হিজরতের নামে পাহাড়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ, পরে বোমা বিশেষজ্ঞ

আলোচিত নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া’র শুরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান রণবীর এবং তার সহযোগী বোমা বিশেষজ্ঞ আবুল বাশারকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

নব্য এ জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তারে রোববার (২২ জানুয়ারি) দিবাগত রাত থেকে সোমবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল পর্যন্ত কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালায় র‍্যাব। পরে আজ সোমবার সকালে দেশি-বিদেশি অস্ত্র ও গোলা-বারুদসহ কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে র‍্যাবের একটি দল।

জানা গেছে, র‍্যাব কর্তৃক প্রকাশিত পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত ৫৫ জনের তালিকায় নাম ছিল গ্রেপ্তার আবুল বাশারের। গত বছরের ৩ অক্টোবর র‍্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে আবুল বাশার ৫৫ জনের দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাহাড় থেকে পালিয়ে সিলেট চলে যান এবং সামরিক শাখার প্রধান রণবীরের কাছে আশ্র‍য় নেন। পরে তারা দুজন নিরাপদ আশ্রয়ের জন্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আত্মগোপন করেন।

সোমবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত বছরের আগস্টে আট তরুণ কথিত হিজরতের নামে ঘর ছাড়ে। তাদের খুঁজতে গিয়ে র‌্যাব ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া’ নামে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের তথ্য পায়। এরপর সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে আজ পর্যন্ত তিন বিচ্ছিন্নতাবাদীসহ নেতৃস্থানীয় পর্যায়ের ৩৮ জনকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

তিনি বলেন, তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সরবরাহ, রিক্রুটমেন্ট নিয়ে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে র‌্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা গত বছরের ২০ অক্টোবর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা এবং র‍্যাব-৭ এর বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সমতল থেকে পাহাড়ে আত্মগোপনে থাকা ৭ জঙ্গি এবং তাদের সহায়তাকারী ৩ জন কেএনএফ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এরপর দিন ২১ অক্টোবর গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে বিলাইছড়ি থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। গ্রেপ্তার সাত আসামির মধ্যে নব্য জঙ্গি সংগঠনের সামরিক শাখার উপ-প্রধান সৈয়দ মারুফ আহমেদ মানিক ছিলেন।

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিলাইছড়ি থানায় রুজুকৃত মামলার তদন্তকারী অফিসার বিজ্ঞ আদালতে ৫ আসামির রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত সংগঠনটির সামরিক শাখার উপ-প্রধান সৈয়দ মারুফ আহমেদ ওরফে মানিকসহ ৫ আসামির ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সৈয়দ মারুফ আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদে সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রণবীর ওরফে মাসুদের বিভিন্ন কার্যক্রম এবং সম্ভাব্য অবস্থান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে।

এরই ধারাবাহিকতায় র‍্যাব গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে নিশ্চিত হয় যে, জঙ্গি সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রণবীর ওরফে মাসুদ এবং আইইডি বা বোমা বিশেষজ্ঞ মো. আবুল বাশার মৃধা ওরফে আলম কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছেন।

ওই তথ্যের ভিত্তিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৭ এর ‌এ-ব্লকে ভোর ৫টা হতে র‍্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা, র‍্যাব-২, র‍্যাব-৩ এবং র‍্যাব-১৫ এর যৌথ চিরুনি অভিযান শুরু করে।

ব্লকটি ঘেরাওয়ের সময় সামরিক শাখার প্রধান রনবীর এবং বোমা বিশেষজ্ঞ বাশার পালানোর চেষ্টা করলে র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়।

উদ্ধার করা হয়- একটি বিদেশি পিস্তল, ৩টি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ১০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, একটি ব্ল্যাংক কার্টিজ, দুটি একনলা বন্দুক, ১১টি ১২ বোরের কার্তুজ, একটি খালি খোকা, ১০০ রাউন্ড .২২ বোরের গুলি, একটি মোবাইল ফোন ও নগদ ২ লাখ ৫৭ হাজার ২৬০ টাকা।

কমান্ডার মঈন বলেন, তথাকথিত হিজরতের নামে ঘর ছাড়া ও পাহাড়ে আশ্রয় নিয়ে প্রশিক্ষণরত ৫৫ জনের তালিকা প্রকাশ করেছিল র‍্যাব। সেই তালিকায় নাম ছিল গ্রেপ্তার আবুল বাশারের।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ আবুল বাশার জানায়, গত ৩ অক্টোবর র‍্যাব এবং অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযান শুরু হওয়ার পর তিনি ৫৫ জনের দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাহাড় থেকে পালিয়ে সিলেট যায় এবং সামরিক শাখার প্রধান রণবীরের কাছে আশ্র‍য় গ্রহণ করেন। তারা দুজন কয়েক দিন আগে নিরাপদ মনে করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আত্মগোপন করেছিলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে মঈন বলেন, আমরা মাত্র তাদের গ্রেপ্তার করেছি। তাদের বিশদ জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা, অর্থসহ অস্ত্রের যোগানদাতা, টেকনাফ ও বান্দরবানসহ পাহাড়ে ছিনতাই-অপহরণে তাদের যোগাযোগ রয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হবে।