মজিদ মিয়ার বয়স ৫৫ বছর। পেশায় কৃষক। বাড়ি সিলেটের শহরতলী টুকেরবাজার এলাকায়। এবারের উপর্যুপরি বন্যায় মজিদ মিয়ার প্রায় ২ হাজার হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধু মজিদ মিয়াই ক্ষতিগ্রস্ত হননি, বন্যার থাবায় সিলেট জেলার প্রায় ৮৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমিতে লেগেছে ক্ষতির ধাক্কা। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ শত শত কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ৪শ’ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে মজিদ মিয়া বলেন, ‘উপর্যুপরি বন্যায় আমার প্রায় ২ হাজার হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুঁজি যা ছিলো তার সবটুকুই নিয়ে গেছে দুইবারের বন্যায়। বন্যার ভয়ালথাবায় পরিবার পরিজন নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। কিভাবে এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠবো তার কোনো হিসাব পাচ্ছি না। সরকার থেকে এখনো কোনো সহায়তা পাই নাই।’
সিলেট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্যানুসারে, সিলেট জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৫ হাজার ৭২৬ হেক্টর ফসলি জমি। এর মধ্যে রয়েছে ৩৩ হাজার ৭৪৬ হেক্টর আউশ ধান এবং ১১ হাজার ৯৮০ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রের তথ্যমতে সিলেট সদর উপজেলায় আউশ ফসলের ক্ষতি হয়েছে- ১হাজার ২০ হেক্টর জমি তলিয়ে ৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা, বিশ্বনাথে ৩ হাজার ৯২০ হেক্টর জমি তলিয়ে ৩১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, গোলাপগঞ্জে ২ হাজার হেক্টর জমি তলিয়ে ১৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, জৈন্তাপুরে ৬ হাজার ৯শ হেক্টর জমি তলিয়ে ৫৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, বালাগঞ্জে ১ হাজার ৮শ হেক্টর জমি তলিয়ে ১৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, গোয়াইনঘাটে ৯শ ২৩ হেক্টর জমি তলিয়ে ৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা, জকিগঞ্জে ২ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমি তলিয়ে ২১ কোটি ৬১ লাখ টাকা, কানাইঘাটে ৭শ হেক্টর জমি তলিয়ে ৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, ওসমানীনগরে ১ হাজার ৭৮৫ হেক্টর জমি তলিয়ে ১৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, কোম্পানিগঞ্জে ৫৬০ হেক্টর জমি তলিয়ে ৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, বিয়ানীবাজারে ১ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমি তলিয়ে ১৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, দক্ষিণ সুরমায় ৩ হাজার ৫২০ হেক্টর জমি তলিয়ে ২৫ কোটি ১১ লাখ টাকা ও ফেঞ্চুগঞ্জে ১হাজার ৭১০ হেক্টর জমি তলিয়ে ১৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
অপরদিকে সিলেট সদর উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ উপজেলায় ১৬৫ হেক্টর জমি তলিয়ে ক্ষতি ৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা, বিশ্বনাথে ২৪৫ হেক্টর জমি তলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ১১ কোটি ২ লাখ টাকা, গোলাপগঞ্জে ২শ হেক্টর জমি তলিয়ে ৯ কোটি টাকা, জৈন্তাপুরে ২৫০ হেক্টর জমি তলিয়ে ক্ষতি হয়ে ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা, বালাগঞ্জে ২৫০ হেক্টর জমি তলিয়ে ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে, গোয়াইনঘাটে ৫৮০ হেক্টর জমি তলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ২৬ কোটি ১০ লাখ টাকা, জকিগঞ্জে ১২০ হেক্টর জমি তলিয়ে ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি, কানাইঘাটে ৪০ হেক্টর জমি তলিয়ে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে, ওসমানীনগরে ৩১০ হেক্টর জমি তলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ১৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, কোম্পানিগঞ্জে ৩৫০ হেক্টর জমি তলিয়ে ১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকার ক্ষতি, বিয়ানীবাজারে ১শ হেক্টর জমি তলিয়ে ক্ষতি হয়েছে ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা, দক্ষিণ সুরমায় ১শ হেক্টর জমি তলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও ফেঞ্চুগঞ্জে ৩১২ হেক্টর জমি তলিয়ে ১৪ কোটি ৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত মে মাসের বন্যায় শুধু ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছিল। কিন্তু মধ্য জুনে আঘাত হানা বন্যায় ফসলি জমির সাথে সাথে অসংখ্য কৃষকের গোলার ধানও ক্ষতির মুখে পড়েছে।
এদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের এখন উৎকণ্ঠা আর অনিশ্চয়তার মধ্যদিয়ে দিনাতিপাত। বিশেষ করে যারা জমির ফসলের উপর নির্ভর করে জীবিকা চালান, তারা আছেন গভীর সংকটে।
সিলেটের মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের কৃষক রমিজ আলী বলেন, ‘প্রথমে বন্যায় ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুঁজি যা ছিলো তার সবটুকুই নিয়ে গেছে দুইবারের বন্যায়। বন্যার ভয়াল থাবায় পরিবার পরিজন নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। এসব ক্ষতি কাটিয়ে ওঠবো কিভাবে তার কোনো হিসাব পাচ্ছি না।’
জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘বন্যায় সিলেটের কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের হিসাবে সিলেট জেলায় ক্ষতির পরিমাণ ৩৭৯ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। তবে অনেক কৃষকের গোলার ধান ভেসে গেছে, নষ্ট হয়েছে। এগুলোর প্রকৃত হিসাব পাওয়া কঠিন।’
তিনি বলেন, বন্যায় ফসলের ক্ষতি কাটিয়ে ওটার জন্য সরকার থেকে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ্য করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে পাঠানো রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। বন্যা নেমে গেলেই কৃষকদের মাঝে সার ও বীজ বিতরণ করা হবে।