এশিয়া কাপে নিজেদের টিকিয়ে রাখার ম্যাচে আফগানদের উড়িয়ে দিয়ে ৮৯ রানের বড় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। একই সাথে সুপার ফোর নিশ্চিত করেছে সাকিব বাহিনী।
স্কোরবোর্ড অনুযায়ী আফগানিস্তানের দরকার ছিল ৩৩৫ রান। আর বাংলাদেশের জন্য লক্ষ্য ছিল ২৭৯ রানেই অলআউট করা। ৩৩৪ রানের বড় সংগ্রহের পর সমীকরণ ছিল সহজ। এশিয়া কাপের সুপার ফোরে যেতে হলে বাংলাদেশকে জিততে হবে ৫৫ কিংবা তারচেয়ে বেশি রানের ব্যবধানে। হাতের নাগাল থেকে প্রায় ছুটে যাওয়া ম্যাচে সেই কাজটাই মনে হচ্ছিল অসম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশ ম্যাচে ফিরেছে। বড় ব্যবধানের জয় নিশ্চিত করেছে সুপার ফোরের অংশগ্রহণ।
ম্যাচটা যখনই হাতের নাগালে মনে হচ্ছিল, তখনই যেন বাংলাদেশকে এক পশলা স্বস্তি এনে দিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা নাজিবুল্লাহ জাদরানকে ফিরিয়েছেন এই স্পিনার। এরপর শরীফুলের বলে মুশফিকের দুর্দান্ত ক্যাচে সাজঘরে ফিরেছেন হাশমতউল্লাহ শহিদী। এই দুই উইকেটের পর বাংলাদেশকে খুব একটা ভাবতে হয়নি। আফগানদের মিডল অর্ডার আর লোয়ার অর্ডার গুড়িয়ে দিয়েছে দ্রুতই। জয় এসেছে ৮৯রানে।
অথচ আফগানদের শুরুটা ছিল একেবারেই মন্থর। দ্বিতীয় ওভারেই বিপজ্জনক রাহমানউল্লাহ গুরবাজকে ফিরিয়ে দেন শরীফুল ইসলাম। রিভিউ নিয়েও পার পাওয়া হয়নি তার। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে এসেছে ৭৮ রান। রহমত শাহ আর ইব্রাহিম জাদরান আফগানদের রেখেছেন জয়ের পথেই।
চিন্তায় ফেলে দেওয়া জুটি ভেঙেছেন তাসকিন আহমেদ। রহমতকে ফিরিয়েছেন তিনি সরাসরি বোল্ডে। এরপর অবশ্য স্বস্তি আসেনি। আরও একটা বড় জুটি হতাশ করেছে টাইগার বোলারদের। জাদরান এবং অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদীর জুটি থেকে এসেছে ৫২ রান।
১৯৩ রানে মিরাজের বলে বোল্ড হয়ে সুবাদে নাজিবুল্লাহ জাদরান। ফেরার আগে খেলেছেন ৭৪ বলে ৭৫ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। এরপরেই মূলত ধ্বস নেমেছে আফগান ইনিংসে। তিন রান পরেই উইকেটের পেছনে মুশফিকের দুর্দান্ত ক্যাচের সুবাদে সাজঘরে শহিদি। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৫১ রান।
২১২ রানে গুলবাদিন নাইব ফিরেছেন শরীফুলের আরও এক দুর্দান্ত ডেলিভারির সুবাদে। পরের দুই ওভারে এসেছে আরও দুই উইকেট। মোহাম্মদ নবী ফিরেছেন তাসকিনের বলে। আর করিম জানাত ফিরেছেন রান উইকেটের শিকার হয়ে।
ম্যাচের ৪৫ তম ওভারে দুই উইকেটে আফগানদের ইনিংস শেষ করেছেন তাসকিন। ছয় মারতে গিয়ে হিট উইকেটে আউট হন মুজিব উর রহমান। আর সাকিবকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন রশিদ খান। ২৪৫ রানেই থেমেছে আফগানদের ইনিংস।
এর আগে মেহেদি হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্তর জোড়া সেঞ্চুরিতে ৫ উইকেটে ৩৩৪ রান করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এশিয়া কাপের ইতিহাসে এটিই বাংলাদেশের দলীয় সর্বোচ্চ রান।
রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে রানের পাহাড় গড়ার দিনে দলের হয়ে ১১৯ বলে ৭টি চার আর ৩টি ছক্কার সাহায্যে দলীয় সর্বোচ্চ ১১২ রান করেন মিরাজ। এরপর হাতে চোট পেয়ে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফেরেন তিনি। আর ১০৫ বলে ৮টি চার আর ২টি ছক্কার সাহায্যে ১০৪ রান করে রান আউট হন নাজমুল হোসেন শান্ত।
নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে হেরে গ্রুপর্ব থেকেই ছিটকে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে টাইগাররা। সুপার ফোরের লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে আজ বাংলাদেশকে জিততেই হবে।
এমন কঠিন সমীকরণের ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে উড়ন্ত সূচনা করে বাংলাদেশ। ওপেনার মোহাম্মদ নাইম শেখের সঙ্গে ৬০ বলে ৬০ রানের জুটি গড়েন মেহেদি হাসান মিরাজ।
এরপর মাত্র ৩ রানের ব্যবধানে ২ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। ৩২ বলে ২৮ আর ২ বলে শূন্য রানে ফেরেন নাইম শেখ ও তাওহিদ হৃদয়।
তৃতীয় উইকেটে দলের হাল ধরেন মিরাজ-শান্ত। এই জুটিতে তারা ১৯০ বলে ১৯৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন।
দলীয় ২৫৭ রানে মিরাজ সেঞ্চুরির পর হাতে চোট পেয়ে সাজঘরে ফেরেন। সেঞ্চুরি করার পর দলীয় ২৭৮ রানে রান আউট হয়ে ফেরেন শান্ত। শেষ দিকে সাকিব আল হাসানের ১৮ বলের ৩২ রানের ঝড়ো ইনিংসের সুবাদে ৫০ ওভারে ৩৩৪ রান করে বাংলাদেশ।