অবহেলায় ধ্বংসের পথে জগন্নাথপুরের শহিদ মিনার

অবহেলায় ধ্বংস হচ্ছে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারটি। জগন্নাথপুরের শহীদ মিনারটি শুধু দেশের শিক্ষার ইতিহাসেই নয়, জাতির ইতিহাসেরও এক অনন্য অধ্যায়। ’৫২ সালের ভাষা শহিদদের স্মরণে নির্মিত এ শহিদ মিনার ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের সাক্ষী।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জগন্নাথপুর শহিদ মিনার। বর্তমানে এই শহিদ মিনারটি ক্ষত-বিক্ষত। চারদিকে অসংখ্য ফাটল আর পেছনের দিকে খানিকটা নুয়ে কোনোমতে দাঁড়িয়ে আছে শহিদ মিনারটি।

ভাষা শহিদদের স্মরণে নির্মিত শহিদ মিনার বাঙালি জাতির হৃদয়ে রক্তক্ষরণের নাম। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য রক্ত দিয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। দেশের জন্য, নিজের ভাষার জন্য জীবন দেয়া শহীদদের স্মরণে রাখতে ও সম্মান জানাতে নির্মিত হয় জগন্নাথপুরের শহিদ মিনারটি। মায়ের ভাষার প্রতি ভালোবাসার এই নিদর্শন যখন অবহেলিত হয়, খাঁটি বাঙালির মনে তা দাগ কাটে। লুণ্ঠিত হয় স্বাধীনতার চেতনা।

২০১৮ সালে জেলা পরিষদ পুরাতন শহিদ মিনারটি ভেঙে নতুন করে ১৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এটি পুনঃনির্মাণ করে। পরে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার ইকরামুল হক ইমন শহিদ মিনারটি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের দুই বছর যেতে না যেতেই শহিদ মিনারটির বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেয়। এরপর শুরু হয় বড় বড় ফাটল ধরা। এখন যে কোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে এটি।

এলাকাবাসী বলছেন, শহিদ মিনারের নির্মাণকাজ ভালো হয়নি।। শহিদ মিনারের পাশে ফুলের বাগানের মাধ্যমে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার নকশাও ছিল। নকশায় আছে, কিন্তু বাস্তবে ফুল নেই।

অযত্ন-অবহেলায় এখন বেহাল জগন্নাথপুরের এই শহীদ মিনার। ফাটলবেষ্টিত স্থানে বট গাছের শিকড় জন্মেছে। যে কোনো সময় দেয়াল ধসে পড়তে পারে। কিন্তু এ যেন দেখার কেউ নেই।

বর্তমান শহিদ মিনারটি কয়েক মাস আগে ব্যাপকভাবে কাঠামোগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুধু ফেব্রুয়ারিতে রঙ মাখিয়ে শহিদ বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় বলের জানা গেছে।

শিক্ষার্থীরা বলছে, আমাদের এখানে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের স্বাধীনতা স্মৃতি ভাস্কর্য নেই। আমাদের দাবি, একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হোক। বর্তমানে প্রায় ধসে যেতে বসেছে শহিদ মিনারটি। অতিদ্রুত শহিদ মিনারটি সংস্কার করা হোক।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিনিয়ত শহিদ মিনারে অবমাননা করা হচ্ছে ভাষা শহীদদের। স্যান্ডেল পরে একেবারে মূল বেদিতে উঠে আড্ডা, গল্প চলে।

অতিদ্রুত শহিদ মিনারটি আরও দর্শনীয় করে স্থাপন করার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। তাদের মতে, মাসের পর মাস পরিষ্কার না করার ফলে শহিদ মিনারের সামনের অংশে শ্যাওলা পড়ছে। বছরের গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো ছাড়া শহিদ মিনার পড়ে থাকে অবহেলায়।

২১শে ফেব্রুয়ারি এলে দিবসকে ঘিরে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে সর্বস্তরের জনতা। শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ ভাষা শহিদদের। দিনটি স্মরণে খালি পায়ে ফুল দিয়ে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান আবাল-বৃদ্ধ, শিশু ও নারীসহ সর্বস্তরের মানুষ। কিন্তু দিবস শেষ হলেই কদর কমে যায় শহিদ মিনারের। অবহেলা আর অযত্নে ডাস্টবিনে পরিণত হয় পবিত্র এ শহিদ মিনার।

জগন্নাথপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কায়ুইম বলেন, আমরা জাতীয় দিবস এলে শহিদ মিনারে গিয়ে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। এই শহিদ মিনার ধসে পড়ে যাচ্ছে অথচ কেউ দেখছে না- এটি দুঃখজনক।

জগন্নাথপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিদুল ইসলাম বলেন, শহিদ মিনারটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ আপাতত নেওয়া হচ্ছে না। পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নতুন করে শহিদ মিনার নির্মাণ করার চিন্তা-ভাবনা করছি।

এ বিষয়ে জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, জেলা পরিষদ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারটি নির্মাণ করেছে। এখন শুনছি শহিদ মিনার ধসে পড়ছে। আমরা দ্রুত এর সংস্কার করা চেষ্টা করবো।