দেশের একমাত্র আগাম শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ইছামতী চা-বাগানের মঙ্গলচন্ডি মন্দিরে। প্রতিবছর দুর্গাপূজার ছয়দিন আগে থেকেই এখানে আগাম দুর্গাপূজা শুরু হয়। প্রতিদিন একটি করে দেবী দুর্গার ৯টি রূপের পূজা করা হয়।
বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে দেবী দুর্গার ৯টি রূপের মধ্যে (তৃতীয় রূপ) চন্দ্রঘণ্টা রূপে পূজা করা হয়। এর আগে গত সোমবার সকালে দেবী দুর্গার (প্রথম রূপ) শৈলপুত্রী ও গতকাল মঙ্গলবার দেবী দুর্গার (দ্বিতীয় রূপ) ব্রহ্মচারিনী রূপে পূজা করা হয়েছিল। এভাবে পৌরানিক নিয়ম অনুযায়ী আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত ব্রহ্মচারিনী, চন্দ্রঘণ্টা, কুষ্মান্ডা, স্কন্ধমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রী, মহাগৌরী ও সিদ্ধিদাত্রী রূপের পূজা করা হবে। ৫ অক্টোবর হবে দেবীর বিসর্জন।
নবদূর্গা বলতে আভিধানিকভাবে দেবী পার্বতীর দুর্গার রূপের ৯টি রূপকে বোঝানো হয়। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, এগুলো দেবী পার্বতীর ৯টি ভিন্ন রূপ।
দেবী দুর্গার এই ৯টি রূপ হলো যথাক্রমে শৈলপুত্রী, ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘণ্টা, কুষ্মাণ্ডা, স্কন্দমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রি, মহাগৌরী ও সিদ্ধিদাত্রী। প্রতি শরৎকালে নবরাত্রির ৯ দিনে প্রতিদিন দেবী পার্বতীর দুর্গা রূপের এই ৯ রূপের এক একজনকে পূজা করা হয়। এই ৯টি রূপের সগুন দেবী পার্বতীর দুর্গার রূপ। যে রূপে দেবী পার্বতী বধ করেন দুর্গম অসুরকে।
পূজার তৃতীয় দিন বুধবার মঙ্গলচন্ডি মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, সারাদেশের হাজার হাজার পূজামণ্ডপের কারিগররা যেখানে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত, সেখানে এই জায়গায় এখন ঢাকের তালে মোহিত হচ্ছে পূজামণ্ডপ। বিভিন্ন জায়গা থেকে ভক্তরা আগাম দুর্গাপূজা দেখতে এসেছেন। নিজের ও দেশের মঙ্গল কামনায় দেবীর চরণে অঞ্জলি দিচ্ছেন ভক্তরা।
পূজা দেখতে আসা রিপা রানী পাল বলেন, সাধারণত দুর্গাপূজা ষষ্ঠী তিথিতে শুরু হয়ে দশমীতে শেষ হয়। কিন্তু এই পূজা একটু ব্যতিক্রম আয়োজন। এখানে কয়েকদিন আগেই পূজা শুরু হয় এবং ৯ দিনব্যাপী পূজা হয়। একটু আগেভাগেই পূজা শুরু হওয়ায় আমরা দেখতে এসেছি। সারাদেশে এখনও পূজা শুরু হয়নি। কিন্তু এখানে দুর্গাপূজা শুরু হয়ে গেছে। আমরা পরিবারের লোকজন পূজা দেখতে চলে এসেছি। মায়ের কাছে প্রার্থনা করেছি আমরা যেন সবাইকে নিয়ে ভালো থাকি।
পরিবারের সাথে আসা শিশু বহ্নিশিখা দত্ত বলেন, মায়ের সাথে পূজা দেখতে এসেছি। এখানে প্রথমবার এলাম পূজা দেখতে। এখানে মা দুর্গার অনেকগুলো প্রতিমা রয়েছে। এরকম পূজা আগে দেখিনি। অনেক ভালো লাগছে।
মঙ্গলচন্ডি সেবাশ্রমের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক স্বাধীন চাষা বলেন, আমরা এখানে দুর্গাপূজা শুরু করার পর থেকে প্রতিবছরই অনেক লোকসমাগম হয়। শুধু শ্রীমঙ্গলই নয়, সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে মানুষ আসেন। কিন্তু এখানে আসার রাস্তাঘাট খারাপ থাকায় মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। যদি রাস্তাঘাট উন্নত হতো তাহলে সবার জন্য ভালো হতো।
শ্রীশ্রী মঙ্গলচন্ডি সেবাশ্রম নবরুপে নবদূর্গা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ঝিনুক বৈদ্য বলেন, শ্রীশ্রী মঙ্গলচন্ডি মন্দিরটি এ অঞ্চলের অনেক প্রাচীন মন্দির। এই জায়গাটিতে গত ১১ বছর ধরে আমরা নবদুর্গাপূজা করে আসছি। এ বছর আমাদের ১১তম আয়োজন। এই নবদুর্গাপূজা দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন আসেন। আগামী ৫ অক্টোবর সারাদেশের পূজার সাথে মিল রেখে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজার সমাপ্তি হবে। বাংলাদেশে এটিই একমাত্র আগাম দুর্গাপূজা হিসেবে গত ১১ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।