সিলেটে সাংবাদিকদের নিয়ে ‘ভুয়া সংবাদ রোধে সংলাপ’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সিলেট মহানগরের শাহজালাল উপশহরস্থ একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে ‘সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)’-এর উদ্যোগে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
সংলাপে দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং স্থানীয় পত্রিকাগুলোর সিনিয়র সম্পাদক ও সাংবাদিক, ফ্যাক্ট-চেকার এবং সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা অংশগ্রহণ করেন।
উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে দেশে সাংবাদিকতার বিভিন্ন সমস্যার বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং এর ফলে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য, মিথ্যা খবর ও গুজব ছড়িয়ে পড়ার দিকটিও আলোচনা করা হয়।
আলোচকেরা বলেন, এ ক্ষেত্রে সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে- তথ্য সংগ্রহে বাধা দেওয়া বা তথ্য না দেওয়া, সরকারের স্বদিচ্ছার অভাব ও ভুল তথ্য প্রদান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ভয়, রিপোর্টারদের নিয়মিত কাজের চাপ ও তার ফলে মানসম্পন্ন সংবাদের ঘাটতি, পর্যাপ্ত রিসোর্সের অভাব, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মালিকানাধীন মিডিয়া হাউজ ও তাদের নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়ন ইত্যাদি।
এছাড়া সংবাদমাধ্যমে নির্ভুল তথ্য যাচাইয়ের জন্য ফ্যাক্ট-চেকারদের সাথে সমন্বয় ও কীভাবে তথ্য যাচাই করা যায় সে সম্পর্কেও সংলাপে আলোচনা করা হয়।
আলোচনায় চ্যানেল আই’র প্রধান বার্তা সম্পাদক জাহিদ নেওয়াজ খান বলেন, ‘শুরু থেকেই সত্য খবরের পাশাপাশি ভুয়া খবর বিদ্যমান ছিল। কিন্তু ইন্টারনেট এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভুয়া খবর প্রচারে বৃহত্তর মাত্রা যোগ করেছে। ক্রস চেকিং সংবাদ প্রতিবেদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে একটি এবং সংবাদের সত্যতা যাচাই ছাড়াই তা প্রকাশ করা সাংবাদিকতার মান ক্ষুণ্ন করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সত্য অথবা মিথ্যা তথ্য বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম একটি নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে। সাংবাদিকদের এখন আর বিভিন্ন সূত্র বা গুজব বা কর্তৃপক্ষের দ্বারা আরোপিত সংবাদের ওপর নির্ভর করা উচিত না। সরেজমিনে তথ্য যাচাই ছাড়া সঠিক সংবাদ উৎসের কোনো বিকল্প নেই।’
সংলাপে বক্তব্য দেন সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আল-আজাদ। তিনি বলেন, ‘সংবাদ পরিবেশনের সময় একজন সাংবাদিককে অবশ্যই নিরপেক্ষতার দৃষ্টি বজায় রাখতে হবে। রিপোর্ট করার সময় কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সাংবাদিকের সংশ্লিষ্টতা থাকা উচিত নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘দ্রুত সংবাদ প্রকাশ চর্চা এবং সাংবাদিকদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা ভুল তথ্য ছড়ানোর অন্যতম দুটি কারণ। এ ধরণের চর্চা সাংবাদিকদের তাদের প্রতিষ্ঠিত শক্তিশালী জায়গা থেকে দিন দিন দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।’
সংলাপের শেষ পর্বে উপস্থিত সাংবাদিকরা একটি জরিপে অংশগ্রহণ করেন এবং নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সংবাদমাধ্যমে ভুল ও বিভ্রান্তমূলক তথ্য উপস্থাপন রোধে কার্যকরী ব্যবস্থার বিভিন্ন উপায় তুলে ধরেন।
সংলাপ সঞ্চালনা করেন সিজিএস’র নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।
উল্লেখ্য, সিজিএস প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হচ্ছে- বাংলাদেশের একটি থিংক ট্যাংক যা সুশাসন, দুর্নীতি, মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং উন্নয়ন বিষয়ক গবেষণা ও গণমাধ্যম গবেষণা পরিচালনা করে। দ্রুত পরিবর্তনশীল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের খাপ খাইয়ে নেওয়ার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের লক্ষ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কেন্দ্রের উদ্দেশ্য হলো শাসন ব্যবস্থার মান উন্নয়ন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে সহজলভ্য সম্পদের কার্যকরী ও দূরদর্শী ব্যবহারের শর্তসমূহ উন্নত করা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, এবং গণতন্ত্রায়ন, অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা অর্জন করার লক্ষ্যে একাডেমিক সম্প্রদায়, সরকার, বেসরকারি খাত এবং উন্নয়ন অংশীদার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করা।