সিলেটে গ্যাসের ‘লিমিট’ নিয়ে ভোগান্তিতে চালক-যাত্রীরা

সিলেটের প্রায় প্রতিটি সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে মাস ফুরানোর আগেই গ্যাস সরবরাহের বরাদ্দের  সীমা শেষ হয়ে যায়। ফলে প্রতি মাসের শেষের দিকে কার্যত অচল হয়ে পড়ে বেশ কয়েকটি পাম্প। আর যে পাম্পগুলোতে গ্যাসের মজুদ থাকে সেখানে লেগে যায় যানবাহনের দীর্ঘ লাইন।

ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে থেকে গ্যাস পেতে পেতে দিনের প্রায় অর্ধাংশ শেষ হয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে চালকরা।  অনেক সময় পকেটে বাড়ি ফিরতে হয় সিএনজি চালকদের। কেবল চালকরাই নন, প্রতিনিয়তই এমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সিএনজি ফিলিং স্টেশন মালিক ও সাধারণ যাত্রীরাও।

মূলত ফিলিং স্টেশনে এক মাসের জন্য বরাদ্দ পাওয়া গ্যাস নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বিক্রি হয়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছেন চালকরা। এ অবস্থায় ফিলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

জানা যায়, গ্যাস পাম্পগুলোর জন্য প্রতিমাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাস বরাদ্দ (লিমিট) দেয়া হয়। সেই বরাদ্দ শেষ হয়ে গেলে সেই পাম্প পরবর্তী মাস না আসা পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হয়। ফলে যেসব পাম্প তখনো খোলা থাকে সেই সব পাম্পে গ্যাসের জন্য গাড়ির প্রচন্ড চাপ তৈরি হয়। রাস্তার পাশে দীর্ঘ যানবাহনের সারি ব্যস্ততম সড়কে যানজট সৃষ্টি করে। গ্যাস পাওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ চালকের সাথে যাত্রীরাও শিকার হন চরম ভোগান্তির।

সিএনজি ফিলিং স্টেশন মালিকরা জানান, ১৭ বছর আগের চুক্তি অনুযায়ী সিলেটের সিএনজি স্টেশনগুলো গ্যাস বরাদ্দ পাচ্ছে। এর মধ্যে যানবাহন দ্বিগুণের বেশি বাড়লেও বরাদ্দে হেরফের হয়নি। এ কারণে কোনো কোনো পাম্প দুই থেকে চার দিন, কোনো কোনোটি এক সপ্তাহ পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন সিএনজি স্টেশন মালিকরা।

বুধবার (৩০ অক্টোবর) সিলেট নগরীর হুমায়ূন রশিদ চত্বর এলাকায় মেসার্স শাহজালাল সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সামনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্যাস নিতে সারি সারি সিএনজিচালিত অটোরিকশার দাঁড়িয়ে আছে। আশেপাশের অন্যান্য পাম্পগুলোর বরাদ্দের অপ্রতুলতার দরুণ বন্ধ থাকায় এই পাম্পে দীর্ঘ যানবাহনের (সিএনজি) সারি বলে জানান একাধিক চালক। পাম্পগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন পাম্প মালিক, সিএনজি চালক ও যাত্রীসাধারণ।

৭০৭, চাঁনপুর শাখার এক সিএনজি চালক সিলেট ভয়েসকে বলেন, ‘ঘণ্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে, মালিককে ৬০০-৬৫০ টাকা ইনকাম দিয়ে নিজের সংসার চালানো কতটা কষ্টকর তা একজন সিএনজি চালক মাত্রই জানেন। আমি এখানে প্রায় ২ঘন্টা থেকে লাইনে আছি। পিছনে শিববাড়ি পাম্পে লিমিট ক্রস হওয়ায় এখানে এসেছিলাম, এসে দেখি এখানে কারেন্ট নাই। চালকদের এ কষ্টের কথা কি সরকারের কান অবধি পৌঁছাবে?’

সিএনজি চালক আব্দুল জলিল বলেন, সকাল ৮টা থেকে গ্যাসের লাইনে গিয়ে দেখি আমার আগেই সেখানে একশো’র উপরে গাড়ির লাইন। আমি ৩ ঘন্টা লাইনে থেকে গ্যাস পেয়েছি, কিন্তু আমার রোজ শেষ; এখন বাজে বেলা ৩টা, মাত্র ২০০ টাকা রোজকার করেছি। মালিক ইনকাম তুলে রাতে বাসায় যাওয়ার সময় বাচ্চাদের জন্য এক প্যাকেট বিস্কৃটের টাকাও হয়তো নিতে পারবো না।’

শাহজালাল সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সামনে গ্যাস নিতে আসা একটি সিএনজিতে থাকা যাত্রী বলেন, ‘ঘন্টাখানেক থেকে এই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে গাড়ি, কেমনটা লাগে। বিরক্তির চরম সীমা অতিক্রম করছে, কিন্তু আমরা তো সাধারণ যাত্রী। আমাদের কী আর করার আছে?’

শিববাড়ি এলাকার প্রগতি ফিলিং স্টেশন থেকে গ্যাস না পেয়ে ফিরে আসা আরেক গাড়ির যাত্রী জহির উদ্দিন বলেন, ‘খুব বেশি বিরক্ত লাগছে, একটা জরুরী কাজে বের হয়েছিলাম। এখন আর বসে থাকলে আমার লস হয়ে যাবে, তাই অন্য গাড়িতে চলে যাব।’

মেসার্স শাহজালাল সিএনজি ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসেন আহমদ সিলেট ভয়েসকে বলেন, গ্যাসের এই যে সংকট, এটা হচ্ছে আমাদের লিমিট (বরাদ্দ) শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে হয়। সিলেটে যত পাম্প আছে সবখানে লিমিটেড গ্যাস দেওয়া হয়, যা মাসের ২০ তারিখের আগেই শেষ হয়ে যায়। এর অধিক বিক্রি করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই লিমিট শেষ হওয়ামাত্র অনেক পাম্প বন্ধ হয়ে যায়। লিমিট বেশি থাকা পাম্পগুলোতেও প্রতি মাসের ২৫ তারিখের পর বরাদ্দ শেষ হয়ে যায়। মুষ্টিমেয় কয়েকটি পাম্প আছে যেগুলোতে বেশি লিমিট একটু বেশি থাকে, ফলে গ্যাস নিতে সেই পাম্পগুলোতে গাড়ির দীর্ঘ লাইন হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এমন সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সিলেটের জেলা প্রশাসক ও জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষের সাথে বিভিন্নভাবে দাবি জানালেও এখন পর্যন্ত লিমিট (বরাদ্দ) বাড়ানোর বিষয়ে কোনো আশানুরূপ ফল আমরা পাইনি। আমরা নতুন সরকার আসার পর আরেক দফা জালালাবাদ গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে বৈঠক হয়েছে আমাদের। তিনি আমাদের আশ্বস্থ করেছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে লিমিট বৃদ্ধি করবেন। আমরা আশাবাদী, এই ব্যাপারে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে এই জন দুর্ভোগ লাঘব হবে।’