দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নানা সমীকরণ নিয়ে জমে উঠেছে সিলেট-৬ আসনের নির্বাচনী আলোচনা। হঠাৎ করেই এসব আলোচনার মূল আলোচ্য হয়ে উঠেছেন তৃণমূল বিএনপি’র চেয়ারপার্সন শমসের মবিন চৌধুরী।
২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তোড়জোর ছিলো, তবে এলাকায় খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারেন নি তখনকার বিএনপির ‘দলছুট’ এই নেতা। এরপর গত প্রায় ৫ বছর তিনি দৃশ্যের বাইরেই ছিলেন। তবে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ফের আলোচনায় উঠে এসেছে এই সাবেক আমলার নাম। ‘তৃণমূল বিএনপি’ নামের নবীন রাজনৈকি দলটির চেয়ারম্যান তিনি। অনেকেরই ধারণা বিএনপি নির্বাচনে না এলে এই তৃণমূল বিএনপিই হতে পারে প্রধান বিরোধী দল। সরকার থেকে ‘বিশেষ ছাড়’ পেতে পারে বলেও মনে করেন অনেকে। এসব কারণে শমসের মবিন চৌধুরী হতে পারেন অনেকের দুশ্চিন্তার কারণ।
সিলেটের দুই উপজেলা গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানী বাজার নিয়ে গঠিত নির্বাচনী আসন সিলেট-৬। এ আসনে টানা তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এর আগে ৯৬ সালেও আওয়ামী লীগের হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছেন নাহিদ। একসময় অপ্রতিদ্বন্দীই ছিলেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নাহিদের সেই রাজনৈতিক জৌলুস নেই। নিজ নির্বাচনী এলাকায় দলের ভেতরেই রয়েছে শক্ত প্রতিদ্বন্দী।
তার উপর গত বন্যায় বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জের প্রধান সড়কসহ উপজেলা ও গ্রামীণ সড়কগুলোর বেহাল দশার দায়ও যুক্ত হয়েছে সাথে। যদিও সম্প্রতি কয়েকটি সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে, তারপরও দুই উপজেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে সড়ক ভোগান্তির কারণে নাহিদের উপর অসেন্তোষ রয়েছে। এছাড়া দুটি উপজেলাতেই আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলীয় নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। যাতে দলের বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বিক্রি শুরুর পর দুই দিনে সিলেট-৬ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন কেনেন নাহিদসহ ১০ জন। তবে এ সংখ্যা ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে কিছুটা কম। সেবার ১৪ জন আওয়ামী লীগ নেতা দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। তার মধ্যে কানাডা ফেরত সরওয়ার হোসেনকে টপকে দলীয় মনোনয়ন পেতে অনেকটা বেগ পেতে হয়েছিলো নুরুল ইসলাম নাহিদকে। ২০১৮ সালে বিএনপি নির্বাচনে থাকায় নাহিদেই আস্থা রেখেছিলো আওয়ামী লীগ। কিন্তু এবারের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সরওয়ার হোসেনের অবস্থান আগের চেয়েও শক্ত বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা।
এমন যখন অবস্থা ঠিক তখন ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে এসেছেন তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রদূত সমসের মবিন চৌধুরী। এরই মধ্যে প্রগতিশীল ইসলামী ফোরামের সাথে জোট করেছে ভোটের মাঠের নবীন এই দল। ১৫টি ইসলামী দল নিয়ে জোটগতভাবে তৃণমূলের প্রতীক সোনালী আঁশ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করেছেন দলটির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার।
তবে দলের আভ্যন্তরীণ আর সাম্প্রতিক অসন্তোষকে ছাপিয়ে শমসের মবিন চৌধুরীকেই বড় ঝুঁকি মনে করছেন অনেকে।