বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখা ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপারের পক্ষ থেকে হবিগঞ্জ শহরের পুরাতন খোয়াই নদীর পূর্ণাঙ্গ সীমানা চিহ্নিতকরণ, দখল এবং দূষণমুক্ত করে সংরক্ষণের দাবীতে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৬ জুন) বাপা হবিগঞ্জ শাখার সভাপতি অধ্যাপক মো. ইকরামুল ওয়াদুদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল জেলা প্রশাসক মোছা. জিলুফা সুলতানার কাছে স্মারকলিপি দেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার ও বাপা কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য তোফাজ্জল সোহেল, বাপা হবিগঞ্জের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী মমিন ও নির্বাহী সদস্য এডভোকেট বিহারী দাস।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পুরাতন খোয়াই নদী হবিগঞ্জ শহরের প্রধান জলাধার। বর্ষা মৌসুমে শহরের বৃষ্টির পানি ধারণ ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় পুরাতন খোয়াই নদীর ভূমিকা অপরিসীম। এছাড়াও এই শহরের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যবর্ধনের সাথে পুরাতন খোয়াই নদী একই সূত্রে গাঁথা। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কিছু স্বার্থন্বেষী মহল নদীটিকে অব্যাহতভাবে দখল করে রেখেছে। দীর্ঘদিন ধরে ভূমি দখলদারদের অবৈধ দখল, ভরাট ও দূষণের কারণে নদীর অবস্থা চরমে পৌঁছেছে। নদীটি ক্রমাগত ভরাট ও অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠার কারণে বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে অল্প বৃষ্টিপাতের ফলে শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। যা শহরের নিম্নাঞ্চলে কৃত্রিম বন্যা হিসেবে রূপ নেয়। এতে ভুক্তভোগী এলাকার মানুষকে দুর্গন্ধময় ও আবর্জনা মিশ্রিত পানিতে আবদ্ধ অবস্থায় বসবাস করতে হয়।
স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৪ সালের মে মাসে তৎকালীন জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পুরাতন খোয়াই নদী রক্ষায় একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির তত্ত্বাবধানে নদীটির সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু হয়। কিন্তু সীমানা নির্ধারণের কাজটি আধুনিক সদর হাসপাতালের পাশ থেকে হরিপুর পর্যন্ত হয়ে একপর্যায়ে স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জেলা প্রশাসন হবিগঞ্জবাসীর প্রাণের দাবি খোয়াই নদী দখলমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। ওই সময় মাছুলিয়া থেকে নাতিরাবাদ পর্যন্ত নদীর প্রায় তিন কিলোমিটার সীমানা নির্ধারণ করে লাল রং দিয়ে চিহ্ন দেওয়া হয়। একই মাসের ১৬ তারিখ থেকে শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। সে সময় মাছুলিয়া থেকে শায়েস্তানগর পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার নদীর অংশ থেকে ৫ শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয় এবং পুরাতন খোয়াই নদীসহ খোয়াই নদীর জন্য প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয় এবং এটি প্রিএকনেক হয়েছে এমনটাই তৎকালীন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে জানানো হয়। অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার, ওই সময় তৎকালীন জেলা প্রশাসক বদলি হয়ে গেলে উচ্ছেদ অভিযান থেমে যায় এবং উদ্ধারকৃত অংশটুকু পুনরায় দখলে চলে যায়।
২০২৩ সালে পুরাতন খোয়াই নদীর অপেক্ষাকৃত ভালো থাকা অংশের একপাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এবং ২০২৪ সালে নদীর আরো দুটি অংশ হবিগঞ্জ পৌরসভা পরিষ্কার করে যা শহরবাসীর জন্য অত্যন্ত আনন্দের।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, আমরা আশা করি নির্মোহভাবে সীমানা চিহ্নিত করে দ্রুততার সঙ্গে দখল উচ্ছেদ করে নদীটি সংরক্ষণ করা হবে। কোন অবস্থাতেই যেন অবৈধ দখলদাররা বৈধতা না পায় সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতে হবে।
আমাদের ও নগরবাসীর দাবি, পুরাতন খোয়াই নদীর পূর্ণাঙ্গ সীমানা নির্ধারণ করে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী স্থায়ী সীমানা পিলার স্থাপনের। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ সীমানা নির্ধারণ আজও হয়নি। ফলে নদীর উভয় পাড়ে দখল ও অবৈধ স্থাপনা তৈরি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
পুরাতন খোয়াই নদীর উপর এরকম অন্যায় আচরণ কোনভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা আশঙ্কা করছি এভাবে নদীটি ধ্বংস করা হলে হবিগঞ্জে শুধু পরিবেশ বিপর্যয়ই নয়; ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নেমে আসবে। তাই অনতিবিলম্বে পুরাতন খোয়াই নদীটিকে রক্ষা করার বিকল্প নেই।
স্মারকলিপিতে পাঁচটি দাবি উল্লেখ করা হয়।
দাবিগুলো হচ্ছেঃ
১. অবিলম্বে নির্মোহভাবে পুরাতন খোয়াই নদীর ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পূর্ণাঙ্গ সীমানা চিহ্নিত করে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী স্থায়ী সীমানা পিলার স্থাপন করতে হবে।
২. পুরাতন খোয়াই নদীতে গড়ে ওঠা সকল অবৈধ স্থাপনা ও দখল উচ্ছেদ করে নদীটি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। নদীটি খনন করতে হবে প্রয়োজনের দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৩. মাছুলিয়া থেকে বগলা বাজারের মাছ বাজার পর্যন্ত নৌ-পরিবহন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
৪. নদীর উভয়তীরে প্রয়োজনীয় স্থানসমূহে ওয়াকওয়ে নির্মাণ এবং নদীর পাড়ে ঘাস লাগানো, গাছ রোপণ এবং মানুষের বসার স্থান করতে হবে।
৫. নদী রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় জন প্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজের সমন্বয়ে নদী রক্ষা মনিটরিং টিম গঠন করতে হবে।