আওয়ামী লীগের সাবেক এ শিক্ষামন্ত্রী।