বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ডাকা রোববার ঢাকাসহ সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল প্রত্যাখ্যান করেছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। এমনকি হরতালে বাস চলাচল অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।
শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
তবে এখন পর্যন্ত বিপরীত চিত্র সিলেটে। হরতাল ডাকলেই সিলেটের পরিবহন সেক্টরের সংগঠন আগ বাড়িয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাতো ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গাড়ি চলবে! গত প্রায় এক দশক ধরে এই ছিল সাংগঠনিক রীতি। তবে এই রীতির বিপরীত চিত্র দেখা গেল এবারের ডাকা হরতালে।
২৯ অক্টোবর সারা দেশে বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গাড়ি চলবে কি না, এ সংক্রান্ত কোনো বিজ্ঞপ্তি নেই।
শনিবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর জানতে পরিবহন শ্রমিক ও মালিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের কথায় হাওয়া বদলের সুর পাওয়া যায়। শনিবার রাত পর্যন্ত পরিবহন শ্রমিক ও মালিক সংগঠন দুটো এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। দুটো সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারাও জানিয়েছেন, এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
সিলেটে পরিবহন সেক্টরের শ্রমিক ও মালিক সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে একটানা অবরোধ কর্মসূচির পর থেকে সিলেটে পরিবহন সেক্টরের সঙ্গে জড়িতরা প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়। এরপর থেকে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে সংগঠনের পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গাড়ি চলাচলের ঘোষণা দেওয়ার রীতি প্রচলিত হয়।
আরও পড়ুন : ঢাকায় একঘন্টায় তিনটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ
শনিবার সন্ধ্যার পর যোগাযোগ করলে সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, ‘হরতালে গণপরিবহন চলবে কি না সেটা কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা কাজ করি। এখন পর্যন্ত হরতালে গণপরিবহন চালানোর কোনো সিদ্ধান্ত আমরা পাইনি। তাছাড়া আমাদের একেকটা গাড়ির দাম ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা। এই দামি গাড়িগুলো হরতালে কোনো নাশকতায় পড়লে এর দায়ভারতো আমি নিতে পারবো না। তাই এ ব্যাপারে আমার একক কোনো সিদ্ধান্ত নেই।’
আগে হরতাল ডাকলেই গাড়ি চলার ঘোষণা সংবলিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিবহন মালিক সমিতির এই নেতা বলেন, ‘এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি আমাদের বলতো যে আপনার সড়কে থাকেন, তাহলেও হয়তো কিছু একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত। কিন্তু হরতালে পরিবহন চালানোর অনুমতি আমি কাউকে দেইনি। কোনো শ্রমিক যদি হরতালে গাড়ি নিয়ে বের হয় সে দায়ভার তার নিজের।’
একই সুর সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের। সংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মুহিম বলেন, ‘হরতালে গণপরিবহন চালানোর কোনো নির্দেশনা আমাদেরকে দেওয়া হয়নি। এ ধরনের সিদ্ধান্ত মূলত বাস মালিক সমিতি ও কেন্দ্রীয় শ্রমিক নেতারা দিয়ে থাকেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি।’
তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল কবির পলাশ বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে হরতালের দিন বাস চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মেনে চলবো। যদিও সিলেটের থেকে পরিবহণ সেক্টর থেকে বাস চলাচলের আলাদা কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। আর নিরাপত্তাজনিত কারণে কেউ বাস নিয়ে না বেরুলে সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার।’
আরও পড়ুন : বিএনপি’র হরতালের প্রতিবাদে সুনামগঞ্জে আ.লীগের মিছিল
এদিকে, সর্বাত্মক হরতাল পালনে পরিবহন সেক্টরকেও আহ্বান জানিয়েছে সিলেট জেলা বিএনপি। জেলার সহ দপ্তর সম্পাদক মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘শনিবার ঢাকার নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ চলাকালে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সম্মিলিত হামলার প্রতিবাদে রোববার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপি। তাই দেশের গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় রোববার সিলেট জেলার সর্বত্র সকাল সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতাল পালন করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীসহ সিলেটবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছে সিলেট জেলা বিএনপি।
জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘হরতাল সফল করতে কাল সকাল থেকে আমরা সিলেটের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পিকেটিং করবো। আমরা যারা ঢাকায় আছি তারা রাতের মধ্যেই সিলেটে ফিরবো। ইতোমধ্যে সমাবেশ থেকে আমাদের সিলেটে তিনজন নেতাকর্মী গ্রেপ্তারের খবর পেয়েছি। তবে এসব গ্রেপ্তারে কাজ হবে না। সিলেট বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বড় অংশ এখনো সিলেটে আছেন। আমরা যেকোনো-মূল্যে হরতাল সফল করবো।’
সূত্র : খবরের কাগজ