আড়াই’শ নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করতে পারে বিএনপি

দলকে গুছিয়ে শক্তিশালী করতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে বিএনপি। এরই অংশ হিসাবে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কৃত দুই শতাধিক নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ইতোমধ্যে তারা ভুল স্বীকার করে কেন্দ্রীয় দপ্তরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেছেন।

বিএনপির দপ্তর সূত্রে জানা যায়, দলীয় শৃঙ্খলা অমান্য করায় বিগত সময়ে বহিষ্কার হয়েছেন অসংখ্য নেতাকর্মী। দল থেকে বহিষ্কার হলেও তাদের অনেকেই বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের মধ্যে একজন মেয়রসহ অন্তত ২৫০ জনের অধিক ক্ষমা চেয়ে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে আবেদনগুলো পুনর্বিবেচনা করা হবে বলে জানান বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা।

বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির বিভিন্ন স্তরের বেশকিছু নেতা হাইকমান্ডের কাছে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে ছিলেন। দলের বাইরে গিয়ে সরকারের সঙ্গে আঁতাত, জোট বেঁধে ব্যবসা ও দলীয় কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ ছিল অনেকের বিরুদ্ধে। আসন্ন নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ নিয়ে ছিল নানা গুঞ্জন। দলের ক্ষুব্ধ ও বঞ্চিত নেতাদের নিয়েও ছিল কৌতূহল। নানামুখী চাপ।

সরকারদলীয় নেতাদের বক্তব্যে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিয়েছিল। সবকিছুর অবসান ঘটে ৩০ নভেম্বর বিকাল ৫টায়। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ মুহূর্তেও অংশ নেয়নি বিএনপির সন্দেহভাজন প্রভাবশালী, ত্যাগী ও পদবঞ্চিতরা। এতে স্বস্তিতে বিএনপি। রাজনৈতিক সংকট ও দলের দুর্দিনে সরকারের ফাঁদে পা না দেওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন নীতিনির্ধারকরা। আসন্ন নির্বাচন বয়কট করে সন্দেহভাজন নেতারা দলীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

আগামীতে এসব ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়নের আশ্বাসও দিয়েছেন হাইকমান্ড। একই সঙ্গে দলের কোণঠাসা নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে বিএনপি।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, এতদিন দলের শীর্ষ নেতাকে ভুল বুঝিয়ে যেসব সিনিয়র নেতাকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে, সাইড লাইনে বসিয়ে রাখা হয়েছে, রাগে-ক্ষোভে, দুঃখে যারা এতদিন নিষ্ক্রিয় ছিলেন, তাদের টার্গেট করেও সরকার ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে দলের মধ্যে ঘাঁপটি মেরে থাকা সিন্ডিকেটের মুখোশও এবার উন্মোচিত হয়েছে। এতদিন তাদের দেওয়া তথ্যকে ভুল প্রমাণিত করে এসব অভিজ্ঞ ও ত্যাগীরা দল ছাড়েননি। বিএনপি হাইকমান্ডের জন্য এটা অনেক বড় পুরস্কার। তারা দলকে ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করতে পেরেছেন। এসব অভিমানী নেতা এখন রাজপথে সক্রিয়।

নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক সদস্য বলেন, বিএনপি সুসংগঠিত দল। বিভিন্ন সময়ে দলের প্রয়োজনে অনেকেই পদ-পদবির বাইরে রাখা হয়েছে। অনেকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে বহিষ্কার হয়েছেন। তবুও দলের প্রতি তাদের ভালোবাসা কমেনি। প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে তারা দলকে সুসংগঠিত রাখতে কাজ করেছেন। এ নির্বাচনে তারা তার প্রমাণ দিয়েছেন। দলীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাদের অবশ্যই মূল্যায়ন করা হবে। তাদের সঙ্গে বিএনপি হাইকমান্ড বিভিন্ন মাধ্যমে যোগযোগ রাখছেন। গতিবিধি পর্যবেক্ষণে রাখছেন।