ভোরবেলা সবে আলো ফুটেছে। অন্ধকার তখনও পুরোপুরি কাটেনি। এরই মধ্যে বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে অনুষ্ঠানস্থলে আসতে শুরু করেন খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা। সকাল ৬টার আগেই পাঁচ শতাধিক লোকের আগমনে ভরে ওঠে মাঠ। একদিকে অন্ধকার ভেদ করে সূর্য উঠছে, আরেকদিকে শুরু হয়েছে সমবেত প্রার্থনা। যার মূল সুর- ‘পুনরুত্থিত খ্রিষ্টের পূণ্য জ্যোতির আভায় আমাদের জীবন আলোকিত হোক’।
আজ রোববার (৯ এপ্রিল) ভোরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহরতলীর ক্যাথলিক মিশনের পুরাতন নটরডেম স্কুল মাঠে এভাবেই শুরু হয় খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের যিশুখ্রিষ্টের পুনরুত্থান দিবস বা ইস্টার সানডের অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শ্রীমঙ্গল পুনরুত্থান সূর্যোদয় আন্তমান্ডলিক উপাসনা কার্যকরী কমিটি। রেভা: পালক বেঞ্জামিন কস্তার প্রার্থনার মধ্য দিয়ে ইস্টার সানডের প্রাতঃকালীন বিশেষ উপাসনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
যিশুখ্রিষ্টের জীবনী নিয়ে প্রার্থনা সভায় আলোচনা করেন শ্রীমঙ্গল পুনরুত্থান সূর্যোদয় আন্তঃমান্ডলিক উপাসনা কার্যকরী কমিটির সভাপতি ফাদার জেমস শ্যামল গমেজ সিএসসি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আন্তঃমান্ডলিক কমিটির সদস্য বাংলাদেশ ব্যাপ্টিস্ট চার্চ ফেলোশিপের (বিবিসিএফ) জ্যেষ্ঠ পালক রেভা. জন ব্রাইট গাজী।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, চার্চ অফ গড লুমডনবক মিশনের পালক রেভা: পাইরিন সুটিং, পালক রেভা: এব্রিংটন পলং, রেভা: সখরিয় কট, সিলেট প্রেসবিটারিয়ান সিনডের সহ-সাধারণ সম্পাদক ফিলা পতমী, চার্চ অফ গড লুমডনবক মিশনের সাধারণ সম্পাদক লাভলী সুছিয়াং, আন্তঃমান্ডলিক কার্যকরী কমিটির কোষাধ্যক্ষ ডমিনিক সরকার রনি, শাকিল পামথেত প্রমুখ। প্রার্থনা সভার ফাঁকে ফাঁকে খ্রিষ্টীয় ধর্মীয় সংগীত পরিবেশন করেন বরমচাল চার্চ অফ গড লুমডনবক মিশনের সদস্যরা।
বরমচাল চার্চ অফ গড লুমডনবক মিশন থেকে অনুষ্ঠানে আসা খাসি জনগোষ্ঠীর খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী সালভেশন সুছিয়াং বলেন, শ্রীমঙ্গলে ইস্টার সানডের অনুষ্ঠান হচ্ছে, তাই ভোরবেলা ধর্মীয় সংগীত পরিবেশন করতে আমরা একটি দল নিয়ে প্রার্থনা সভায় এসেছি। আমরা এখানে আসতে পেরে খুবই আনন্দিত। কারণ দিনটি আমাদের কাছে অনেক বড় একটি দিন। এত বড় পরিসরের এই আয়োজনে আসতে পেরে বেশ ভালো লাগছে। আমরা এখানে প্রার্থনা করেছি, গান করেছি, সবার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে। সব মিলিয়ে দারুণ।
পুনরুত্থান সূর্যোদয় আন্তঃমান্ডলিক উপাসনা কমিটির অন্যতম সদস্য পালক রেভা: জন ব্রাইট গাজী বলেন, আজকের এই দিনে খ্রিষ্ট ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট মৃত্যু থেকে পুনরুত্থান করেছিলেন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব স্থানে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় ইস্টার সানডে পালন করছেন। শ্রীমঙ্গল উপজেলায় এবার দ্বিতীয়বারের মতো ইস্টার সানডের প্রাতঃকালীন প্রার্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
রেভা: জন ব্রাইট গাজী আরও বলেন, আমরা বড় আয়োজন করেছি। এখানে ক্যাথলিক, ব্যাপ্টিস্ট, প্রেসবিটারিয়ান, চার্চ অফ গড ন্যাজরিন মিশনসহ সব খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী প্রার্থনায় অংশ নিয়েছেন। এখানে আমরা ভ্রাতৃত্ববন্ধনের সঙ্গে উপাসনা করেছি। আমরা চাই আমাদের পুনরুত্থিত প্রভু যিশুখ্রিষ্টের মধ্য দিয়ে আমরা যেন সবার জন্য প্রার্থনা করতে পারি। এ দেশের জন্য প্রার্থনা করতে পারি, এ দেশের মানুষের জন্য প্রার্থনা করতে পারি। আমরা যে সুন্দর দেশে বাস করছি, সেই দেশ যেন আরও সুন্দর হয়। আমরা সব ধর্ম, সব বর্ণ মিলে যেন একসঙ্গে বাস করতে পারি এবং যার যার ধর্ম অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তার আরাধনা করতে পারি। আমাদের প্রার্থনা প্রতিটি মানুষের জন্য।