সিলেটের বিশ্বনাথে ইটভাটার কিশোর শ্রমিক আমিন মিয়া সিয়াম (১৬)কে হত্যার আগে বলাৎকার করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কিশোর সিয়ামকে হত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত আরকুম আলীকে গ্রেপ্তার করার পর তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পুলিশ এমন তথ্য জানায়।
পুলিশ বলছে- হত্যার আগে সিয়ামকে বলাৎকার করা হয়েছে। বিষয়টি সে পরিবার ও লোকজনকে জানিয়ে দিবে বললে অভিযুক্ত যুবক তাকে হত্যা করে।
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) বেলা ২টায় বিশ্বনাথের রামপাশা ইউনিয়নের উত্তর আজিজনগর গ্রামসংলগ্ন হাওরের একটি ঝোপ থেকে সিয়াম নামের ওই ইটভাটা শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল থানার করাতকান্দি গ্রামের আকবর আলীর ছেলে। সিয়াম বিশ্বনাথে পরিবারের সঙ্গে থেকে রামপাশার এফসি নামক ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করতো।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বুধবার রামপাশার পার্শ্ববর্তী এলাকায় ওয়াজ মাহফিলে যোগ দেয়ার কথা বলে ঘর থেকে বের হয় সিয়াম। রাতে বাড়ি এবং পরদিন সকালে কাজে না ফেরায় স্বজনরা তাকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। কোথাও কোন সন্ধান না পেয়ে ওইদিনই বিশ্বনাথ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে তার পিতা আবু বকর। তিন দিন পর শনিবার দুপুরে তার লাশ পাওয়া যায় হাওরে।
জেলা পুলিশের ওসমানীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান (পিপিএম) জানান- এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন ও ঘটনার সাথে জড়িত আসামিদের গ্রেফতারে বিশ্বনাথ থানা পুলিশ অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে। এক পর্যায়ে রবিবার (২৪ ডিসেম্বর) ভোররাতে এ ঘটনার মূল অভিযুক্ত আরকুম আলীকে (৪০) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
আরকুম বিশ্বনাথের কান্দি উত্তর আজিজনগর গ্রামের মৃত আছদ্দর আলীর ছেলে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আরকুম আলী জানান- তিন এফসি ব্রিকসে মাটি আনলোডের কাজ করেন। ইট ভাটাতেই কাজের সুবাদে সিয়ামের সাথে তার পরিচয় হয়। গত বুধবার সিয়ামের বাবা ও ভাই অন্যত্র যাওয়ার খবর পেয়ে আরকুম আলী ভিকটিম সিয়ামকে বলাৎকার করার পরিকল্পনা করে। তিনি সিয়ামকে নিয়ে এক জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রাত ৮টার দিকে ইটভাটার পার্শ্ববর্তী হয়দরপুর হাওরে নিয়ে যান। এসময় নদী পার হয়ে পশ্চিমপাশে যাওয়ার কথা বলে আরকুম আলী সিয়ামকে তার পরিহিত প্যান্ট-শার্ট খোলার জন্য বলে। সিয়াম তার কথামতো পরণের কাপড় খুললে আরকুম আলী তাকে জোরপূর্বক বলাৎকার করে।
সিয়াম তখন কান্নাকাটি করে এ ঘটনা তার বাবা ও ব্রিকস ফিল্ডের ম্যানেজারের নিকট জানাবে বললে আরকুম ক্ষুব্দ হয়ে ওই কিশোরের মুখ চেপে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে। হত্যার পর ভিকটিমের লাশ একটি ঝোপের মধ্যে ফেলে রেখে চলে আসে আরকুম। আর সিয়ামের খুলে রাখা প্যান্ট, জুতা নদীতে ফেলে রাখে।
আরকুমের দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ পরে সিয়ামের প্যান্ট, জুতা ও একটি টাওয়াল উদ্ধার করে।
বিশ্বনাথ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রমা প্রসাদ চক্রবর্তী বলেন- সিয়াম হত্যার ঘটনায় গতকাল (শনিবার) রাতে তার পিতা মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেওয়ার জন্য আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। অপরদিকে, ময়না তদন্ত শেষে মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।