সিলেটে দিনকে দিন যেমন রেস্টুরেন্টের সংখ্যা বাড়ছে, তেমনি কিছুদিন পরপর পরিচালনা করা হচ্ছে ভোক্তা অধিকারের অভিযানও। এর ফলে বিভিন্ন অপরাধে রেস্টুরেন্টগুলোকে গুনতে হচ্ছে জরিমানা।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০২১-২২ অর্থবছরে সিলেট শহরের ৭৪টি রেস্টুরেন্টকে জরিমানা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়। এই এক বছরে বিভিন্ন অপরাধে জরিমানা করা ৭৪টি রেস্টুরেন্ট থেকে মোট ৫ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হয়েছে বলে জানায় তারা।
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য মতে জানা যায়, বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতি সিলেট জেলা শাখা ও সিলেট ডিস্ট্রিক্ট ক্যাটারার গ্রুপের সূত্র মতে সিলেট শহরে নিবন্ধিত রেস্টুরেন্টের সংখ্যা ১১৫টি।
এসব রেস্টুরেন্টকে আবার ২ ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। চায়নিজ রেস্টুরেন্ট ও বাংলা খাবারের রেস্টুরেন্ট। এর মধ্যে সিলেট শহরে চায়নিজ রেস্টুরেন্ট রয়েছে ৪৫টি আর বাংলা খাবারের রেস্টুরেন্ট আছে ৭০টি।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত ২০২১ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত সিলেট শহরের চায়নিজ এবং বাংলা উভয় ধরণের রেস্টুরেন্ট মিলিয়ে মোট ৭৪টি রেস্টুরেন্টকে জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি ৫ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হয়।
খাবারের বা সেবার মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করায় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এর ৩৯ ধারায়, খাদ্য সামগ্রী প্রস্তুতে নিষিদ্ধ পণ্য/দ্রব্যের মিশ্রণে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এর ৪২ ধারায়, নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অবৈধ প্রক্রিয়ায় খাদ্য সামগ্রী প্রস্তুত ও সংরক্ষণ করায় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এর ৪৩ ধারায় এবং মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার সংরক্ষণ ও বিক্রয় করার কারণে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এর ৫১ ধারায় ঐসব প্রতিষ্ঠারগুলােকে এই জরিমানা আরােপ ও জরিমানা আদায় করা হয় বলে জানিয়েছে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ।
জরিমানার টাকা কি করা হয়?
সাধারণ মানুষের মনে এমন একটা প্রশ্ন, কৌতুহল কিংবা জানার আগ্রহ থাকে যে জরিমানা আদায় করে সেই টাকা কি করা হয়। সেই কৌতুহল দূর করতে জানতে চাওয়া হয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের কাছে। জবাবে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, জরিমানার টাকা শতভাগ ব্যাংক চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়।
বিভাগীয় কার্যালয় থেকে জানানো হয়, কোন রেস্টুরেন্টে জরিমানা করার পর উক্ত রেস্টুরেন্টে প্রাপ্ত অপরাধগুলাে কিভাবে সংশােধন করা যায় সে ব্যাপারে ব্রিফিং দেয়া হয় এবং পাশাপাশি তাদের সচেতন করার উদ্দেশ্যে লিফলেট ও পাম্পলেট বিতরণ করা হয়। তাছাড়া রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ তাদের কৃত অপরাধ/অজ্ঞতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে এবং ভবিষ্যৎতে এ ধরণের অপরাধ পূনরাবৃত্তি না করে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ মেনে রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করবে বলে অঙ্গিকার করেন।
জানা যায়, কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একাধিকবার একই অভিযােগ থাকলে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনাপূর্বক অপরাধ প্রমাণ সাপেক্ষে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ অনুযায়ী আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অভিযান পরিচালনাকালে রেস্টুরেন্টগুলােতে খাবারের মানের ভিন্নতা, বিশুদ্ধ পানির অভাব, রান্নাঘরে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব, বাসি খাবার সংরক্ষণ ও পরিবেশন ইত্যাদি সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। বিষয়টি যথাযথভাবে মনিটরিং করার পাশাপাশি অপরাধ পেলে জরিমানার আওতায় নিয়ে আসা হয়।
একই খাবার একেক রেস্টুরেন্টে একেক রকম দাম রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানায়, রেস্টুরেন্টগুলােতে তৈরি খাবারের দাম রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারণ করা হয়। সেজন্য রেস্টুরেন্টভেদে দামের পার্থক্য থাকতে পারে। তবে খাবারের মানের বিষয়টি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে। এ বিষয়ে তাদের সাথে যােগাযােগ যেতে পারে।
এ বিষয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সিলেট কার্যালয়ে সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, চেকলিস্ট অনুযায়ী রেস্টুরেন্টগুলোকে চেকিং করা হয়ে থাকে। যে জায়গায় তাদের উন্নয়ন করতে হবে সেই পয়েন্টগুলো তাদেরকে দিয়ে আসা হয়। সেই অনুযায়ী রেস্টুরেন্টগুলো ফলোআপও করে থাকে। এছাড়া নিরাপদ খাদ্য আইন সম্পর্কে জনসচেতনতাও বাড়ানো হচ্ছে।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সিলেট জেলা কার্যালয়ের নিরাপদ খাদ্য অফিসার সৈয়দ সারফরাজ হোসেন এই প্রতিবেদককে জানান, ‘সিলেটের বেশিরভাগ রেস্টরেন্টে ফুড সেফটির বিষয়ে ঘাটতি দেখা গেছে। আমরা একটি সাইন্টিফিক এপ্রোচ নেওয়ার চেষ্টা করি। কেননা, নিরাপদ খাদ্য আইনটি মূলত একটি সাইন্টিফিক বেইজড।’
এসব বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফখরুল ইসলাম জানান, প্রতিটি মানুষের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। একেকজন হয়ত বিষয়টি একেকভাবে বিবেচনা করবেন। তাছাড়া ভাল খারাপ বিষয়টি ও আপেক্ষিক। রেস্টুরেন্টে অভিযান পরিচালনাকালে রেস্টুরেন্টগুলোতে একই ধরণের সমস্যা পরিলক্ষিত হয় না। কিছু কিছু রেস্টুরেন্ট প্রায় শতভাগ স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পরিচালিত হয় আবার অন্যান্য ক্ষেত্রে বিপরীতধর্মী চিত্র পরিলক্ষিত হয়।
তিনি জানান, ‘দেশ দিন দিন উন্নত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় রেস্টুরেন্টের মানও দিন দিন উন্নত হবে বলে আমরা আশা করি। তাছাড়া এ বিষয়ে ভোক্তাদেরও দায়িত্ব আছে। তাদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে।’