৫ কলেজশিক্ষকের কাছে ১ লাখ করে ঘুষ দাবি, তদন্ত শুরু

এক লাখ টাকা করে ঘুষ না দেওয়ায় জয়পুরহাটের নান্দাইল দীঘি কলেজের পাঁচ শিক্ষক-কর্মকর্তার নাম সিনিয়র স্কেলপ্রাপ্তির ফাইলে অন্তর্ভুক্ত করেননি অধ্যক্ষ। ভুক্তভোগী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের লিখিত অভিযোগের পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সম্প্রতি আঞ্চলিক উপপরিচালককে তদন্তের নির্দেশ দেয়।

জানতে চাইলে রাজশাহীর আঞ্চলিক উপপরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান শাহ বলেন, ‘শিগগিরই সরেজমিন তদন্তে যাবো। অভিযোগে তদন্ত করে দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবো।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নান্দাইল দীঘি কলেজের ১৯ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা দ্বিতীয় সিনিয়র স্কেল পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। কলেজের অধ্যক্ষ মো. সামছুল আলম ফকিরকে টাকা না দেওয়ায় পাঁচ শিক্ষকের নাম বাদ দিয়ে গত ১৪ জুন দ্বিতীয় সিনিয়র স্কেলপ্রাপ্তির ফাইল মাউশির রাজশাহী অঞ্চল প্রধানের কাছে পাঠানো হয়। অধ্যক্ষের ফাইলে কলেজটির ১৪ জন শিক্ষক-কর্মকর্তার নাম ছিল।

অভিযোগ রয়েছে, ১৪ জনের কাছ থেকে অধ্যক্ষ এক লাখ টাকা করে নিয়েছেন। কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক লাখ টাকা করে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকারও করেছেন।

এ ঘটনায় জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার নান্দাইল দীঘি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক মো. জায়েদুল ইসলাম, ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক মো. আজিবুর রহমান, অর্থনীতি বিষয়ের প্রভাষক আবু সাদত মো. আব্দুল আউয়াল, সমাজকর্ম বিষয়ের প্রভাষক রোজিনা আক্তার ও প্রদর্শক মো. ফিরোজ হোসেন মন্ডল গত ১৪ জুন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগে শিক্ষকরা বলেছেন, ‘অধ্যক্ষ মহোদয় আমাদের পাঁচজনের কাছ থেকে ফাইল পাঠানো বাবদ এক লাখ টাকা করে দাবি করেন। এতে আমরা ভুক্তভোগীরা ভীষণভাবে মর্মাহত। বিষয়টি তদন্ত করে সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব, রাজশাহী অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার পরিচালক, জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক, জয়পুরহাটের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, কলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং কলাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠির অনুলিপি দেন শিক্ষকরা। অভিযোগের পর এই পাঁচ শিক্ষককে হাজিরা খাতায় সই করতে দেওয়া হয়নি কয়েক দিন। এরপর এই কয়েক দিনের অনুপস্থিতির কারণ দেখিয়ে পাঁচ শিক্ষককে শোকজ করা হয়।

সিনিয়র স্কেলের তালিকা থেকে বাদ পড়া ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক মো. জায়েদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। যখন এক লাখ টাকা করে না দিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছি, তখনই আমাদের বিরুদ্ধ অভিযোগ করা হয়েছে। শোকজ করা হয়েছিল, শোকজের জবাব দিয়েছি।’

পাঁচ জনের কাছ থেকে এক লাখ টাকা করে দাবি করা এবং সিনিয়র স্কেলপ্রাপ্তির তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মো. সামছুল আলম ফকির বলেন, ‘গভর্নিং বডি সিনিয়র স্কেল দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই ফাইল আমি ফরোয়ার্ড করেছি।’

তিন দফায় পাঁচ জনকে বাদ দিয়ে ফাইল পাঠানো হলো কেন, জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমি কলেজের প্রিন্সিপাল, বেসরকারি কলেজের গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা কাগজপত্র পাঠাই। পাঁচ শিক্ষকের চলাফেরায় অনিয়ম আছে। গভর্নিং বডির কাছে অভিযোগ আছে। কোনও প্রতিষ্ঠানপ্রধানের একক সিদ্ধান্তে কিছু হয় না। গভর্নিং বডি যে সিদ্ধান্ত নেয়, সেটাই আমাদের ফলোআপ করতে হয়। তা না হলে তো আমাদের চাকরি থাকবে না।’

কলেজ গভর্নিং বডির (অ্যাডহক কমিটির) সভাপতি মো. মবিনুল মন্ডল বলেন, ‘আমি অ্যাডহক কমিটির সভাপতি। সিনিয়র স্কেল প্রাপ্তির সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই অ্যাডহক কমিটির। আগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির সিদ্ধান্ত ছিল। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে সিনিয়র স্কেলের ফাইলে সই করেছি। এক লাখ টাকা করে অধ্যক্ষ চেয়েছেন কি না আমার জানা নেই।’

অভিযোগ বিষয়ে আগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির সভাপতি মিনফুজুর রহমান বলেন, ‘অভিযোগ হাস্যকর ও অযৌক্তিক। এ ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেনি। তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে, তদন্ত হলেই খোলাসা হবে।’

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন