অনিয়মের ঘেরাটোপে জগন্নাথপুরের বীর নিবাসের নির্মাণকাজ

কাজ শেষ না হলেও এই ঘরেই বাস করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বনমালী দাস। ছবি: সিলেট ভয়েস।

প্রকল্পের মেয়াদ শেষ, অথচ শুরু হয়নি কিছু বীর নিবাসের নির্মাণ কাজ। কিছু ভবনের কাজ শুরু হলেও অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে দীর্ঘদিন। কাজ শেষ হওয়া ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ছে আঙুলের ঘষায়।

অনিয়মের ঘেরাটোপে এমনই বেহাল দশা মুজিববর্ষ উপলক্ষে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য উপহারের বীর নিবাস। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন বীর নিবাস বরাদ্দ পাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।

বাধ্য হয়ে অসমাপ্ত একটি বীর নিবাসে বসবাসের সময় কালবৈশাখী ঝড়ে দেয়ালের ইট খসে পড়ে আহত হয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বনমালী দাস।

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাকা বসতঘর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বীর নিবাস নামের এসব পাকা ঘর নির্মাণের ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা।‘

প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে জগন্নাথপুর প্রথম ধাপে ১২জন মুক্তিযোদ্ধার জন্য বীর নিবাস বরাদ্দ দেয়া হয়। দ্বিতীয় ধাপে আরো ৮টি ঘরের বরাদ্দ আসলেও এখনো দরপত্র আহবান হয়নি।

একই প্রকল্পের আওতায় ২০২১-২০২২ অর্থবছরে নতুন করে আরও ১০টি বীর নিবাসের বরাদ্দ আসে, যার নির্মাণ কাজ শুরু করা হয় ২০২২ সালের মে-জুন মাসে।

ভবনগুলোর নির্মাণ কাজ ৩ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও ১৮টি বীর নিবাসের নির্মাণ কাজ এখনো শেষ করা হয়নি। এছাড়া কয়েকটি ঘরের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।

জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের হরিণাকান্দি গ্রামের যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা বনমালী দাস দ্বিতীয় প্রকল্পের আওতায় একটি বীর নিবাসের বরাদ্দ পেয়েছেন।

তার ঘর নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পেয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স এম আর কনস্ট্রাকশন। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও বনমালী দাসের বীর নিবাসের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। বাধ্য হয়েই অসম্পূর্ণ ঘরে বসবাস করছেন তিনি।

একই গ্রামের আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা রবীন্দ্র দাসের বীর নিবাসের নির্মাণ কাজেরও একই অবস্থায়।

তিনি বলেন, ‘ঠিকাদার ভালো মানের ইট লাগায়নি। ২ বছর ধরে তারা কাজেও আসেনি। আমি অসুস্থ মানুষ যেকোনো সময় মারা যেতে পারি। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরটিতে এক রাত পারবো কি না জানি না।‘

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী আবু লেইছ বলেন, ‘আমাদের কাজে কোন ত্রুটি নেই, গাছের ডাল পরে ইট খুলেছে গিয়েছে। তাদের বলেছি গাছ কাটার জন্য। আর বাদবাকি কাজ কয়েক দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। আমি ১২ টি বীর নিবাস তৈরির দায়িত্ব পেয়ে ৭টির কাজ শেষ করেছি। বাকি ৫ টি ঘরের কাজ চলমান আছে, ঈদের পরই কাজ শেষ হবে।‘

জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, ‘বিষয়টি দুঃখজনক। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে লিখিত নির্দেশনা দিয়েছি এক মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার এবং আহত বীর মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসা করানোর। ঠিকাদারকে বিল পেতে হলে সব কাজ শেষ করতে হবে, তাছাড়া কাজের মেয়াদও শেষ।“

বীর নির্বাস নির্মাণে অনিয়ম দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়ে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল বশিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি। বীর মুক্তিযোদ্ধা আহত হওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক, আমি দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।‘

তিনি জানান, ভূমি জটিলতার কারণে কিছু কিছু ঘরের নির্মাণ কাজ এখনো শুরু করা যায়নি। সমস্যা সমাধান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু করা হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘ঘরের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ হাতে পাইনি। সংস্কার কাজে ত্রুটি থাকলে তা সমাধান করা হবে। পাশাপাশি যারা এই নির্মাণ কাজে জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।‘