কোরবানির মাংসের একটি অংশ বিলিয়ে দেয়া হয় গরিব দুঃখীর মাঝে। মূলত কোরবানি প্রথার এটা একটা সৌন্দর্য। সামর্থ্যবানরা কোরবানি করবেন, আর যাদের সামর্থ্য নাই তাদের মাঝে একটি অংশ বিতরণ করবেন। এতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীও অন্যদের মতো পান আমিষের স্বাদ। তবে যে অংশটি গরিবের মাঝে বিতরণ করছেন সত্যিকার অর্থেই কি তা গরিব দুঃখীর আমিষের অভাব পূরণ করছে; নাকি আপনার ধর্মীয় আবেগ নিয়ে চলছে ব্যবসা?
ঈদুল আজহার জামাতের পর কোরবানি শেষ না হতেই বাড়তে থাকে মাংসের খোঁজে আসাদের আনাগোনা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাংস সংগ্রহ করাদের কারোরই হাত খালি নয়। মোটামোটি সবার হাতেই একাধিক থলে, একটি পূর্ণ হলে অন্যটি ভরতে ব্যস্ততা; আকুতি। আর কোরবানি দেয়া সামর্থ্যবানরাও বিলিয়ে যান অকাতরে। এতে বিকেল পর্যন্ত মোটামুটি সবার হাতের থলেই পূর্ণ হয়ে যায়। এরপর এর গন্তব্য নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়। রীতিমত হাট বসিয়ে চলে বেচাকেনা।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) সিলেট নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলো ঘুরে দেখা গেছে এমন মাংস বিক্রির হাট। বাড়ি বাড়ি গিয়ে চেয়ে আনা মাংসের স্তুপ থেকে পছন্দ অনুযায়ী মাংস কিনছেন ক্রেতারা। ক্রেতাদের কেউ কেউ কোরবানি দিতে না পারা মধ্যবিত্ত ঘরানার হলেও অধিকাংশই নগরীর বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের মানুষ। সস্তায় মাংস কিনে সংরক্ষণ করাই যাদের মূল উদ্দেশ্য।
আর মাংস বিক্রেতাদের মধ্যে বেশিরভাগই দেখতে হতদরিদ্র কিংবা কোরবানিতে সহযোগিতা করা লোকজন। আম্বরখানা এলাকায় কথা হয় এক মাংস বিক্রেতা দিনমজুর ইদ্রিস আলীর সাথে। শহরতলীর সাহেব বাজার থেকে গরু কাটার চুক্তিতে এসেছিলেন তিনি। তিনি বলেন, দুই বাড়িতে গরু কাটার জন্য আমরা মোট ৩ জন এসেছিলাম। পারিশ্রমিক হিসেবে জনপ্রতি ২ হাজার টাকার পাশাপাশি ৫/৬ কেজি করে মাংস পেয়েছি। এতো মাংস রাখার উপায় নেই, তাই বিক্রি করে দিচ্ছি। ইদ্রিস বলেন, এখানে যারাই মাংস বিক্রি করছেন তারা বেশিরভাগই আমার মতো। ঘরে মাংস রাখার জন্য ফ্রিজ নেই, তাছাড়া মসলাপাতির যা দাম তারচেয়ে বিক্রি করে দিলেই ভালো; কিছু পয়সা পাওয়া যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা জানান, তিনি নগরীর একটি রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার। সস্তায় মাংস বিক্রি হচ্ছে বলে মালিকের নির্দেশে কিছু মাংস কিনে রাখছেন। কতটুকু কিনেছেন জানতে চাইলে বলেন, আসলে ওজন করিনি, তবে ২৫-৩০ কেজির কম হবে না।
তবে সবাই যে ব্যবসার উদ্দেশ্যে মাংস কেনাবেচা করছেন তাও নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক ক্রেতা জানান, কোরবানি দেবার ইচ্ছে থাকলেও বর্তমান দ্রব্যমূল্যের পরিস্থিতিতে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তাই স্বস্তায় কিছুটা মাংস কিনেছেন পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগের জন্য। আবার অনেকে চাকরিসূত্রে বা লেখাপড়ার জন্য পরিবার পরিজন ছেড়ে সিলেটে একা থাকেন। আট-নয়শ টাকা দিয়ে গরুর মাংশ কিনে খাওয়াটা বেশ কষ্টসাধ্য। তাই মেসের খাবারের জন্য ঈদের দিন কিছুটা কম দামে মাংস কেনেন।